মালানি শহর থেকে একটি জিপে করে রওনা দিয়ে সোলাং ভ্যালিতে কিছু সময় কাটিয়ে রোটাং পাসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু রোটাং পাস যেতে কেলং লে হাইওয়ের ওপর লাহুল আর স্পিতি পাস বা পাহাড় ঘেষা গিরি পথ। পাহাড়ের কোলে ফিতার মত রাস্তা জুড়ে ছোট ও বেশ কিছুটা বড় অনেক জলপ্রপাত চোখে পড়ে, পাহাড় মানেই এক ভিন্ন ধরণের বৈচিত্র অদেখা এক সৌন্দর্যবোধ। কোলাহল মুক্ত সেই এলাকার ঝর্না কলতান, পাইন বনে হিমেল পাতাসের মৃদু সুর, গাছ থেকে গাছে উড়ে যাওয়া পাখির সমারোহ। মেঘ পাহাড় পাইন বনের বহুমাত্রিক ছবি আর দূরের পাহাড়ে তুষারের আবরণ এসব দেখে মন অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠে।
পাহাড়ের পাশ দিয়ে পর্যটকদের গাড়ি বহর।
রোটাং পাসে প্রচন্ড ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে যাত্রা পথে দাশার লেক ঘেঁষে রয়েছে অনেক ছোট ছোট দোকান। ওভারকোট, জুতো, দস্তানা ভাড়া পাওয়া যায় যা রোটাং পাস ভ্রমণে খুবই জরুরী, ছবিটিতে তেমনই একটি দোকানের ছবি যেখান থেকে আমারাও ভাড়া নিয়েছিলাম শীতের পোষাক সামগ্রী আর ফেরার পথে জিপের ড্রাইভাররাই দোকানে ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করে।
পাহাড়ের ধার ঘেষে ঘেষে ফিতার মত রাস্তা আর এ সব পথ পাড়ি দিতে মনে হয়েছে সত্যই এক দুঃসাহসিক যাত্রা।
জিপ যখন দ্রুত বাঁক নিচ্ছিল বার বার মনে হয়েছে আর হয়তো দেশে ফিরা হবে না, মনে সাহস ছিল প্রিয় সন্তান, সহ-ধর্মনী সাথেই আছে, এক সাথেই নিচিহ্ন হয়ে যাব।
একটি জিপের সাথে সামান্য টোকা লাগলে আর কোন বিকল্প থাকার কথা ছিল না নিশ্চিত মৃত্য। পাহাড়ের ঝর্ণার পানিতে পাথরের চিকন চিকন রাস্তাগুলি বিপদ জনকও ছিল, আর মেরামতের কাজও চলছিল সারা রাস্তা জুড়ে। ঝর্ণার পানিতে ধ্বস নামায় রাস্তা কোথাও কোথাও ভাঙা। সেই পথটুকু পার হতে যে কি ভয়্ একটু এদিক ওদিক হলেই গাড়ি পড়বে পাশের অতল খাদে, খুঁজে পাওয়ার আর কোন ঠিকানা নেই তবু এগিয়ে যেতেই ইচ্ছা হয় বড়, আর এমন সুন্দর যাত্রা। ভয়ঙ্কর অথচ আকর্ষণীয় রকমের সুন্দর।
একই দেশের একদিকে মরু-ভূমি আর অন্য দিকে সারা বছর বরফে ঢাকা ভারতে, ভারত ভ্রমনের অংশ হিসাবে ২৯ শে আক্টবর হিমাচল প্রদেশের পর্যটন শহর মানালি থেকে ৫১ কিলোমিটার পথ আর সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৩,০৫০ ফিট উচ্চতায় পাহাড়ের ধার ঘেষে ফিতার মত ও হঠাৎ বাঁক নেওয়া দুঃসাহসিক কঠিন ঝুঁকিপূর্ণ পথ অতিক্রম করতে একটি জীপে আমাদের সময় লাগে একটানা সাড়ে তিন ঘন্টা, জীপের গতি ছিল প্রায় ১৫ কিলোমিটার তবুও অভিজ্ঞ ড্রাইভারকে বার বার অনুরোধ করেছি আরো ধিরে জিপ চালানোর জন্য। একটি ছোট্ট দূর্ঘটনায় মৃত্যু সুনিশ্চিত যেখানে তবুও দেখেছি পর্যটকদের গাড়ি বহর ছুটেছে অবিরাম ভাবে। (এই ছবিটি ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ব্যাপক এলাকা যাতে এক নজরে দেখা যায়)
রোটাং পাসে যাওয়ার আগে যাত্রা বিরতি প্রায় ১১,৫০০ ফিট উচ্চতায়, হালকা খাবার, ফ্রেস হওয়ার স্থান। এখার থেকে আরও প্রায় পাহাড়ের ধার ঘেষা চিকন গিরি পথে ধরে ১৫৫০ ফিট উচ্চতায় উফার পরেই রোটাং পাসে কিছুটা সমতল ভূমি যেখানে মিলে পাথর আর বরফ বা তুষারের মেলা।
ভ্রমণের তারিখ: ২৯ শে আক্টবর, ২০১২
রেটিং করুনঃ ,