আইএলওর গ্লোবাল ওয়েজ রিপোর্ট-২০২০-২১-এ বলা হয়েছে, ২০১০-১৯ সালে বাংলাদেশে শ্রমিকের বার্ষিক উৎপাদনশীলতা বাড়লেও প্রকৃত ন্যূনতম মজুরি উল্টো কমেছে। এই সময়ে দেশে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা ৫ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও প্রকৃত ন্যূনতম মজুরি ৫ দশমিক ৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বলা হয়েছে, এই সময়ে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রকৃত ন্যূনতম মজুরি হ্রাসের হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায়।
দেশের মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৯০ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের কিছু অধিকার থাকলেও, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কিছু নেই বললেই চলে। যেমন, তৈরি পোশাক খাতের খাতের শ্রমিকদের জন্য বিজিএমইএর কিছু কর্মসূচি আছে। এ ছাড়া শ্রমিক কল্যাণ তহবিলও আছে, যদিও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিক সেই সুবিধা পান না। সরকারি শিল্প শ্রমিকদেরও নানা সুবিধা আছে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে এসব নেই বলে এ খাতের শ্রমিকদের জীবন অত্যন্ত অরক্ষিত। তার সঙ্গে মজুরিরও নেই ঠিক–ঠিকানা। এতে নিম্ন দক্ষতার শ্রমিকেরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন।
আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে মজুরি বৃদ্ধির হার আরও কমে গেছে। আশঙ্কা, নিকট ভবিষ্যতে মজুরি হ্রাসের চাপ আরও বাড়বে। আর সবচেয়ে চাপের মুখে পড়বেন নারী ও নিম্ন মজুরির শ্রমিকেরা, যাঁদের বসবাস শহরের বস্তিতে।শহরের বস্তিতে যে শ্রমজীবীরা বসবাস করেন, তাঁদের অনেকের আয় প্রাক–কোভিড সময়ের তুলনায় কমলেও ব্যয় বেড়েছে। পিপিআরসি ও বিআইজিডির সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, খাবারের ব্যয় ছাড়া বস্তিবাসীর দৈনন্দিন ব্যয় গত বছরের জুনের তুলনায় এ বছরের মার্চে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ভাড়া বাড়িতে থাকা অধিকাংশ শহুরে দরিদ্রদের জন্য এটি নির্মম বাস্তবতা। সবার সঞ্চয় কমে গেছে আশ্চর্যজনকভাবে। অরক্ষিত ও দরিদ্র নয়, এমন শ্রেণির মানুষের সঞ্চয় কোভিড-পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় নিচে নেমে গেছে। একই সঙ্গে সব শ্রেণিতেই ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণা সংস্থা সানেমের গবেষণা পরিচালক সায়েমা হক বলেন, ‘আমাদের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, নির্মাণ খাত, পরিবহন, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা, হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ছাড়া যাঁরা স্বনিয়োজিত কাজে যুক্ত ছিলেন তাঁদের আয়ও কমেছে। তাই এসব খাতকে সরকারি সহায়তার আওতায় আনতে হবে। এর জন্য বাজেটে এসব খাতে কর ছাড় দেওয়া যেতে পারে এবং প্রয়োজনে ভ্যাটের আওতা থেকে মুক্ত করা যেতে পারে। স্বনিয়োজিত কাজে যাঁরা আছেন, তাঁদের ব্যাংকিং খাতের বিকল্প হিসেবে এনজিও বা ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার মাধ্যমে নামমাত্র সুদে ও শিথিল শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।’
রমিক আন্দোলন ও আইন
দেশের শ্রমিক আন্দোলনের বড় একটি অংশ সংগঠিত বা প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অধিকারের কথা বলে ও আন্দোলন করে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের প্রায় ৯০ ভাগ শ্রমশক্তি
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। ট্রেড ইউনিয়ন না থাকার কারণে এসব খাতের শ্রমিকদের অধিকার নেই কেউ দাবিদাওয়াও তুলে ধরে না।বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান আইন বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬। সেখানে শ্রমিকের মানসম্মত মজুরি নির্ধারণ, কর্মঘণ্টা, ছুটি, বিশ্রাম, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা এবং কল্যাণ কার্যক্রমের মতো বিষয় থাকলেও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের এ আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সংজ্ঞায়িত করার জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যাও আইনে দেওয়া হয়নি। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও এই খাতের শ্রমিকেরা অসহায় জীবন যাপন করছেন।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: মে ০১, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,