রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নয়জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়েছে। আসামিদের সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট রাতে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাসায় নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন বার্নিকাট। সেখানে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে করা হয়েছে এমন সন্দেহে সেদিন এ হামলার ঘটনা ঘটে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির মোহাম্মদপুর জোনাল টিমের পরিদর্শক মো. আবদুর রউফ সম্প্রতি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ঘটনার প্রায় আড়াই বছর পর এ অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হলো।
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের ওই ঘটনার সময়ে সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সরকারবিরোধী নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছিল। ঘটনার সময় তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বাসায় নৈশভোজে অংশ নেন। এসময় গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনও সেখানে যান। ড. কামাল হোসেন ও সুজন সম্পাদক বদিউল আলম প্রায়ই সরকারের নানামুখী কঠোর সমালোচনা করেন। তারা দেশি-বিদেশি মিডিয়া ও সংস্থার কাছে সরকারবিরোধী বিরূপ মন্তব্য দিয়ে থাকেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, সুজন সম্পাদকের বাসায় ওই ব্যক্তিরা অবস্থান করে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করছেন মর্মে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতাকর্মীরা বেআইনিভাবে জনতাবদ্ধ হয়ে গাড়িতে ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এছাড়া আসামিরা সুজন সম্পাদকের বাসাতেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জানালার গ্লাস ভাঙচুর করেন। পাশাপাশি সুজন সম্পাদক, তার স্ত্রী ও ছেলেকে জীবননাশের হুমকিও দেন তারা।
চার্জশিটভুক্ত নয় আসামি হলেন, ফিরোজ মাহমুদ, নাইমুল হাসান, মীর আমজাদ হোসেন, মো. সাজু ইসলাম, রাজিবুল ইসলাম রাজু, শহিদুল আলম খান কাজল, তান্না ওরফে তানহা ওরফে মুজাহিদ আজমি তান্না, সিয়াম, অলি আহমেদ ওরফে জনি।
এছাড়া ওই হামলার ঘটনায় আরও ১০ জন জড়িত থাকার প্রমাণ মিললেও তাদের ঠিকানা না পাওয়ায় চার্জশিটভুক্ত করা হয়নি। এতে ১৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। আদালত সূত্র জানিয়েছে, চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে ছয়জন গত সপ্তাহে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন।
মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ডিবির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি গোলাম মোস্তফা রাসেল সমকালকে বলেন, এজাহারে কোনো আসামির নাম উল্লেখ ছিল না। নিবিড় তদন্তে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়। তাদের মধ্যে নয়জনের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়।
তবে এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি সমকালকে বলেন, সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আমার গৃহের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এটা আমার মৌলিক অধিকার। আমার ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে আক্রমণ চালিয়ে আমার মৌলিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে। যারা এটা করেছে, তারা চরম অপরাধ করেছে। ওই আক্রমণের ভয়াবহ পরিণতি হতে পারত।
ঘটনার সময় বদিউল আলমের বাসায় তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট, ড. কামাল হোসেন ছাড়াও তার স্ত্রী হামিদা হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তখন রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলছিল।
সূত্র:সমকাল
তারিখ: মার্চ ০৫, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,