লেখক: সানাউল্লাহ সাকিব, ঢাকা
ঋণের সুদ কমাতে গিয়ে অনেক ব্যাংক আমানতের সুদ ২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। ন্যূনতম এ সুদহারকে ব্যাংকগুলো বলছে ‘তহবিল খরচ’ কম। কিন্তু সুদহার ২ শতাংশে নেমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ আমানতকারীরা। তাই সাধারণ আমানতকারীদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে সুদহার বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বেসরকারি খাতের কমপক্ষে ১৭টি ব্যাংককে আমানতের সুদ বাড়িয়ে সাড়ে ৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। তাতে এসব ব্যাংকের ঋণের সুদহারও বেড়ে যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বেশ কয়েকটি ব্যাংক সাড়ে ৬ শতাংশ সুদেও ঋণ দিচ্ছে। যদিও ঋণের সুদের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ পর্যন্ত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকই গত বছরের এপ্রিলে এই সীমা বেঁধে দিয়েছিল। একই সময়ে দেশে করোনা সংক্রমণও শুরু হয়। ফলে ব্যাংকঋণের চাহিদা কমে যায়। করোনার কারণে বিদেশে ভ্রমণ ও মানুষের কেনাকাটাও কমে যায়। তবে প্রবাসী আয়ে রেকর্ড হয়। যার কারণে ব্যাংকে আমানত বাড়তে শুরু করে। আবার ঋণের চাহিদা না থাকায় বেসরকারি খাতের অনেক ব্যাংক আমানতের সুদহার ২-৩ শতাংশে নামিয়ে আনে। তবে এই সময়ে আমানতের সুদ কমায়নি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো। আর বেসরকারি খাতের কিছু দুর্বল ব্যাংক আমানত পেতে সুদহার বাড়িয়ে রেখেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে বেসরকারি খাতের ১৭টি ব্যাংকের তিন মাস মেয়াদি আমানতের সুদহার ছিল সাড়ে ৪ শতাংশ। ব্যাংকগুলো হলো আল-আরাফাহ্, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক, ঢাকা, ডাচ্-বাংলা, ইস্টার্ণ, ইসলামী, যমুনা, মার্কেন্টাইল, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, এনসিসি, ওয়ান, প্রাইম, শাহ্জালাল ইসলামী, সাউথইস্ট, দি সিটি ও ট্রাস্ট ব্যাংক। এসব ব্যাংককে এখন সুদহার বাড়াতে হবে। এতে বাড়তে পারে ঋণের সুদহারও। একইভাবে বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোতেও সুদ কম। তবে এসব ব্যাংক তাদের আমানতের বেশির ভাগ বিদেশ থেকে সংগ্রহ করে থাকে।
নতুন নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে যমুনা ব্যাংকের এমডি মির্জা ইলিয়াছ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আমানতের সুদ সাড়ে ৫ শতাংশ করা হলেও কল মানি ও বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা রাখলে সুদ মিলছে ১ শতাংশের কম। তাহলে ব্যাংক চলবে কীভাবে। সুদহার এখন বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে ভালো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিনির্ধারণী সুদহার ঠিক করবে। পাশাপাশি রিজার্ভ রেপো চালু করে দেবে। এতে আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতা উভয়ই ভালো থাকবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত রোববার মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে আমানতের সুদহার বেঁধে দিয়েছে। এ–সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংকের তিন মাস বা তার বেশি মেয়াদি আমানতের সুদহার তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম হতে পারবে না। গত তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) দেশে মূল্যস্ফীতির গড় ছিল ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। সর্বশেষ তিন মাসের এ গড়কে বিবেচনায় নিলে ১৭ ব্যাংককে আমানতের সুদ কমপক্ষে সাড়ে ৫ শতাংশ করতে হবে। তবে সব ধরনের আমানতে বেঁধে দেওয়া এ সুদহার কার্যকর হবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, ব্যক্তিপর্যায়ের মেয়াদি আমানত এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন ফান্ড বা তহবিল হিসেবে রাখা মেয়াদি আমানতে এই সুবিধা মিলবে। এর বাইরে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যেসব আমানত ব্যাংকে থাকে সেগুলোর বিপরীতে বাড়তি সুদ মিলবে না।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সুদহার বেঁধে দেওয়ার এই উদ্যোগ ভালো। তবে ঠিক কত টাকা পর্যন্ত আমানতে এই সুবিধা দেওয়া যাবে, তার একটা সীমা ঠিক করা গেলে ভালো হতো।
জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, যেভাবে ঋণ ও আমানতের সুদহার ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে, তাতে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী ও বিদেশি ব্যাংকের কাছে ভুল বার্তা যেতে পারে। এতে ব্যবসার খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। সুদহার বেঁধে দেওয়ার কারণে আমাদের ৫০ কোটি টাকা আয় কমে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোতে করোনার মধ্যে এক লাখ কোটি টাকার বেশি আমানত এসেছে। তবে ব্যাংকগুলোর সুদ খরচ আগের চেয়ে কমে গেছে। আবার করোনার মধ্যে ঋণ কম বিতরণ হলেও ব্যাংকগুলো মুনাফা করেছে আগের চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের প্রথম আলোকে বলেন, করোনার মধ্যেও ব্যাংকগুলো ভালো আমানত পেয়েছে। আগের চেয়ে আমানতের পেছনে ব্যাংকের খরচ কমে গেছে। এ কারণে সাধারণ আমানতকারীদের স্বার্থে আমানতের সুদ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। শুধু ব্যক্তিপর্যায়ে আমানতকারী এই সুবিধা পাবেন, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানতে এই সুদ কার্যকর হবে না।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: আগষ্ট ১০, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,