সব দেশে, সমাজে, অঞ্চলে, পরিবারে বাবা শব্দটির একই অর্থ যেন চির পুরাতনের মধ্যে অতি প্রাচিন। যেখানে কোন পরিবর্তন আসে সেই আদি কাল থেকে আজ অবধি একই অর্থ বহন করে চলেছে ক্রমাগত। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে, সামাজিক সম্পর্কে, বন্ধুত্বের সম্পর্কে, দাম্পত্ত সম্পর্কে কতই না পরিবর্তন এসেছে কিন্তু সম্পর্কে পরিবর্তন আসে নি বাবা সম্পর্কে, আর সেই সাথে মা সম্পর্কে।
এক এক দেশে ভাষা গত কারণে বাবা শব্দটি বদলায় উচ্চরণে, প্রকাশ ভঙ্গিতেও কিন্তু আমাদের বাংলা ভাষায় বাবা এক চিরন্তন শব্দ যার অর্থ, প্রকাশ, অনুভূতি এক ও অভিন্ন।
বাবা শব্দটি একটি পরিবারের বট বৃক্ষ, পরিবারের সকল সদস্যকে শুধু ছায়া দিয়ে নিয়ে নয় একটি উচ্চ মাত্রার পরিচয়ে একটি ফুলের মত পরিবারের সদস্যদের পরিস্ফুটিত করে কঠোর একটি নিরাপত্তা দিয়ে আমাদের সাজিয়ে রাখেন যেন পরিবারটি একটি ফুলের বাগান। তারপরও যদি কখনও কোন পরিবার থেকে কোন কারণে বাবা শূণ্য হয়ে পড়েন, তখনও কেউ আর বাবার সেই আসনে দখল নিতে পারে না, অদৃশ্যে থেকে তিনি পরিবারে সকল নির্দেশনা দিয়ে থাকেন, সকলে স্মরণে রাখেন প্রতি ক্ষণে যে বাবা সবই দেখছেন তারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে চলাচল করেন।
সন্তানের কাছে বাবা পথপ্রদর্শক, সকল সময়ের পরামর্শদাতা, ভালো-মন্দের বিচারক, যে কোন আবাদার পূরণের ক্ষেত্রে বড় পারিবারিক নেতা, সন্তানের কাছে বাবা বন্ধু।
কিন্তু সবচেয়ে অশিক্ষিনীয় দিকটি হলো অথবা যেখান থেকে আমরা শিক্ষা নিতে প্রায় ব্যর্থ হই সেটি হলো বাবার জীবন দশায় বাবার প্রকৃত মূল্য বা মর্ম অনুধাবন !
কারও জীবনে বাবা শূণ্য হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বাবার প্রকৃত মূল্য বা মর্ম অনুধাবনে আসে, তখন আর আমাদের তেমন কিছু করার থাকে না শুধু মাত্র নিজেকে গুছিয়ে নেওয়া ছাড়া, গুছিয়ে নেওয়ার পরও শূণ্যতা বিরাজ করে দসর্বত্র, অনেক কিছু থাকার পরও অনেক কিছু যেন নেই যা কখনও পুরণ হওয়ার নয়। বার বার বাবাকে খুঁজে বেরানো চেষ্টা, কখনও হাজারও মানুষের ভীড়ে, বহু দূর থেকে বাবা যেন আসছে অথবা দূর দিয়ে বাবা হেঁটে যাচ্ছেন আপন মনে। কখনও কখনও রাতের আকাশে তারাদের মেলায় বাবাকে দেখে নেওয়া।
যুগের তালে আমাদের সমাজেও পরিবর্তন আসছে, পূর্বের যৌথ পরিবার ভেঙ্গে এখন একক পরিবারের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে, যখন বেশ দ্রুত সন্তানেরা স্বাবলম্বী হচ্ছে আয় উপার্জনের ব্যবস্থা হয়ে যাচ্ছে তখন তারা কর্ম-স্থলের প্রয়োজনে হোক অথবা ব্যক্তিগত প্রয়োজন বোধ থেকে তারা মূল পরিবার থেকে আলাদা হয়ে ছোট পরিবার গড়ে তোলা সেই সাথে বাবা-মা হয়ে পড়েন সম্পূর্ণ একা, শুরু হয় তাদের একাকিত্তের জীবন।
একদিন যে বাবা একটি পরিবারের বট বৃক্ষ হয়ে ছিলেন, পরিবারের সকল সদস্যকে শুধু ছায়া দিয়ে একটি উচ্চ মাত্রার পরিচয়ে একটি ফুলের মত পরিবারের সদস্যদের পরিস্ফুটিত করে কঠোর একটি নিরাপত্তা দিয়েছিলেন, জীবনের শেষ বেলায় বার্ধক্যে এসে সেই মানুষটিই হয়ে পড়েন সংসারে অপ্রয়োজনীয়।
সন্তানের জীবনে বড় সৌভাগ্য হচ্ছে বাবার ছায়ায় চলাচল করা, বাবার শাসন-আদরের সীমানায় বসবাস করা। বাবাকে সঠিক মর্যদায় রেখে একটি পরিবারের ভিত্তি রচনাই একটি শুদ্ধ পরিবার, শুদ্ধ সমাজ, শুদ্ধ দেশ, শুদ্ধ বিশ্ব গড়ে তোলা
তারিখ: জুন ১৭, ২০১৮
ছবি নেট থেকে।
রেটিং করুনঃ ,