এক ভাইরাসের কারণে গোটা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ থেকে শীর্ষ ধনীরাও এর হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। কিন্তু তারপরও অনেক কোম্পানি প্রায় অক্ষতভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ধাক্কা তো গায়ে লাগছেই, তবে তাদের বেলায় সেটা নগণ্য। বিনিয়োগ গুরুখ্যাত ওয়ারেন বাফেটের বার্কশায়ার হাথাওয়ে ইনকরপোরেশন সে রকম একটি কোম্পানি।
বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বার্কশায়ার হাথাওয়ের মুনাফা বেড়েছে ৮৭ শতাংশ। অর্থাৎ খুব পরিষ্কারভাবেই বোঝা যাচ্ছে, তারা এই ঝড় বেশ ভালোভাবেই মোকাবিলা করছে।
এই পরিস্থিতিতে কীভাবে ব্যবসা টিকিয়ে রেখে ভালো করা যায়, সে ব্যাপারেও বাফেট কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো একনজরে দেখে নেওয়া যাক:
১. নিম্ন সুদহারের পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার: বাফেট মূলত সুযোগের সদ্ব্যবহার করে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনী হয়েছেন। মহামারি মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার কমাতে নানা ব্যবস্থা নিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে বাফেট মনে করেন, এটাই ঋণ করার সুবর্ণ সুযোগ। বছরের শুরুর দিকে শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে বার্ষিক ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে বাফেট বলেন, ঋণ করার সুবর্ণ সময় এখন, তার মানে হলো, টাকা ধার দেওয়ার জন্য এটা ভালো সময় নয়। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছেন, যারা এখন বাড়ি কিনতে চায়, তাদের জন্য তো সুসময় জামানতের চাহিদা এখন সর্বকালের সবচেয়ে কম।
২. সব সময় খারাপ সময়ের জন্য প্রস্তুত থাকুন: বাফেটকে তো আর সাধেই ওরাকল বা ভবিষ্যদ্রষ্টা বলা হয় না। মার্চ মাসেই শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সব সময় বোধ করেছি, মহামারি কখনো না কখনো আসবেই।’
২০১৯ সালে তিনি বলেছিলেন, বড় এক বিপর্যয় আসতে যাচ্ছে। ব্যাপারটা ঘটবে অনেকটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো, সাইক্লোন ক্যাটরিনা বা মাইকেল তার সামনে কিছুই না। যেকোনো কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকতে মানুষের জীবনবিমা করা উচিত বলে পরামর্শ দেন বাফেট। এই ধরনের প্রাণঘাতী ও ছোঁয়াচে ভাইরাসের যুগে ঘরের অন্নদাতার জীবনবিমা করা খুবই দরকার।
৩. ক্রেডিট কার্ডের ব্যালান্স বয়ে বেড়াবেন না: ভাইরাসের জেরে অনেক কর্মী সাময়িকভাবে কাজ হারিয়েছেন। পরিণামে তাঁরা ক্রেডিট কার্ডেও ঋণে নির্ভর হয়ে পড়েছেন। বাফেটের মতে, জীবিকা নির্বাহের জন্য ক্রেডিট কার্ডের দ্বারস্থ হওয়া এক জিনিস, আর ক্রেডিট কার্ডকে সর্বরোগের মহৌষধ বিবেচনা করা এক জিনিস নয়। সে জন্য প্রথমেই তাঁর পরামর্শ, এই ঋণ শোধ করে দিন, ১৮ শতাংশ সুদে সারা জীবন ঋণ বয়ে বেড়িয়ে কেউ ভালো থাকতে পারে না।
৪. স্টকের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন: সব খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কিন্তু একটি ব্যাপারে বাফেট খুবই সচেতন, সেই খাতে কোনো ধাক্কা এলে বাফেট তা সামলাতে পারবেন না, সেটা হলো শেয়ার ব্যবসা। ব্যাপারটা এ রকম: করোনার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিমান পরিবহন। মানুষ যাতায়াত করতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এয়ারলাইনসের শেয়ারের দাম পড়ে যাচ্ছে। সেটা আগেভাগে বুঝতে পেরে তিনি এয়ারলাইনসের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। মোদ্দা কথা হলো, বিনিয়োগকারীদের বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। স্টক ট্রেডিং অ্যাপ বাজারে চলে এসেছে। এই অ্যাপ মানুষকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে, সে জন্য কোনো কমিশন বা ফি দিতে হয় না।
৫. দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় লেগে থাকা: বাফেট অবশ্য আত্মবিশ্বাসী, মার্কিন অর্থনীতি এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে। এক অনলাইন বৈঠকে তিনি বলেছেন, ‘কোনো কিছুই বাস্তবে মার্কিন অর্থনীতিকে আটকাতে পারবে না। কার্যত আমরা আগে এই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হইনি। তবে এর চেয়ে কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। আমেরিকান জাদু বা আমেরিকান অলৌকিকতা সব সময়ই ছিল, থাকবে।’
তবে কী ঘটতে যাচ্ছে তা কেউই জানে না। সে জন্য সবাইকে দীর্ঘমেয়াদি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। স্টকের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। ধরে রাখলে আখেরে ভালো মুনাফা পাওয়া যেতে পারে। সে জন্য যথাযথ আর্থিক পরিকল্পনা থাকতে হবে বলে মত দেন বাফেট।
সূত্র: প্রথম আলো
মানি ওয়াইজডটকম থেকে নেওয়া।
তারিখ: নভেম্বর ০২, ২০২০
রেটিং করুনঃ ,