Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচিত গনিম (২০২২)

Share on Facebook

লেখক:মেহেদী হাসান

মুহূর্তটা জাদুকরি, আবেগপ্রবণ, মনোমুগ্ধকর; স্মৃতিজাগানিয়াও—বিশ্বকাপ উদ্বোধনের মঞ্চে মরগান ফ্রিম্যান যখন উঠে দাঁড়ালেন আর গনিম আল মুফতাহ নিচ থেকে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিলেন। হলিউড কিংবদন্তিও বাড়িয়ে দিলেন তাঁর বাঁ হাতটা, গনিমের তর্জনী ও ফ্রিম্যানের বাঁ হাতের মধ্যে সূক্ষ্ম ফাঁকা অংশটুকু মনে করিয়ে দিল সেই অমর চিত্রকর্ম, ‘দ্য ক্রিয়েশন অব অ্যাডাম’! সিস্টিন চ্যাপেলের সিলিংয়ে অমর চিত্রশিল্পী মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর আঁকা ফ্রেসকো, যেখানে সৃষ্টিকর্তা আদমকে জীবনদান করেন।

জীবন-মানুষকে দেওয়া এটাই কি সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে মূল্যবান ‘উপহার’? আর মানুষ এ উপহার দুহাত ভরে গ্রহণ করে বেঁচে থাকার যে চেষ্টা চালিয়ে যায়, সেটাই তো সভ্যতার ইতিহাস। গনিম আল মুফতাহ সেই ইতিহাসের এক চরিত্র, যে পৃথিবীর আলো দেখেছে শরীরের নিচের অংশ ছাড়াই।

সে সময় অনেকের পরামর্শ মেনে তাঁর মা গর্ভপাতের কঠিন সিদ্ধান্তটি নিলে এ চরিত্র আর দৃশ্য পৃথিবী দেখত না। কিন্তু মা তো মা-ই। সন্তান বিরল ‘কাডল রিগ্রেশন সিনড্রোম’-রোগে আক্রান্ত জেনেও একজন মা কীভাবে তার পৃথিবীতে আসার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন!

মায়েরা তা পারেন না বলেই ২০০২ সালের ৫ মে তাই হলো যমজ সন্তানের—গনিম আল মুফতাহ ও আহমদ আল মুফতাহর। আহমদ সুস্থ থাকলেও গনিমের শরীরে নিচের অংশ ছিল না। ৬০ হাজার শিশুর মধ্যে প্রতি একজন এ রোগ নিয়ে জন্মায়, যে রোগে মেরুদণ্ডের নিচের অংশ বাড়ে না। গনিমের জন্মের সময় চিকিৎসক তাই বলেছিলেন, সে সর্বোচ্চ ১৫ বছর বাঁচতে পারে।

চিকিৎসক ভুলেই গিয়েছিলেন, মানুষ তার ইচ্ছাশক্তির সমান বড়। আর তাই চিকিৎসকের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার পরও কেটে গেছে আরও ৫ বছর।

কুড়ি বছর বয়সী গনিম এখন কাতারের কনিষ্ঠতম উদ্যোক্তা, মানবহিতৈষী, ইউটিউবার, টিক-টকার, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী, মোটিভেশনাল স্পিকার, দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকে তাঁর গল্প শুনে নিজেদের লড়াই লড়ার প্রেরণা পায়। ঠিক সিস্টিন চ্যাপেলের অ্যাঞ্জেলোর সেই ফ্রেসকো দেখে দর্শনার্থীদের অনেকে যেভাবে বুঝে নেন, জীবনটাই সবচেয়ে মূল্যবান, গনিমও তেমনি যেন সেই ছবির গভীরতম অনুভূতি থেকে উঠে আসা এক জীবন্ত চরিত্র!

গনিমকে স্কুলে ভর্তি করতে মায়ের কষ্ট হয়েছে। কাতারে বেশির ভাগ স্কুলই তাঁকে ভর্তি করতে চায়নি। শেষ পর্যন্ত একটি স্কুল রাজি হলেও সেখানে তাঁকে সাধারণ বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে দেওয়া হতো না। ধীরে ধীরে এই অচলায়তনও ভেঙে যায়। স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গেই এই শরীর নিয়ে ফুটবল খেলতেন গনিম। পার্থক্য শুধু লোকে পায়ে বুট পরে, গনিমকে পরতে হতো হাতে।

হ্যাঁ, গনিমকে দুই হাতে বুট পরে ফুটবল খেলার সাধ মেটাতে হয়েছে। আইসক্রিম ফ্যাক্টরির মালিক, ইনস্টাগ্রামে ১০ লাখের বেশি অনুসারী নিয়ে পথচলা গনিম একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়ছেন কেন জানেন? তিনি অদূর ভবিষ্যতে কাতারের প্রধানমন্ত্রী হতে চান।

২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর অলিম্পিকের ওয়েবসাইটে গনিমের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। ফুটফুটে চেহারার ছেলেটি সেখানে নিজের গল্প বলেন, ‘জীবনকে কীভাবে ইতিবাচক চোখে দেখতে হয় সেটা মায়ের কাছ থেকে শিখেছি। তিনি শিখিয়েছেন, জীবন সুন্দর এবং অসম্ভব বলে কিছু নেই।’

সেই ভিডিওতেই দেখা যায়, জীবনে অসম্ভব বলে যে কিছু নেই, তা প্রতি পদে পদে প্রমাণ করে চলেছেন গনিম। স্কেটবোর্ডিং থেকে সুইমিং—কী করছেন না! বাদ পড়েনি স্কুবা ডাইভিং আর হাইকিংও। গনিম প্যারা–অলিম্পিয়ান হতে চান। তাই ঘষেমেজে তৈরি করছেন জীবনকে। আর এই ঘষামাজার পথে বাদ পড়েনি ‘জেবেল শামস’ও। উপসাগরীয় অঞ্চলের সর্বোচ্চ এই পবর্তশৃঙ্গও (৯,৮৭২ ফুট) জয় করেছেন গনিম।

গনিমের মতো শারীরিক সমস্যা নিয়ে জন্মানো বেশির ভাগ সাধারণ মানুষই হুইলচেয়ার ব্যবহার করবেন। কিন্তু তাহলে তো আর গনিম হয়ে ওঠা যায় না! গনিম নিজের ওয়েবসাইটেই এ বিষয়ে দর্শনটা পরিষ্কার করেছেন, ‘যা আমার নয়, তার দ্বারস্থ না হয়ে সৃষ্টিকর্তা জন্মের সময় যা যা দিয়েছেন, সেসবের পূর্ণ ব্যবহার করতে চাই।’

গনিমকে তাই দুই হাতে ভর দিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়। তিনি এ পথ পর্যন্ত আসতে পারতেন না, যদি মায়ের ওই মনোবলটুকু না থাকত, গনিমকে পৃথিবীর আলো দেখাবেনই। তার অফিশিয়াল জীবনীতেই এ বিষয়ে বলা আছে, গনিমকে নিয়ে মা–বাবার ভাবনা ছিল, ‘তাঁর ডান ও বাঁ পা হব আমরা।’

কাতার বিশ্বকাপের এই দূতকে প্রতিবছর ইউরোপে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে আনতে হয়। কিন্তু এসব প্রতিকূলতার মধ্যেই আর এই বয়সেই ৬টি শাখাসহ ৬০ জন কর্মী নিয়ে ‘ঘারিসা আইসক্রিম’ ফ্যাক্টরির মালিক বনে গেছেন গনিম। এই আইসক্রিমের স্বাদ তিনি পৌঁছে দিতে চান গোটা উপসাগরীয় অঞ্চলে। আর মনে মনে স্বপ্ন দেখেন, একদিন মাউন্ট এভারেস্টও জয় করবেন!

গনিম সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন কি না, তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু কাল বিশ্বকাপের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে তাঁর কাছে ফ্রিম্যান যখন জানতে চাইলেন, ‘কাতারে একটি মতই যদি গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে এতগুলো দেশ ও সংস্কৃতি একীভূত হলো কীভাবে?’ তখন গনিমের জবাবটা শুনলে মনে হবে, আর কেউ এর উত্তরটা এত ভালোভাবে বলতে পারতেন না, ‘পৃথিবীতে আমরা একটি জাতি হিসেবেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছি, এই বিশ্বাস নিয়ে আমরা বেড়ে উঠেছি। তাই আমরা একে অপরের কাছ থেকে শিখতে পারি।’

বিশ্বকাপে মাঠের লড়াইয়ে বিজয়ী দেখা যাবে ১৮ ডিসেম্বরের ফাইনালে। আর মাঠের বাইরে জীবনের লড়াইয়ে বিশ্বকাপ উদ্বোধনের দিনই পৃথিবীকে গনিমের মতো বিজয়ী উপহার দিল কাতার।

আরবি ভাষায় গনিম নামের বাংলা অর্থও তো তাই—বিজয়ী!

সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:নভেম্বর ২১, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ