মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে দ্য সামিট ফর ডেমোক্রেসি বা গণতন্ত্র সম্মেলন। শতাধিক দেশের অংশগ্রহণে বিশ্বে প্রথমবারের মতো এ ধরনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে সভাপতিত্ব করছেন বাইডেন। এ সম্মেলনের উদ্দেশ্য বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের পিছিয়ে পড়া, মানবাধিকার ও স্বাধীনতা অবক্ষয় ঠেকানো। রাশিয়া ও চীনের কর্তৃত্ববাদী শাসন উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বনেতৃত্বের আসনে ফিরিয়ে নিতে বাইডেনের জন্য একে বড় ধরনের পরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। খবর এএফপির।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে আয়োজন করা হয়েছে এ সম্মেলন। বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট উজরা জেয়া বলেছেন, ‘কোনো ভুল করবেন না, আমরা গণতান্ত্রিক হিসাবের একটি মুহূর্তে আছি। এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র নতুন এবং অভিনব হুমকি থেকে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। কার্যত বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলের দেশগুলো গণতন্ত্র থেকে পিছিয়ে পড়ছে।’
শুক্রবারও এ সম্মেলন চলবে। এতে বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানেরা ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, দাতব্য সংগঠনের কর্মকর্তারাও যুক্ত হয়েছেন।
তবে এ সম্মেলন শুরুর আগে থেকেই নিজ দেশের গণতন্ত্র নিয়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন বাইডেন। বিশেষ করে গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচরণ এ সম্মেলনের উদ্বেগজনক পটভূমি সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া বাইডেনের এ গণতন্ত্র সম্মেলনে কোন দেশ থাকবে আর কোন দেশ বাদ পড়বে, তা নিয়েও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
বাইডেনের চোখে স্বৈরাচার শিবিরের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে থাকা চীন ও রাশিয়া এ তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। তবে এ দুটি দেশের পক্ষ থেকে একে কেবল আদর্শগত দূরত্ব হিসেবেই তুলে ধরা হয়েছে।
গত মাসে এক যৌথ বিবৃতিতে রাশিয়া ও চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বিশ্বের বিশাল এবং বৈচিত্র্যময় রাজনীতির দেশকে একক মাপকাঠিতে বিচার করার অধিকার কোনো দেশের নেই।’
চীনকে আরও বড় ধাক্কা দিয়ে বাইডেন প্রশাসন এবারের সম্মেলনে তাইওয়ানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে মনে করে থাকে চীন। এ ছাড়া গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চীনে উইন্টার অলিম্পিকে কর্মকর্তাদের না পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। জিনজিয়াংয়ের উইঘুর জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’সহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও কানাডা একই সুরে সুর মিলিয়ে কূটনৈতিক বর্জনে সায় দিয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে রাশিয়া।
মানবাধিকার লঙ্ঘন বা ভোট কারচুপির জন্য অন্য দেশগুলোকে সম্মেলন থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল বেশ জটিল। যেমন এ সম্মেলনে পাকিস্তান ও ফিলিপাইন ডাক পেয়েছে কিন্তু হাঙ্গেরির জাতীয় সরকারের ঠাঁই হয়নি। ব্রাজিলের ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো আমন্ত্রণ পেলেও তুরস্কের রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
তবে বাইডেনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিজের ঘরে গণতন্ত্রে আস্থা ফেরানোর বিষয়টি। গত নির্বাচনের ফল মেনে নিতে পারেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২২ সালের আইনসভা নির্বাচন ও ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবার ট্রাম্প ফিরতে পারেন বলে তাঁর সমর্থকেরা আশা করছেন।
ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্রুস জেন্টলসন বলেন, বাইডেনের এ গণতন্ত্র সম্মেলনের ‘ধারণাটি খুব ভালো নয়’।
জেন্টলসন আরও বলেন, ‘পশ্চিমা গণতন্ত্রের তুলনায় আমাদের সমস্যা আরও প্রকট। আমাদের ক্যাপিটল ভবনে হামলা হয়েছে। অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। আমরা প্যারিসে, বুন্দেসট্যাগে বা ব্রাসেলসে তা কখনো হতে দেখিনি।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জেন্টলসন বলেন, ‘আমরা যদি প্রতিযোগিতা করতে চাই, তবে আমাদের সেরাটা দিতে হবে। যেকোনোভাবে ১০০ নেতাকে এক জায়গায় করে আমরা গণতন্ত্র পছন্দ করি বলার চেয়ে এটি দেশের মধ্যে আমাদের বেশি জরুরি।’
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ ডিসেম্বর ০৯, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,