বিশ্বের সব দেশই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নিজস্ব মুদ্রার বাইরে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ, তথা মজুত রাখে। সাধারণত বৈদেশিক মুদ্রার মজুত হিসেবে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ মার্কিন ডলারকে বেছে নেয়। তবে দেশ ভেদে ডলার ছাড়াও ইউরোসহ ব্রিটিশ পাউন্ড, চীনা ইউয়ান ও জাপানি ইয়েনে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত রাখা হয়।
আর্থিক বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা, আমদানি ব্যয় মেটানো, স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন রোধ, মুদ্রানীতি জোরদারকরণ, বাজারে আস্থা ধরে রাখাসহ বাজেট বাস্তবায়ন, বৃহৎ প্রকল্পে অর্থের জোগান, বৈদেশিক দায় পরিশোধ নিশ্চিতে সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সম্পদের মজুত হিসেবে ফরেন এক্সচেঞ্জ বা বৈদেশিক মুদ্রা মজুত রাখে। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, যেকোনো দেশেরই নিজস্ব মুদ্রার বাইরে বিদেশি মুদ্রায় তা রাখা উচিত। নিয়মটি সারা বিশ্ব মেনে চলে।
সাধারণত বৈদেশিক মুদ্রার মজুত হিসেবে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ মার্কিন ডলারকে বেছে নেয়। তবে দেশভেদে মার্কিন ডলার, ব্রিটিশ পাউন্ড, ইউরোপের একক মুদ্রা ইউরো, চীনা ইউয়ান ও জাপানি ইয়েনে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত রাখা হয়। অবশ্য বিদেশি মুদ্রার পাশাপাশি ব্যাংক নোট, বন্ড, আমানত, ট্রেজারি বিল ও অন্যান্য সরকারি সিকিউরিটিজের মাধ্যমেও বৈদেশিক মুদ্রা মজুত রাখা যেতে পারে।
বর্তমানে বিশ্বে সর্বোচ্চ পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার মজুত আছে চীনের কাছে। দেশটির হাতে এখন ৩ লাখ ৩৬ হাজার কোটি ডলারের রিজার্ভ রয়েছে। ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার নিয়ে জাপান দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ১ লাখ ৭ হাজার ৪৮৪ কোটি ডলার নিয়ে সুইজারল্যান্ড এখন তৃতীয় স্থানে।
বৈদেশিক মজুতে সম্প্রতি রাশিয়াকে পেছনে ফেলে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে ভারত। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেশটিতে বৈদেশিক মজুতের পরিমাণ ৬০ বিলিয়ন বা ৬০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এখন ভারতের কাছে রয়েছে ৬১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। ভারতের কাছে চতুর্থ স্থান হারিয়ে পঞ্চমে নেমে যাওয়া রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার মজুত এখন ৫৯ হাজার ২৪০ কোটি ডলার।
ষষ্ঠ থেকে দশম স্থানে থাকা দেশগুলোর মজুতের পরিমাণ হচ্ছে যথাক্রমে তাইওয়ান ৫৪ হাজার ১১১ কোটি ডলার, হংকং ৪৯ হাজার ৬০ কোটি ডলার, দক্ষিণ কোরিয়া ৪৫ হাজার ২৩০ কোটি ডলার, সৌদি আরব ৪৪ হাজার ৭৩ কোটি ডলার ও সিঙ্গাপুর ৩৯ হাজার ৮০৭ কোটি ডলার।
বৈদেশিক মুদ্রার মজুতে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পেছনেই রয়েছে বাংলাদেশ। তবে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে ৪৪তম। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি ডলারের রিজার্ভ আছে। বাংলাদেশের নিকটতম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান, কিন্তু ২৮ ধাপ পেছনে। ১১ জুন পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, পাকিস্তানের বৈদেশিক মজুতের পরিমাণ ১ হাজার ৫৪১ কোটি ডলার। নেপালের রিজার্ভের পরিমাণ ১ হাজার ১৯৬ কোটি ডলার। ৯৫০ কোটি ডলারের রিজার্ভ নিয়ে আফগানিস্তান রয়েছে ৭৮তম অবস্থানে। এ ছাড়া ৪০১ কোটি ডলার নিয়ে শ্রীলঙ্কা ১০৩তম, ১২৪ কোটি ডলার নিয়ে ভুটান ১৩৩তম, ৭৬ কোটি ডলার নিয়ে মালদ্বীপ ১৪৭তম স্থানে রয়েছে।
সাধারণত অর্থনীতিবিদেরা কোনো দেশে তিন মাসের মোট আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থাকলে সেটাকে নিরাপদ বলে মনে করেন। ভারতের কাছে বর্তমানে যে পরিমাণ রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে দেশটির ১৫ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। তারপর শঙ্কায় রয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। তারা মনে করে, বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থাকলেও, তা পর্যাপ্ত নয়। আমদানি ব্যয় ও বৈদেশিক দায় বেড়ে যাওয়ার কারণেই মূলত আরবিআই এমন অভিমত দিয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রার মজুতে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে সুইজারল্যান্ডের কাছে ৩৯ মাস, জাপানের ২২ মাস, রাশিয়ার ২০ মাস ও চীনের ১৬ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো অর্থ রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের হাতে থাকা রিজার্ভ দিয়ে ১১ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব (প্রতি মাসে ৪০০ কোটি ডলার ধরে)।
মজার ব্যাপার হলো, জাপান, সুইজারল্যান্ড, কোরিয়ার মতো উন্নত এবং চীন, ভারত, রাশিয়াসহ দু-চারটি বড় অর্থনীতি ছাড়া বিশ্বের উন্নত ও বৃহৎ অর্থনীতিগুলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণে তেমন মনোযোগী নয়। যেমন বিশ্বের বৃহত্তম ও সবচেয়ে উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্র বৈদেশিক মুদ্রা মজুতে ২১তম স্থানে রয়েছে। তাদের মজুতের পরিমাণ মাত্র ১৪ হাজার ২২১ কোটি ডলার।
অন্য বড় অর্থনীতিগুলোর মধ্যে ব্রাজিলের ৩৬ হাজার কোটি ডলার (১১তম), জার্মানি ২৫ হাজার ৪৬৮ কোটি ডলার (১৩তম), ফ্রান্স ২১ হাজার ২৫৬ কোটি ডলার (১৪তম), যুক্তরাজ্য ২০ হাজার ৯৭৫ কোটি ডলার (১৫তম) ও ইতালি ২০ হাজার কোটি ডলার (১৭তম)।
সূত্র: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, উইকিপিডিয়া
লেখক: এ টি এম ইসহাক
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: জুলাই ০৫, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,