বিশ্ব বাণিজ্য ও যাত্রী চলাচলের অন্যতম কেন্দ্র সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। অভিজাত ও ঝাঁ-চকচকে এই আরব শহরটির আদলে নতুন একটি বৈশ্বিক কেন্দ্র গড়ে উঠছে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয়। চীনা অর্থায়নে ‘কলম্বো পোর্ট সিটি’ নামের বিশাল প্রকল্পটি শেষ হলে শ্রীলঙ্কার রাজধানী গুরুত্বের দিক থেকে দুবাই, সিঙ্গাপুর কিংবা হংকংয়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে বলে মত বিশ্লেষকদের।
তবে সমালোচকেরা বলছেন, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের শর্তযুক্ত এই প্রকল্প ইতিমধ্যে ঋণের ভারে জর্জরিত শ্রীলঙ্কাকে ‘চীনা ছিটমহলে’ পরিণত করতে পারে।
এই বিষয়ে কলম্বো পোর্ট সিটি ইকোনমিক কমিশনের সদস্য সালিয়া বিক্রমসুরিয়া বলেন, চীনা অর্থায়নে কলম্বোয় শুধু সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে না, সেখানে গড়ে উঠছে আধুনিক হাইটেক সিটি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেন্দ্র, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, প্রায় ৮০ হাজার মানুষের জন্য সর্বাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন আবাসিক এলাকা। ফলে প্রকল্পটি অনায়াসে দুবাই-সিঙ্গাপুরের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে। তিনি বলেন, এই প্রকল্প শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে আমূল বদলে দেবে।
২০১৪ সালে প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ২০১৯ সালে এসে এর নকশা ও বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশ করে শ্রীলঙ্কা সরকার। বর্তমানে ৬৬৫ একর এলাকাজুড়ে প্রকল্পটি দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় এত বড় প্রকল্প আগে দেখা যায়নি। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হতে ২৫ বছর সময় লেগে যেতে পারে।
চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিএইচইসি) কলম্বো পোর্ট সিটিতে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। বিনিময়ে ৯৯ বছরের জন্য বন্দরটি চীনের কাছে লিজ দেবে শ্রীলঙ্কা। আর চীন শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব জমা দেবে।
এর আগে চীনা অর্থে নির্মিত হাম্বানটোটা বন্দরের পরিচালনার ভার বেইজিংয়ের হাতে তুলে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার। সময়মতো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৭ সালে বন্দরটি শ্রীলঙ্কার হাতছাড়া হয়। এর মধ্যেই চীনা অর্থে কলম্বো পোর্ট সিটির কাজ শুরু করা হয়েছে।
আগামী দিনগুলোয় এই প্রকল্পটিও চীনের ‘ছিটমহলে’ পরিণত হতে পারে বলে মত বিশ্লেষকদের। এ বিষয়ে শ্রীলঙ্কার বিরোধী দলের সাংসদ রাজিথা সেনারত্ন বিবিসিকে বলেন, যে মুহূর্তে সরকার চীনা প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে, সেই মুহূর্ত থেকেই চীন এই প্রকল্পের সবকিছুতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। একদিন এই প্রকল্প নিয়ে কিছু বলার অধিকারও শ্রীলঙ্কার থাকবে না।
তবে বেইজিংয়ে সিনঘুয়া ইউনিভার্সিটির গবেষক ঝৌ বলেন, এই প্রকল্পে দুই দেশই লাভবান হবে। তবে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড পরিকল্পনা অনুদানের জন্য নয়, ব্যবসায়িক স্বার্থে। চীন বিনিয়োগের বিনিময়ে লভ্যাংশ নেবে, এটাই স্বাভাবিক।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ জানুয়ারী ১৭, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,