ভারতের কংগ্রেসকে আক্রমণ করে ১৪ আগস্ট ‘দেশভাগের ভয়াবহতা স্মরণ দিবস’ পালন করে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগের দিনটি স্মরণে বিজেপি ঘটনা বর্ণনা করে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। আর্কাইভের বিভিন্ন ফুটেজ ও দেশভাগের নাটকীয় দৃশ্য ব্যবহার করে উদ্দীপক সংগীত ও চটকদার সম্পাদনার সাত মিনিটের ভিডিওটিতে পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগের দাবির কাছে নত হওয়ার জন্য কংগ্রেস নেতা ও স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে দায়ী করা হয়েছে।
বিজেপির এই প্রচেষ্টার পাল্টা জবাব দিয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের সংসদ সদস্য জয়রাম রমেশ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এই দিবস পালনের সত্যিকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাঁর বর্তমান রাজনৈতিক সংকট ঢাকতে বেদনাদায়ক ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো ব্যবহার করা। তিনি আরও বলেন, আধুনিক দিনের সাভারকার (কট্টর দক্ষিণপন্থী রাজনীতিক ভিনায়ক দামোদর সাভারকার) ও জিন্নাহরা জাতিকে বিভক্ত করার জন্য তাঁদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর। দেশভাগের সময় ভারতীয়রা কত ত্যাগ ও কষ্টের মধ্য দিয়ে গেছে, তা স্মরণ করিয়ে দিতে গত বছরের ১৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘দেশভাগের ভয়াবহতা স্মরণ দিবস’ পালনের ঘোষণা দেন। রোববার সকালে দিনটি স্মরণে টুইট করেন মোদি। পরে বিজেপির পোস্ট করা ভিডিওতে ব্রিটিশ আইনজীবী ও ভারত–পাকিস্তানের সীমান্তরেখা আঁকা সিরিল জন রেডক্লিফকে দেখানো হয়। এতে বলা হয়, ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে যাঁর কোনো জ্ঞানই ছিল না, তাঁকে কীভাবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভারতকে দুভাগ করার দায়িত্ব দেওয়া হলো। ভিডিওজুড়ে দেশভাগের ভয়াবহতা বর্ণনার সময় নেহরুকে দেখানো হয়।
ভিডিওটির সঙ্গে বিজেপির পক্ষ থেকে টুইট করে বলা হয়, যাঁদের ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, সভ্যতা, মূল্যবোধ, তীর্থস্থান সম্পর্কে কোনো জ্ঞানই ছিল না; তাঁরা মাত্র তিন সপ্তাহে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একসঙ্গে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে সীমানা এঁকেছেন। এই বিভাজনকারী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার দায়িত্ব ছিল যাঁদের ওপর, তাঁরা তখন কোথায় ছিলেন?
বিজেপির টুইটের জবাবে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ আরও বলেন, দেশভাগের ট্র্যাজেডিকে ঘৃণা ও কুসংস্কারের জন্য অপব্যবহার করা যাবে না। তিনি দেশভাগের পেছনে বিজেপির ঘটনাগুলোর বিষয়টিকে সামনে আনেন। তিনি বলেন, সত্য হলো সাভারকর দ্বিজাতি তত্ত্ব উদ্ভাবন করেছিলেন এবং জিন্নাহ তা পরিপূর্ণ করেছিলেন। ভারতের প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী সর্দার প্যাটেল লিখেছেন, ‘আমার মনে হয়েছিল, আমরা যদি দেশভাগ মেনে না নিতাম, ভারত বহু খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যেত এবং সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যেত।’
রমেশ আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায়কেও স্মরণ করবেন, যিনি শরৎচন্দ্র বসুর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বঙ্গভঙ্গের পক্ষে ছিলেন এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম মন্ত্রিসভায় বসেছিলেন, যখন দেশভাগের করুণ পরিণতি স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।
কংগ্রেসের ওই সংসদ সদস্য আরও বলেন, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গান্ধী, নেহরু, প্যাটেল এবং আরও অনেকের উত্তরাধিকারকে সমুন্নত রাখবে, যাঁরা জাতিকে একত্র করার প্রচেষ্টায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন। ঘৃণার রাজনীতি পরাজিত হবে।
বিজেপির ভিডিওতে ভারতীয় কমিউনিস্টদেরও বিভাজনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। তাতে দাবি করা হয়েছে, কমিউনিস্ট নেতারা মুসলিম লীগকে সমর্থন করেছেন এবং একটি পৃথক মুসলিম দেশের দাবিকে ন্যায্যতা দিয়েছেন। তবে ভিডিওটির অধিকাংশই নেহরু ও জিন্নাহর দৃশ্যে ভরা।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ১৪, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,