আমাদের খুব কাছে যারা থাকেন, প্রতি দিনে খবর রাখেন তাদের কাছে মনের খবর এড়ানো যায় না, যদি হঠাৎ কোন অসংগতি আসে তবে কাছের মানুষরই কাছে ধরা পড়ে। আমরা বেশি ভাগ সময়ই কুশল বিনিময়ের সময় বলি – বেশ আছি বা ভালো আছি হয়তো এই ভালো থাকার বিপরিতে অনেক সময় আমারা ভালো থাকি না, বড় অসহায় হয়ে থাকি তবুও সেগুলিকে আড়ালে রেখে চলি। আমাদের মন, অনুভবগুলি একই সমন্ত্রাল রেখায় বা কতকগুলি জ্যামিতির সূত্র ধরে চলে না।
আমাদের মন হঠাৎ বেশ প্রফুল্ল থেকে কিছু সময়ের জন্য স্থির হয়ে যাই, চলমান একটি নদীতে পানি শুকিয়ে গিয়ে যেন একটি নৌকা হয়ে স্থির হয়ে আছে আর স্থির হয়ে থাকা সময়টা বড় দীর্ঘ মনে হয় দুঃখের মনে হয়, আবারও মনে নদীতে পানি থৈ থৈ করে ছুটে চলবে আবারও মনের নৌকা যেন শ্রাবনের কোন নদীতে। মনের এ ধরণের আচরণ কেন তা কখনো বুঝা হয় না।
যখন একটা দুঃখবোধ. কষ্ট বোধ বা হতাশা আমাদেরকে ঘিরে বসে আমাদের মন থেকে সৌন্দর্য বোধ, আমাদের সাহস হারাতে থাকে, মনের পরিকল্পনাগুলি ঝড়া পাতার মত আকার ধারণ করে। আমাদের যা পাওয়ার কথা ছিল তা পাওয়া না হলে হতাশা আমাদের ঘিরে ধরে, বন্দি করে ফেলে। যা আশা করি নি যা অপ্রত্যাশিত তা যখন একটা দমকা বাতাসের মত আমাদের মাঝে ঠাঁই নেয় তখন সেটা দুঃখ হয়ে একটা বড় সময় ধরে আমাদের সাথে অবস্থান নেয়।
দুঃখ, কষ্ট, হতাশা এগুলি একটি সময় আমাদের মাঝে এসে কিছু সময় বা দীর্ঘ সময় থেকে আবার চলে যায়, আনান্দ, সুখ সাফল্য এসে জায়গা দখল করে বেশি করে বা কারও জীবনে সল্প হয়ে।
মনের পরিকল্পনাগুলি ঝড়া পাতার মত আকার ধারণ করে আছে বলেই দুঃখ, কষ্ট, হতাশা আজ আমাকে ঘিরে রেখেছে তা না হলে আজ তো এমন লেখা লেখার কথা না, মনের অবস্থা যেমন হোক এক সময় একদিন আনান্দ, সুখ সাফল্য আসার কথা। তবুও দুঃখে দাহ থেকে, কষ্টের বেড়ী থেকে, হতাশার জাল থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য কে না উৎগ্রিব হয়ে না থাকে !!
স্বর্নের স্তর দিয়ে একটি ঘর বাঁধানো হলে যেখানেও তো দুঃখ হানা দিবে, কষ্টও হানা দিতে পারে; জ্ঞান দিয়ে, উদারতা দিয়ে কোন কি দেয়াল তৈরি করে দেওয়া যায় না !! মনের দুঃখ, কষ্টগুলি দেয়ালের বাহিরে রেখে যা পেতে চাই তা কি পাওয়া যায় না !!!
অনেক জ্ঞানার্জন করে, আমাদেরকে আলোর পথ দেখিয়ে, যা ছিল তা বিলিয়ে দিয়ে মহা-মানব গন কতটুকুই বা সুখি ছিলেন !! আনান্দে ছিলেন !! রবি ঠুকুর কি সুখি ছিলেন ! কাজী নজরুল বা একালের বিল গেট, আর হাজী মোহাম্মাদ মহসিনেই বা কতটুকু সুখি হয়েছিলেন !!
বিশ্ব মানবদের কথা থাক, বড় জোড় আমার পরিবারে, বন্ধু মহলে বা ব্লগ জগতে শতেক মানুষ আমাকে জানে বা চিনে, দুঃখের এক সাগরে যদি ভেসে চলি বা কয়েক জন তবে কি বা হবে তাতে এ সমাজের !! কি বা জ্ঞানের কথা কি বা মহৎ কাজ করেছি এ পর্যন্ত !!, নিজের যা ছিল তা থেকে কত খানি বা বিলিয়ে দিতে পেরেছি !! অন্তত কবি হাফিজ শিরাজির মত সমরখন্দ আর বুখারা বিলায়ে দেওয়ার মত দুই এক কলম কবিতার লাইনও তো লিখতে পারি নি!!
ইরানের জগৎ বিখ্যাৎ কবি হাফিজ শিরাজি, সমরখন্দ আর বুখারা বিলায়ে দিতে চেয়ে তিনি লিখেছিলেন
” ইগার আন টুরকি শিরাজী
বেদেস্ত্ আরাদ দিলি মারা
বি খালি হিন্দুস বাকশিম্
সমরখন্দ য়ু বুখারা।”
ইংলিশ কবি ইংলিশে অনুবাদ করেছেন –
If that Shirazi Turk will take my heart into his hand
I’ll give up,
for his Indian beauty spot, all Samarkand and Bukhara.
বাংলায় অনেকে অনুবাদ করে লিখেছেন প্রিয়ার গালে একটি তিলকের জন্য কবি হাফিজ, সমরখন্দ আর বুখারা বিলায়ে দিতে চেয়েছিলেন। আর বেরসিক সম্রাট তৈমুর রেগে গিয়ে বলেছিলেন ” হাফিজ, তোমার এত্ত বড় সাহস যে আমার জয় করা সমরখন্দ আর বুখারা শহর তুমি তোমার প্রিয়ার একটি তিলের জন্য বিলিয়ে দিতে চাও !!! ”
কবি হাফিজের কবিতায় যে বর্ণনা – প্রিয়ার গালে একটি তিলকের জন্য রাজ্য বিলিয়ে দেওয়ার মন, কবিতার অর্থে যে প্রকাশ তা অনেকেরই জানা, বিশ্বকে ছাড়িয়েছে সে জানা। তবে আমাদের জানা হয় নি কবি হাফিজের মনের গতি, কবিতার ভাবের গতি, যেমন বুঝা হয় নি নিজের মনের গতি।
মনের মাঝে ঘন ঘন পরিবর্তন আসে, বৈচিত্র আসে, অনুভুতি আসে, দুঃখ বোধ আসে তবুও কোথাও যেয়ে দুঃখ বোধের অবসান চাই, সুখের আনান্দের ছোঁয়া চাই, দুঃখ বা সুখ কখনই দাড়ি-পাল্লায় মাপার বিষয় নয় তবুও দুঃখের পাল্লাকে ভারি মনে হয়, বড় কাছের মনে হয়, পাল্লায় যে সুখ তা বড় হালকা মনে হয়। আজ মনে এক দুঃখ বোধ বাসা বেঁধে বসে আছে, ঠিক কবে বিদায় নিবে তা জানা নেই যেমন নিজের অনেক কিছুই জানা থাকে না, জানা থাকে না মনের গতি-বিধি, নদীতে মাছের গতি-বিধি, আকাশে মেঘের বা বনে সাপের গতি-বিধি। তাই বুঝা হল না কোন কারণে মনে বেঁধেছে দুঃখের একটি বাসা, একটি দুঃখের বাড়ি।
তারিখ: ফেব্রুযারী ১৬, ২০১৩
রেটিং করুনঃ ,