লোকসভা ভোটের আগে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির বিরোধী জোট গড়ে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে বিহারের রাজধানী পাটনায় শেষ হলো বিজেপি বিরোধীদের সম্মেলন। এতে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রস, আম আদমিসহ দেশের ১৮টি দলের নেতা-নেত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। বিজেপি–বিরোধী লড়াইয়ে সমমনা দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মূল লক্ষ্য, বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেশকে বাঁচানো। তবে বিরোধীদের এ তৎপরতাকে ‘ফটোসেশন’ আখ্যা দিয়েছেন বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
আজ শুক্রবার সম্মেলনের মূল আয়োজক বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আগামী মাসে কংগ্রেসশাসিত হিমাচল প্রদেশের রাজধানী শিমলায় বিরোধী নেতারা আবার মিলিত হবেন। সেখানে রাজ্যভিত্তিক বিরোধীদের আসন সমঝোতা, ন্যূনতম কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।
সম্মেলন শেষে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে জানিয়েছেন, আগামী ১০–১২ জুলাই শিমলায় পরবর্তী বৈঠক বসবে–এটা মোটামুটিভাবে ঠিক হয়েছে। সেখানেই বিজেপি–বিরোধী লড়াইয়ের ছক তৈরি হবে। প্রতিটি রাজ্যের জন্য আলাদা আলাদা কৌশল ঠিক হবে। মূল লক্ষ্য বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেশকে বাঁচানো।
কংগ্রেস সভাপতি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলটির নেতা রাহুল গান্ধী ও বেনুগোপাল। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার রাতেই পাটনায় পৌঁছান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ভাতিজা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও সংসদ সদস্য ডেরেক ও ব্রায়ান।
অসুস্থতা সত্ত্বেও বৈঠকে ছিলেন প্রবীণ আরজেডি নেতা লালু প্রসাদ। ছিলেন এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার ও তাঁর মেয়ে সংসদ সদস্য সুপ্রিয়া সুলে, শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে, তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন, ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব। জম্মু–কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ, সিপিআইয়ের ডি রাজা ও সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরিও উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী ও আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব। তাঁর অসুস্থ বাবা লালু প্রসাদ নেপথ্যে জোট গঠনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সিপিআই (এমএল) নেতা দীপংকর ভট্টাচার্যও এই জোটের অংশীদার। আরও উপস্থিত ছিলেন আম আদমি পার্টির নেতা ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
বৈঠকের আগাগোড়া একতার যে সুর ছিল, কেজরিওয়ালের জন্য তা কিছুটা কেটে যায়। বিভিন্ন সূত্রের খবর, বিরোধী ঐক্য স্থাপনের আগে কেজরিওয়াল চেয়েছিলেন, দিল্লির আমলাতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের আনা অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতায় কংগ্রেস স্পষ্ট ভূমিকা নিক, যাতে সংসদে বিলটি পাস হতে না পারে।
বিষয়টি বৈঠকে তুললে কেজরিওয়ালকে খাড়গে বলেন, সংসদীয় কৌশল সব সময় সংসদীয় দলের বৈঠকেই স্থির হয়। সেখানেই ঠিক হবে দলের ভূমিকা। কংগ্রেসের মনোভাব স্পষ্ট না হওয়ায় কেজরিওয়াল বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে হাজির হননি। আসেননি স্ট্যালিনও।
চার ঘণ্টা বৈঠকের পর নীতীশ কুমার অবশ্য জানান, বিমান ধরার তাড়া ছিল বলে তাঁরা চলে যান। ওই দুজন ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সবাই। প্রত্যেকেই বিজেপিকে হারানোর জন্য জোটবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। নীতীশ বলেন, বিজেপি দেশের স্বার্থে কাজ করছে না। দেশ টুকরা টুকরা করার পথ প্রশস্ত করছে।
কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে বলেন, ‘আমরা সবাই এক হয়ে লড়ব এবং জিতব। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। ২০২৪ সালের সরকার আমরাই গড়ব।’
রাহুল গান্ধী বলেন, এটা এক নতুন উদ্যোগ। এই উদ্যোগ আরও গভীরে যাবে। জয়ী হতেই হবে কারণ, বিজেপি দেশের মূল কাঠামো ভেঙে দিতে চাইছে।
মমতা বলেন, ‘আমরা বিরোধী নই। আমরাই দেশপ্রেমী। বিজেপি প্রতি রাজ্যে রাজভবনকে ক্ষমতা ও শক্তির বিকল্প কেন্দ্র করে তুলছে। ইডি, সিবিআইকে হাতিয়ার করেছে। দেশকে এই ফাঁস থেকে মুক্ত করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে শারদ পাওয়ার, মেহবুবা মুফতি, ওমর আবদুল্লাহ, উদ্ধব ঠাকরে, ডি রাজা, ইয়েচুরিসহ প্রত্যেকেই জোটের সমর্থনে নিজেদের দলের জোরালো অবস্থান ব্যক্ত করেন। প্রত্যেকের আশা, জোটবদ্ধ হলে যুদ্ধ জয় সম্ভবপর।
বৈঠকে ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক, অন্ধ্র প্রদেশের জগনমোহন রেড্ডি ও তেলেঙ্গানার চন্দ্রশেখর রাওকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ডাকা হয়নি বহুজন নেত্রী মায়াবতীকেও। জোটবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা যাঁরা করছেন, তাঁরা মনে করেন, এই নেতারা আগের মতো আগামী দিনেও বিজেপির সঙ্গ দেবেন।
জেডিইউ মুখপাত্র কে সি ত্যাগী জানিয়েছেন, বিজেপির বিরুদ্ধে যাঁরা দৃঢ়ভাবে রয়েছেন, তাঁদেরকেই এই জোট গঠনের উদ্যোগে ডাকা হয়েছে।
এদিকে পাটনা সম্মেলনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রয়েছে বিজেপিরও। শুক্রবার জম্মু–কাশ্মীরে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, মোদিকে হারানোর স্বপ্ন বিরোধীদের দেখে যেতে হবে। পাটনায় বিরোধীদের ফটোসেশন চলছে। বিরোধী ঐক্য আকাশকুসুম কল্পনা। পরেরবারও বিজেপির ৩০০ আসন কেউ ঠেকাতে পারবে না।
বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও আরজেডি নেতা লালু প্রসাদকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, যে রাহুল গান্ধীকে আজ তাঁরা সাদরে বরণ করছেন, তাঁর দাদিই তাঁদের জেলে পুরেছিলেন।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ: জুন ২৪, ২০২৩
রেটিং করুনঃ ,