বৈশাখের গুরুত্ব
আমাদের ষড় ঋতুর বা বৈচিত্র ময় ঋতু বা মাসে দেশে বৈশাখ সত্যই এক বিষ্ময়। বৈশাখ প্রসঙ্গ আসলেই কতকগুলি বিষয়, কতকগুলি ছবি আমাদের মন ও মননে ভেসে উঠে, খেলা করে। বৈশাখী মেলা, রমনা বটমূলে বৈশাখী বরণ, রবি ঠাকুর, কাল-বৈশাখী ঝড়ের আশংকা সব মিলিয়ে আমাদের কছে বৈশাখ মাস অনেক বৈচিত্রময়, বৈশাখের প্রথম দিনটি ঠিক কেমন হবে তা থাকে আমাদের জানার বাইরে। অজানা এক রোমাঞ্চ থাকে বৈশাখে। বৈশাখের প্রথম দিনটিতে প্রচন্ড তাপ দাহ থাকবে নাকি সু-শিতল বাতাসের পরশ, নাকি কাল বৈশাখী ঝড়, নাকি বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা।
ফাল্গুন বা অগ্রায়ন অথবা কার্তীক মাসের মত কোমলতা বা নমনীয়তার আভাস থাকে না বৈশাখে আছে ক্ষিপ্রতা, প্রচন্ডতা, লল্ড-ভন্ডের অভাস বা তান্ডব আবার আছে নতুন সৃষ্টির সূচনা ও প্রত্যয়।
আবার আছে নতুনের চেতনা, গাছে গাছে মুকুলের সমারোহ। নানান বৈচিত্রতা নিয়ে একটি বছরের প্রথম মাসের যে সব বৈশিষ্ঠ থাকা প্রয়োজন সবই বৈশাখের মাঝে আছে বলেই রেল গাড়ীর রেল ইন্জিনের মত বৈশাখ মাস বাংলা বছরের যাত্রা শুরু করায়। বাংলা মাসের শুরুটা যদি কার্তীক মাস দিয়ে কিম্বা ভাদ্র মাস দিয়ে শুরু হত তবে হয় তো বাংলা নব-বর্ষ বরণের মাসটা আমাদের জীবনে এতটা গুরুত্বপূর্ণ বা বৈচিত্রময় হতো না।
এগিয়ে যাওয়ার এই দেশে প্রতি বছরই পহেলা বেশাখ আসছে নতুন ধারায় ও কাঠামোর মধ্য দিয়ে, আজ থেকে ৪৮ বছর আগে এ দেশে ( তৎকালিন পূর্ব পাকিস্থান) কী ভাবে পহেলা বৈশাখ পালিত হত তা আমাদের জানা নেই তবে এখন বলা যায় এ উৎসবের যাত্রা শুরু হয় মহা এক আয়োজনের মধ্য দিয়ে।
দিনে দিনে এই উৎসবের আয়োজন মহা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানান আয়োজনের ব্যবস্থা করছে বিশেষ করে ফ্যাসন হাউজগুলি বৈশাখ কেন্দ্রিক পোশাক তৈরী করছেন যা দেশের অর্থনীতির চাকাকে আরও দ্রুত গতিতে চালিয়ে রাখতে সামর্থ হচ্ছে।
নব-বর্ষ বা নতুন বর্ষের আগমন উপলক্ষ্যে বিশ্বের মধ্যে চীন এমন এক মহা উৎসবের আয়োজন করে থাকে যা সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয় বিশ্বের নানান দেশের বাজার অর্থনীতির উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। এই দেশটি নব-বর্ষ পালন উপলক্ষ্যে সে দেশের কলকারখানাগুলি প্রায় ১৪ দিন থেকে ২১ দিন বন্দ থাকে আর সারা বিশ্বে তখন তাদের দেশের পন্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। নব-বর্ষকে কেন্দ করে চীন কেন এক মহা উৎসবর আয়োজন করে তা আমাদের জানা নেই তবে আমাদের দেশেও বাংলা নব-বর্ষের গুরুত্ব আরো বাড়বে এ আমাদের আশাবাদ, বাংলা মাসের ব্যবহারে আমাদের এখনও বড় ধরনের ঘাটতি আছে বাংলা মাসের তারিখের উপর ভিত্তি করে আমাদের কোন দিবসই পালন হয় না একমাত্র পহেলা বৈশাখ ছাড়া।
মাতৃ ভাষা দিবস, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস সবই উংরেজী মাসের তারিখের উপর ভিত্তিতে নির্ধারণ হয়ে আছে। শুধু শিশুরা নয় আমরা বড়রা বা এমন কি যারা লেখালেখির মধ্যে থাকি তাঁরাও অনেক সময় বাংলা মাসের সঠিক তারিখটি বলতে পারি না। পহেলা বৈশাখের মধ্যে দিয়ে. বৈশাখ মাসের মধ্য দিয়ে আমাদের সকলের চেতনায় ফুটে উঠুক বাংলা চর্চার আসল রূপ। হাজার বছরের আমাদের বাংলা ঐতিয্যকে সঠিক ধারায় আমরা চালিত করতে পারব অস্তত কাল ধরে এ বিশ্বাস আমাদের আছে।
রেটিং করুনঃ ,