বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার দাবি করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ভারতের সংসদে প্রশ্ন করেছেন এক সদস্য।
গণঅভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই ভারত অভিযোগ করে আসছে বাংলাদেশে হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুরা ব্যাপক অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। হিন্দুদের শত শত মন্দির, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো অতিরঞ্জিত খবরও প্রকাশ করেছে ভারতীয় মিডিয়াগুলো।
এসবের জবাবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশে এসে সরেজমিন প্রতিবেদন করার আহ্বানও জানিয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের প্রোপাগান্ডামূলক প্রচারণা বন্ধ হয়নি। এর মধ্যে বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস দেশদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার পর ভারত আবারও সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে।
এসবের মধ্যেই বৃহস্পতিবার দেশটির সংসদে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, লোকসভায় (সংসদে) বেশ কয়েকজন সাংসদ বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলেন। তারা জিজ্ঞেস করেন, বাংলাদেশে হিন্দু মন্দির ও প্রতীমা ভাঙচুরের ঘটনা বেড়েছে কি না। ভারত সরকার এ বিষয়টি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে উত্থাপন করেছে কি না।
এসব প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং সংসদকে বলেন, বাংলাদেশে গত কয়েক মাসে হিন্দু মন্দির ও প্রতীমা ভাঙচুরের ঘটনার তথ্য শোনা গেছে। ভারতীয় সরকার এ ব্যাপারে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে তাঁতিবাজারে পূজামণ্ডপে হামলা, সাতক্ষীরার কালী মন্দির থেকে দুর্গাপূজার সময় সোনার মুকুট চুরির ঘটনা। ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকাকে হিন্দুসহ সব সংখ্যালঘুর প্রার্থনাস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে। এ ছাড়া ভারত বাংলাদেশকে বলেছে সংখ্যালঘুসহ দেশটির সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের।
এদিকে সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার এবং এটির পরিবর্তী ঘটনাবলী নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে। তারা দুজন সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার কথিত অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যা বললেন মমতা ব্যানার্জী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেছেন, কোনও ধর্মের ওপরেই আঘাত আসুক আমি চাই না। এখানে ইসকনের যিনি আছেন, তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এটা যেহেতু অন্য একটি দেশের বিষয়, তাই কেন্দ্রীয় সরকারকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এই ইস্যুতে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের পাশেই আছি।
বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মমতা ব্যানার্জী বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন।
এর আগে তার দলের একজন সংসদ সদস্য, সৌগত রায় দিল্লির সংসদ ভবনে সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেছিলেন, খুবই দুঃখজনক ঘটনা, চিন্তার বিষয়। হিন্দুদের ওপরে এই অত্যাচার হওয়া উচিত নয়। আমি এধরণের ঘটনার আমি নিন্দা জানাই।
তবে তৃণমূল কংগ্রেসের দল- নেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে বাংলাদেশের হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করা ও তার পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে এই প্রথম মন্তব্য শোনা গেল।
আরও পড়ুন: আইনজীবীকে হত্যার পরও থেমে নেই ইসকনের ষড়যন্ত্র
গত দুদিন ধরেই বিজেপির নেতা-নেত্রীরা প্রশ্ন তুলছিলেন যে পার্শ্ববর্তী দেশে যখন, তাদের কথায়, হিন্দুদের ওপরে অত্যাচার চলছে, তখন পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল বা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কোনও প্রতিক্রিয়া নেই কেন!
এর আগে কংগ্রেস নেত্রী ও সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ওয়াধরাও বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যাণ্ডেলে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারি ও “সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপরে ক্রমাগত ঘটে চলা সহিংসতার সংবাদ অত্যন্ত চিন্তাজনক”, লিখেছেন মিসেস ওয়াধরা।
তিনি লিখেছেন, আমি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করব যাতে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হয় এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে জোরালো ভাবে তুলে ধরা হয়।
সূত্র: যুগান্তর
তারিখ: নভেম্বর ২৮, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,