বিদেশি ঋণের বোঝা বাড়ছে। মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এই ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়বে। তাই ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ‘বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৩-২৪: বৈষম্য নিরসনে জনগণতান্ত্রিক বাজেট’ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি আবুল বারকাত এমন মন্তব্য করেন।
আবুল বারকাত বলেছেন, ‘বৈদেশিক ঋণসহ বর্তমান ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ এখন ১৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। তার মধ্যে ৪৩ শতাংশ বিদেশি ঋণ। বাকিটা দেশীয়। আমাদের মাথাপিছু ঋণভার ১ লাখ টাকার বেশি। দেশে ঋণ-জিডিপির অনুপাত ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ২০১৪ সালে ঋণ-জিডিপির অনুপাত ছিল ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এখন ৪২ দশমিক ১ শতাংশ।’
অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আরও বলেন, বিদেশি ঋণের বোঝা বাড়ছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার কোটি ডলার। চলতি বছর শেষে সেটি বেড়ে ১১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়বে। তিনি আরও বলেন, চার-পাঁচটি বৃহৎ প্রকল্পের ঋণের সুদ পরিশোধ শুরু হলে দেশের ঋণ পরিশোধ অবস্থা ‘লাল সংকেতবাহী’ হবে। আনুমানিক ২০২৭-২৮ সালে এই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বিদেশি ঋণের ‘লাল সংকেত’ যে সমাজ-অর্থনীতি-রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ঢাকার ইস্কাটনে সমিতির কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এই বিকল্প বাজেট উপস্থাপন করেন আবুল বারকাত। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আইনুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে অর্থনীতি সমিতি আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ২০ লাখ ৯৪ হাজার ১১২ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট উপস্থাপন করেছে, যা সরকারের চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৩ দশমিক শূন্য ৯ গুণ বড়। গত বছর অর্থনীতি সমিতি ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট দিয়েছিল।
সমিতির সভাপতি বলেন, ‘আমাদের বিকল্প বাজেটে সরকারের রাজস্ব আয় আসবে ১৯ লাখ ২৯ হাজার ১১২ কোটি টাকা। এই বাজেটে ঘাটতি থাকবে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকারের রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। আমরা প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব ৪ দশমিক ৪২ গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি।’
অর্থনীতি সমিতি বাজেটে আয়ের ২৭টি নতুন উৎসের প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে কালোটাকা ও দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার, সম্পদ কর, অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর, বিলাসী পণ্যের ওপর কর ও বিদেশি নাগরিকদের ওপর কর আরোপ এবং সংসদ সদস্যসহ অন্যদের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক মওকুফ সুবিধা বাতিল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
সমিতি বলছে, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে পুঞ্জীভূত কালোটাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তার ২ শতাংশ উদ্ধার করলে সেটির পরিমাণ হবে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে গত ৫০ বছরে প্রায় ১১ লাখ ৯৩
হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। তার ৫ শতাংশ উদ্ধার হলে এর পরিমাণ হবে ৫৯ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা।
সম্পদ কর আরোপ করে ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন অর্থনীতি সমিতির সভাপতি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বিপজ্জনক আয়বৈষম্যের দেশ। বৈষম্য কমাতে হলে সম্পদে করারোপ করতে হবে।
আবুল বারকাত বলেন, মূল্যস্ফীতি গরিবের শত্রু। নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে মানুষের প্রকৃত আয় বৃদ্ধি না পাওয়ার কারণে জনজীবনে দুর্ভোগ-দুর্দশা বাড়ছে। বহু মানুষ সঞ্চয় ভাঙিয়ে জীবন চালাচ্ছেন। অনেকে ধারদেনা করছেন। অধিকাংশ মানুষ ভোগব্যয়, বিশেষ করে আমিষ খাওয়া ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে। তবে শর্ত হচ্ছে, কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে হবে।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ: মে ২৬, ২০২৩
রেটিং করুনঃ ,