করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে স্থবিরতার কারণে ব্যাংকগুলোতে ঋণের তেমন চাহিদা নেই। কিন্তু টাকা নিয়ে বসে নেই ব্যাংকগুলো। আমানত, ফান্ড প্লেসমেন্টসহ বিভিন্ন নামে ও মেয়াদে অন্য ব্যাংক, বিমা, মার্চেন্ট ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও করপোরেট গ্রাহকের কাছে টাকা খাটাচ্ছে অনেক ব্যাংক। ব্যাংকগুলো স্বল্প মেয়াদের এ ব্যবসা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকিতে নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক আশঙ্কা করছে, ঋণের বাইরে স্বল্পমেয়াদি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকগুলো যে টাকা খাটাচ্ছে, তা শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন অনুৎপাদনশীল খাতে যাচ্ছে। এ জন্য ঋণ ও কল মানির বাইরে ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবহারের তথ্য দৈনিক ভিত্তিতে জমা দিতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর বাইরে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের নিজস্ব ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ, ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রাহককে শেয়ার কিনতে কত টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে—তা-ও দৈনিক ভিত্তিতে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দেয়।
সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজার বেশ চাঙা। বাজারের এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট তথ্য দৈনিক ভিত্তিতে জমার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে শেয়ারবাজারসংক্রান্ত তথ্য পাক্ষিক ভিত্তিতে নেওয়া হতো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে খতিয়ে দেখা হবে ঋণের বাইরে ব্যাংকের টাকা কোথায় গেল।
সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, মুদ্রাবাজারে ব্যাংকের দৈনিক লেনদেনের তথ্য ছক অনুযায়ী দৈনিক ভিত্তিতে বিকেল পাঁচটার মধ্যে দাখিল করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। চিঠির সঙ্গে এক ছকও যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে মুদ্রাবাজারে ব্যাংকের দৈনিক বিনিয়োগের পরিমাণ, দিন শেষে প্রকৃত বিনিয়োগ কত দাঁড়াল, তা উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক তার সহযোগী ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংককে কত ঋণ দিয়েছে, কত ঋণ বা বিনিয়োগ সমন্বয় করেছে ও দিন শেষে প্রকৃত ঋণ বা বিনিয়োগের মূল্য কত, তা-ও নির্ধারিত ছকে উল্লেখ করতে হবে।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলো তাদের রেগুলেটরি মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন, রিজার্ভ তহবিলে থাকা অবণ্টিত মুনাফা, প্রিমিয়াম আয় ও রিটার্ন আয়—এই চারটি উপাদান মিলে রেগুলেটরি মূলধন। তবে জুন শেষে শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর গড় বিনিয়োগ ছিল সাড়ে ১৪ শতাংশ। এর বাইরে প্রতিটি ব্যাংক তহবিল গঠন করে ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারে, যা ব্যাংকের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগসীমার বাইরে। বিশেষ এ সুবিধায় ব্যাংকগুলো এ পর্যন্ত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছে ১ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।
গত জুন শেষে ব্যাংকগুলোর হাতে অলস টাকার পরিমাণ ছিল ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা।
সরকারি-বেসরকারি একাধিক ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণ ও কল মানির বাইরে আরও বিভিন্ন উপায়ে ব্যাংক টাকা খাটায়। এর মধ্যে রয়েছে ৭ ও ১৪ দিনের জন্য টাকা ধার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী আমানত রাখা, আন্তব্যাংক রিভার্স রেপো, প্লেসমেন্ট, বৈদেশিক মুদ্রা সোয়াপসহ আরও বিভিন্ন উপায়। এসব উপায়ে টাকা পায় বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউস ও বিমা কোম্পানি। অনেক সময় বড় বড় গ্রাহক বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাছেও এসব উপায়ে স্বল্প সময়ের জন্য টাকা খাটায় কোনো কোনো ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক ধারণা করছে, এসব উপায়ে ব্যাংকগুলোর টাকা অনুৎপাদনশীল খাতে চলে যাচ্ছে। এ জন্যই ঋণ ও কল মানির বাইরে ব্যাংকগুলো কাকে কত টাকা দিয়েছে, এসব বিনিয়োগের সুদের হার ও মেয়াদ কত দিনের, তা জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকের টাকা কোথায় যাচ্ছে, তা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। এ জন্য তদারকির প্রয়োজনে দৈনিক ভিত্তিতে তথ্য চাওয়া হয়েছে।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ১৩, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,