ইতিহাসে প্রথম—এই তালিকায় যুক্ত হলো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঘটনাটি।
যৌন সম্পর্কের বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে করা এই মামলায় স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করেন নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের আদালত। মামলায় আনা ৩৪টি অভিযোগের সব কটিতেই তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
ট্রাম্প প্রথম কোনো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেন।
আবার ট্রাম্প প্রথম ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দেশটির বড় কোনো রাজনৈতিক দলের (রিপাবলিকান পার্টি) হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে যাচ্ছেন।
ফৌজদারি অপরাধের রেকর্ডধারী কাউকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে দেওয়া যাবে না, এমন কোনো শর্ত দেশটির সংবিধানে উল্লেখ নেই। তাই ট্রাম্পের প্রার্থী হতে বাধা নেই।
মামলাটিতে আপিল করার পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্প। এই মামলায় তাঁর সাজা আগামী ১১ জুলাই ঘোষণা করা হবে। সাজা হিসেবে তাঁর কারাদণ্ড হতে পারে। আবার মোটা অঙ্কের জরিমানাও করা হতে পারে।
দোষী সাব্যস্ত হওয়া বা ঘোষিত হতে যাওয়া সাজার রাজনৈতিক পরিণতি ট্রাম্পের জন্য কী হবে, তা এখন সুনিশ্চিত করা বলা যাচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন মেথডিস্ট ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর প্রেসিডেনশিয়াল হিস্ট্রির পরিচালক জেফরি অ্যাঙ্গেল বলেন, কী ঘটতে যাচ্ছে, তার ইঙ্গিত খুঁজে পেতে তাঁরা প্রায়ই ইতিহাসের দিকে তাকান। কিন্তু ইতিহাসে এমন কোনো রেকর্ড নেই, যা দিয়ে এই বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
ট্রাম্প চলতি বছরের শুরুর দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীর মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন।
ট্রাম্পের সাজা ঘোষণার কয়েক দিন পরই দলটির জাতীয় সম্মেলন। এই সম্মেলনে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
বিভিন্ন জরিপের ইঙ্গিত, বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডেমোক্রেটিক পার্টির জো বাইডেনের সঙ্গে ট্রাম্পের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। নির্বাচনের ফলাফল ঠিক করে দেবে—এমন গুরুত্বপূর্ণ বেশ কটি সুইং (দোদুল্যমান) অঙ্গরাজ্যে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প।
কিন্তু এই জরিপগুলোতে এই বিষয়টিও আছে যে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি সব হিসাব বদলে দিতে পারে।
ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত, সাজা ঘোষণা ১১ জুলাই
রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী বাছাইপর্ব (প্রাইমারি) চলাকালে পরিচালিত বুথফেরত জরিপে অনেক ভোটার বলেছিলেন, ট্রাম্প যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তাঁরা তাঁকে ভোট দেবেন না।
গত এপ্রিলে ইপসোস ও এবিসি নিউজের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ট্রাম্পকে সমর্থনকারী ভোটারদের মধ্যে ১৬ শতাংশ এমন পরিস্থিতিতে (দোষী সাব্যস্ত) তাঁদের সমর্থন পুনর্বিবেচনা করবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
তবে এই জরিপগুলো ছিল অনুমানমূলক। কারণ, তখন তো মামলায় রায়ই হয়নি। কিন্তু এখন রায় হয়ে গেছে। ফলে এখন ভোটাররা সত্যিকারের অর্থেই ট্রাম্পের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঘটনার আলোকে তাঁদের রায় ভোটে দিতে পারবেন।
গতকাল আদালতকক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ট্রাম্প বলেন, সত্যিকারের রায় হতে যাচ্ছে আগামী ৫ নভেম্বর (প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন)। আর সেই রায় দেবেন মার্কিন জনগণ।
মার্কিন জরিপবিদ ডগ শোয়েন বলেন, আট বছর আগের ঘটনায় ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। নির্বাচন হবে আগামী নভেম্বরে। তত দিনে মার্কিন ভোটারদের মধ্যে বিষয়টির প্রভাব অতটা জোরালোভাবে না–ও থাকতে পারে। ভোটাররা নভেম্বরে যা ভাববেন, তা হলো মূল্যস্ফীতি, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত পরিস্থিতি, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতা, ইসরায়েল ও ইউক্রেনে যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে—এসব বিষয়।
অবশ্য রিপাবলিকান উইমেন ফর প্রোগ্রেসের সহপ্রতিষ্ঠাতা অ্যারিয়েল হিল-ডেভিস বলেন, তিনি মনে করেন, এই বিষয়টি একজন প্রার্থী হিসেবে তাঁর (ট্রাম্প) ওপর প্রভাব ফেলবে। তাঁর ক্ষতির কারণ হবে।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ: মে ৩১, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,