দেশের শহুরে জনসংখ্যার ৩২ শতাংশের বসবাস রাজধানী ঢাকায়। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সিংহভাগও ঢাকাকেন্দ্রিক। তাই দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৪৬ শতাংশ ঢাকায় ব্যবহৃত হয়। ঢাকা নগরের যে আয়তন ও জনসংখ্যা, তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি। এই পরিস্থিতি উন্নয়নসহায়ক নয়। এতে দেশের জিডিপির ৬-১০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হচ্ছে। তাই নীতিপ্রণেতাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেকশোরে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বার্ষিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের এক অধিবেশনে এসব কথা বলেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) পরিচালক আহমাদ আহসান।
আহমাদ আহসান তাঁর প্রবন্ধে বলেন, ঢাকায় দেশের শহুরে জনসংখ্যার ৩১ দশমিক ৯ শতাংশের বসবাস। সেখানে চীনের বড় শহরগুলোতে এ হার ৩ দশমিক ১ শতাংশ। ভারতে ৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৭ দশমিক ৪।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি দারিদ্র্য দূরীকরণে খুব বেশি কাজে আসে না বলে মত দেন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক মার্টিন রাভালিয়ন। গতকাল সকালের অধিবেশনে তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, সামাজিক খাতের ব্যয় থেকে হতদরিদ্ররা যতটা উপকৃত হয়, তার চেয়ে বেশি উপকৃত সর্বজনীন মৌলিক আয় প্রকল্প থেকে।
রাতের আলোয় উন্নয়ন দেখা
রাতের বেলা বিভিন্ন দেশের উপগ্রহচিত্র দিয়ে উন্নয়নের চরিত্র বোঝা যায় বলে মত দেন আহমাদ আহসান। তিনি দেখান, উত্তর ভিয়েতনামের মানচিত্রজুড়ে আলোর রেখা ছড়িয়ে আছে। ইন্দোনেশিয়ারও বড় একটি অংশজুড়ে আলোর রেখা ছড়িয়ে আছে। রাতের বেলা আলো থাকার অর্থ হলো, সেই নির্দিষ্ট স্থানে অর্থনৈতিক কার্যক্রম চলছে। পক্ষান্তরে রাতের বেলা বাংলাদেশের উপগ্রহচিত্রে দেখা যায়, আলোর রেখার ঘনত্ব ঢাকা নগরেই বেশি। চট্টগ্রামে কিছুটা আছে। অথচ বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিহার প্রদেশে আলোর রেখা অনেক বিস্তৃত। পশ্চিমবঙ্গেও তাই। তিনি জানান, বিহারের অর্থনীতি বাংলাদেশের চেয়ে ছোট হলেও তা অনেকটাই বিকেন্দ্রীকৃত।
এসব কারণে ঢাকার জনসংখ্যা সীমা ছাড়িয়েছে। যে যানজট হচ্ছে, তাতে জিডিপির প্রায় আড়াই শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে।
শুধু অভিবাসনে দারিদ্র্য ঘুচবে না
দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের ৩০ শতাংশের বেশি আসছে ঢাকা নগর থেকে। গ্রামের মানুষ ঢাকায় এসে আয়রোজগার করে দারিদ্র্যসীমার ওপরে মাথা তোলার প্রাণপণ চেষ্টা করেন। কিন্তু বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন মনে করেন, আঞ্চলিক সমতা আনার ক্ষেত্রে অভিবাসনই একমাত্র মাধ্যম নয়। ঢাকা নগরের এই অতিবৃদ্ধি ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের জন্য সুবিধাজনক হলেও সামাজিক ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করছে। ঢাকার সঙ্গে অন্যান্য শহরের যে ব্যবধান তৈরি হয়েছে, তাতে মানুষের সামগ্রিক কল্যাণে প্রভাব পড়ছে। সে জন্য বিকেন্দ্রীকরণের দিকে যেতে হবে।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ ডিসেম্বর ০৩, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,