বগুড়া শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে বগুড়া-রংপুর মহা সড়কের পাশে গোকুল গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে গোকুল মেদ অবস্থিত। স্মৃতিস্তূপটি যুগযুগ ধরে অতীতের অসংখ্য ঘটনাবলির নিদর্শন। এটি বেহুলার বাসর ঘর নামে ব্যাপক পরিচিত। এ বাসর ঘর মেড় থেকে মেদ এবং বর্তমানে পুরার্কীতি নামে পরিচিত। এ বছর এপ্রিলের প্রথম দিকে পুরার্কীতিটি ভ্রমণের কিছু ছবি যুক্ত করা হলো।
বেহুলার বাসর ঘর বা লক্ষিন্দরের বাসর ঘর যে নামেই পরিচিত হোক না কেন বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মতে, আনুমানিক খ্রিস্টাব্দ সপ্তম শতাব্দী থেকে ১ হাজার ২০০ শতাব্দীর মধ্যে এটা নির্মিত। এ স্তূপটি পূর্ব-পশ্চিমে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ এবং ত্রিকোণবিশিষ্ট ১৭২টি কক্ষ। অকল্পনীয় এ কক্ষগুলোর অসমতা এবং এলোমেলো বুনিয়াদ এর বোধগম্যতাকে আরও দুর্বোধ্য করে তুলেছে। বেহুলার কাহিনী সেনযুগের অনেক আগের ঘটনা। বেহুলার বাসর ঘর একটি অকল্পনীয় মনুমেন্ট। বর্তমান গবেষকদের মতে, এ মনুমেন্ট ৮০৯ থেকে ৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেবপাল নির্মিত একটি বৈদ্যমঠ। এ স্তূপটিই বাসর ঘর নয়, এ স্তূপটির পশ্চিমাংশে আছে বাসর ঘরের প্রবাদ স্মৃতিচিহ্ন। পূর্বাংশে রয়েছে ২৪ কোণবিশিষ্ট চৌবাচ্চাসদৃশ একটি স্নান ঘর। ওই স্নান ঘরের মধ্যে ছিল আট ফুট গভীর একটি কূপ।
ব্রিটিশরা ১৯৩৪-৩৬ সালের দিকে প্রথম ওখানে খনন কাজ চালায়। এরপর এই স্থানটি অখননকৃত অবস্থায়ই আছে বলা যায়। ফলে এটা যে আসলে কি ছিল তা এখনও অজানা বেহুলা – লক্ষিন্দরের মিথটাই প্রচলিত হয়ে গেছে এটাকে ঘিরে। যা এখনও বেহুলা – লক্ষিন্দরের বাসর ঘর নামে অধিক পরিচিত। মাটি থেকে প্রায় ৪০-৫০ ফিট উচুতে একটা ঘরের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। ঘরটির একপাশে আরেকটা ঘরের মতো অংশে আছে একটা কুয়া, কুয়া সহ এই ঘরটিকে বলা হচ্ছে স্নানাগার প্রচলিত ধারণা এটি তৈরী করা হয়েছিল বাসর রাতের পর বেহুলা-লক্ষিন্দরের স্নান করার জন্যে। স্তুপটিকো পাশ থেকে দেখলে আরো অনেকগুলো ঘরের কাঠামো চোখে পড়ে।
২০১৪ এর এপ্রিয়ের প্রথম ভাগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনা বগুড়ার ঐতিহাসিক গোকুলের বেহুলার বাসর ঘর পরিদর্শন করেছিলেন।
ছবিটি বেহুলা লক্ষিন্দরের লোহার বাসর ঘর নামে পরিচিত । আনুমানিক এ রকম ১৭২ টি ঘর আছে আবার ধারণা করা হয় এই মহলটি তৈরী করা হয়েছিল আনুমানিক ৬ষ্ঠ – ৭ম খৃষ্টাব্দের কোন এক সময়।
এটি নিয়ে নানান রূপকথা চালু আছে চম্পাই নগরে চাঁদ সদাগর নামে এক বনিক ছিল। মনসাদেবী মহাদেবকে সন্তুষ্ট করে বরপ্রাপ্ত হয়েছিল যে যদি চাঁদ সদাগর তাকে পূজা দেন তাহলে ত্রিলোকে মনসার পূজা প্রচলিত হবে । চাঁদ মনসা বিদ্বেষী , সে রাজি হোল না , চাঁদ সদাগর শুভ দিন গননা ১৪ টি জাহাজ সাজিয়ে বাণিজ্যে বের হলেন , সিংহল এর উদ্দেশে । চাঁদ সিংহল বাণিজ্য শেষ করে ফেরার পথে কালিদাহ সাগরে মনসাদেবী মহাঝড় সৃষ্টি করল এবং সবগুলো জাহাজ পানিতে তলিয়ে গেল। ঐ সময়ে চাঁদের সওদাগরের এক পুত্র জন্ম হয় যার নাম লক্ষিন্দর ।
কিন্তু গনক বলেছিল বাসর ঘরে লক্ষিন্দরকে সাপ কামড়াবে লক্ষিন্দর প্রাপ্ত বয়স্ক হলে বেহুলার সাথে তার বিয়ে ঠিক করা হয় । তাদের জন্য তৈরী করা হয় এই বাসর ঘর। বাসর রাতে অনেক নিরাপত্তা থাকা সত্তেও মনসাদেবী সুতার আকার ধারন করে ঘরে প্রবেশ করে লক্ষিন্দরকে দংশন করে। এরপর বেহুলা , লক্ষিন্দরের দেহ নিয়ে ভেলায় অজানা গন্তবে রওনা হন…………………। পরের ঘটানা প্রায় সবারই জানা।
প্রাচীন এই স্থাপনাটি অনেকেই পরিদর্শন করেছে, গত বছর অর্থাৎ ২০১৪ এর এপ্রিয়ের প্রথম ভাগে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনা বগুড়ার ঐতিহাসিক গোকুলের বেহুলার বাসর ঘর পরিদর্শন করেছিলেন।
প্রতি বছররই প্রচুর পর্যটক এই স্থাপনাটি পরিদর্শন করেন বা স্থানটিতে ভ্রমন করেন।
তারিখ : এপ্রিল ০৪, ২০১৫
রেটিং করুনঃ ,