লেখক:হাসান ফেরদৌস।
জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে ও বাইরে যে আশার সঞ্চার হয়েছিল, দায়িত্ব পালনের এক বছর শেষে তার অনেকটাই মিইয়ে এসেছে। সর্বশেষ জাতীয় জনমত জরিপ অনুসারে দেশের মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষ তাঁর কাজে সন্তুষ্ট। ৪৬ শতাংশ মানুষ মনে করেন তিনি ব্যর্থ। তুলনা হিসেবে মনে করা যায়, ঠিক এক বছরের মাথায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনসমর্থন ছিল ৪৪ শতাংশ।
একে যদি বাইডেনের কর্মক্ষমতা ও অগ্রগতির ‘রিপোর্ট কার্ড’ বলি, তাহলে বিস্মিত হতে হয়। কারণ, গত এক বছরে তাঁর প্রশাসন যে সাফল্য অর্জন করেছে, সমসাময়িক কোনো প্রেসিডেন্টের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। কোভিড মোকাবিলায় তাঁর প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে। ক্ষমতা গ্রহণের সময় যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ২০ লাখ মানুষ টিকা গ্রহণ করেছিলেন; গত এক বছরে সে সংখ্যা বেড়ে ২১ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে তাঁর প্রশাসন বিনা মূল্যে বাড়িতে কোভিড পরীক্ষা ও টেকসই মাস্ক বিলির কাজ শুরু করেছে। রিপাবলিকান বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রায় তিন ট্রিলিয়ন ডলারের কোভিড প্রণোদনা আইন ও অবকাঠামো আইন পাসে তিনি সক্ষম হয়েছেন। এর ফলে অর্থনীতিতে যে স্থবিরতা এসেছিল, তা শুধু কাটিয়ে ওঠা গেছে তা-ই নয়, ৬০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সম্ভব হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। শিশু দারিদ্র্য প্রায় ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
গত বুধবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের এক বছরের সাফল্যের খতিয়ান দিতে গিয়ে বাইডেন বলেছেন, এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বিপুল অগ্রগতি অর্জন করেছে।
বাইডেনের ব্যর্থতার পরিমাণও কম নয়। কোভিড এখনো একটি প্রধান সমস্যা, তাঁর প্রশাসনের বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্তের কারণে নাগরিক জীবনে ভোগান্তি বেড়েছে, কোভিড টিকার ব্যাপারে অবিশ্বাস ও অসন্তোষ বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার কারণে নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। একই কারণে মুদ্রাস্ফীতি এখন রেকর্ড পরিমাণ, ফলে মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। বৈদেশিক সম্পর্ক প্রশ্নেও বাইডেনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বগৌরব ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। আফগানিস্তান থেকে তড়িঘড়ি সৈন্য প্রত্যাহারের ফলে তিনি সবার ঠাট্টার পাত্র হয়েছেন। চীনের সঙ্গে উত্তেজনা হ্রাসের বদলে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউক্রেন প্রশ্নে রাশিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে তিনি নিজ দেশ, সঙ্গে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোকে এখন আরেক সামরিক সংঘর্ষের পথে নিয়ে এসেছেন। অন্য কথায়, বাইডেনের সাফল্যের গ্লাস যদি এক ভাগ পূর্ণ হয় তো বাকি তিন ভাগই শূন্য।
পশ্চাতে ট্রাম্পের প্রচ্ছায়া
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি ট্রাম্পের সৃষ্ট রাজনৈতিক বিভক্তি মেটাতে উদ্যোগ নেবেন। রিপাবলিকান পার্টির সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে তাঁর কোনো চেষ্টাই সফল হয়নি। বস্তুত, আগের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে এখন নীল ও লাল, অর্থাৎ ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান—এই দুই ভাগের বিভক্তি আরও বেড়েছে। ট্রাম্প ও তাঁর অনুগত রিপাবলিকান পার্টি এখনো বাইডেনের নির্বাচনী জয়কে বৈধতা দেয়নি। রিপাবলিকান পার্টির প্রতি ১০ জনের ৮ জন এখনো বিশ্বাস করেন, বাইডেন নন, গত নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন ট্রাম্প।
এই অবস্থায় শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যবস্থাই নয়, এর গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। এখন অনেকেই খোলামেলা বলছেন, দুই দলের এই রাজনৈতিক বিভক্তি অদূর ভবিষ্যতে গৃহযুদ্ধের সূচনা করবে।
এই বৈকল্যের জন্য বাইডেন দায়ী নন, তিনি কেবল ভুক্তভোগী। কিন্তু কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, রিপাবলিকানদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টার বদলে তিনি যদি গোড়া থেকেই শুধু ডেমোক্র্যাটদের নিয়ে অগ্রসর হতে চেষ্টা করতেন, তাহলে তাঁর সাফল্যের অধিক সম্ভাবনা ছিল। নির্বাচনী বিজয়ের পর যে ‘মধুচন্দ্রিমা’ সময় থাকে, তাকে ব্যবহার করে তিনি কোভিড প্রণোদনা ও অবকাঠামো আইন পাস করতে সক্ষম হন। একই পথে তিনি যদি তাঁর ‘বিল্ড ব্যাক বেটার’ নামে পরিচিত জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হতেন, তাহলে বুদ্ধিমানের কাজ হতো।
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন এই ব্যর্থতার দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নেন। রিপাবলিকান পার্টি যে এমন একরোখাভাবে ট্রাম্পের কথায় ওঠবস করে তাঁর বিরোধিতা করবে, সে কথা তিনি ভাবেননি। এর আগে বারাক ওবামার আট বছরে রিপাবলিকান পার্টির ব্যবহার ভিন্ন কিছু ছিল না। সে অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণে ব্যর্থতার জন্য এখন তিনি শুধু নিজের হাত কামড়াতে পারেন, তার বেশি কিছু নয়।
নিজ দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব
২০২০ সালে বাইডেনের বিজয়কে অনেকেই মার্কিন প্রগতিশীল রাজনীতির বিজয় বলে অভিনন্দিত করেছিলেন। তিনি যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, অনেকের চোখে তা ছিল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ও জনসনের জনকল্যাণমুখী রাজনীতির সম্প্রসারণ। ওয়াশিংটন পোস্ট-এর ভাষ্যকার জেফ স্টাইনের মতে, এই নির্বাচনকে ডেমোক্রেটিক পার্টি যুক্তরাষ্ট্রকে ঢেলে সাজানোর একটি ম্যান্ডেট ভেবে উল্লসিত হয়েছিল। প্রণোদনা ও অবকাঠামো আইন পাসের ভেতর দিয়ে তেমন যুগান্তকারী পরিবর্তনের একটি স্পষ্ট রূপরেখা তৈরিও হয়েছিল।
কিন্তু ডেমোক্রেটিক পার্টি অভিন্ন মতধারার দল নয়, এতে প্রগতিশীল ও মধ্যপন্থী—এই রকম দুটি স্পষ্ট ধারা রয়েছে। নাগরিক কল্যাণ থেকে জলবায়ুসংকট, মানবাধিকার থেকে ভোটাধিকার—এই সব প্রশ্নে এই দুই অংশের মতভেদ দ্রুত প্রকাশ্যে চলে আসায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।
কিন্তু প্রাথমিক উল্লাস থেমে যেতে না যেতেই ডেমোক্রেটিক পার্টির অন্তর্দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রিপাবলিকান প্রতিরোধের মুখে ৫০-৫০ সদস্যে বিভক্ত চলতি সিনেটে নিজ সব সদস্যের সমর্থন ছাড়া বাইডেনের পক্ষে কোনো আইন পাসের সুযোগ নেই। কিন্তু ডেমোক্রেটিক পার্টি অভিন্ন মতধারার দল নয়, এতে প্রগতিশীল ও মধ্যপন্থী—এই রকম দুটি স্পষ্ট ধারা রয়েছে। নাগরিক কল্যাণ থেকে জলবায়ুসংকট, মানবাধিকার থেকে ভোটাধিকার—এই সব প্রশ্নে এই দুই অংশের মতভেদ দ্রুত প্রকাশ্যে চলে আসায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বাইডেনের ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও সে বিভেদ মেটানো সম্ভব হয়নি। মাত্র দুজন মধ্যপন্থী বা রক্ষণশীল সিনেটরের আপত্তির কারণে শুধু যে বাইডেনের ‘বিল্ড ব্যাক বেটার’ কর্মসূচি প্রত্যাখ্যাত হয় তা-ই নয়, ভোটাধিকার সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগও ভেস্তে যায়। বিরোধী রিপাবলিকান পার্টি অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে ইতিমধ্যে এমন সব আইন প্রণয়নে উদ্যোগী হয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে ২০২২ ও ২০২৪ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষে নির্বাচনী বিপর্যয় এড়ানো অসম্ভব হবে। সে বিপদ জানা সত্ত্বেও ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার সিনেটর জো ম্যানশিন ও অ্যারিজোনার সিনেটর ক্রিস্টেন সিনেমার আপত্তির কারণে ভোটাধিকার সংস্কার আইনটি এখন পর্যন্ত গৃহীত হয়নি।
এই ব্যর্থতার জন্য বাইডেন দায়ী নন, তাঁর দলের আদর্শগত বিভক্তি দায়ী। কিন্তু এ কথাও অস্বীকার করা যাবে না, দলের নেতা হিসেবে নিজ সদস্যদের তিনি বাগে আনতে পারেননি। কেউ কেউ, যেমন রিপাবলিকান কৌশলবিদ এলিস স্টুয়ার্ট বলেছেন, বাইডেন গোড়া থেকে যেভাবে দলের প্রগতিশীল অংশের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েন, তাতে দলের মধ্যপন্থী ও রক্ষণশীল সদস্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। স্টুয়ার্টের কথায়, বাইডেনের দায়িত্ব ছিল দেশকে ঐক্যবদ্ধ করা। তা না করে তিনি প্রগতিশীলদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এর ফলে তাঁর নিজ দলই বিভক্ত হয়ে পড়ে।
কোনো সন্দেহ নেই, ডেমোক্রেটিক পার্টির অন্তর্দ্বন্দ্ব মেটাতে ব্যর্থ হলে বাইডেনের পক্ষে নিজের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন অসম্ভব হবে। রিপাবলিকানদের কেউ কেউ এখনই ‘বাইডেনের ভবিষ্যৎ অন্ধকার’ বলে তালি বাজানো শুরু করেছেন।
বৈদেশিক নীতি নিয়ে বিপাকে বাইডেন
শুধু যে অভ্যন্তরীণ প্রশ্নে বাইডেন বিপাকে পড়েছেন তা নয়, বৈদেশিক প্রশ্নেও তাঁকে খাবি খেতে হচ্ছে। আফগানিস্তানে তালেবানের হাতে পর্যুদস্ত হয়ে যেভাবে মার্কিন সৈন্যদের পালাতে হয়, তাতে বিশ্বের চোখে এই পরাশক্তির মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। যদিও বাইডেন শুধু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনুসৃত নীতি বাস্তবায়ন করেন, কিন্তু পরাজয়ের লাঞ্ছনা তাঁকেই সইতে হয়।
বাইডেনের জন্য অপর দুই কাঁটা চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক। বারাক ওবামার সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া নয়, চীন—এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২০১২ সালেই ওবামা ঘোষণা করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ, অতএব, তাকে প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে নিজ স্বার্থরক্ষায় সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। অন্য কথায়, একসময় সোভিয়েত ইউনিয়ন যেমন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বৈদেশিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল, একুশ শতকে এসে সে স্থান গ্রহণ করল চীন। এই অঞ্চলে চীনের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার কর্মসূচির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে নতুন প্রশান্ত মহাসাগরীয় জোট বেঁধেছে। বাণিজ্য প্রশ্নে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিবাদ ও উত্তেজনা আগে থেকে লেগেছিল। এখন চীনকে সামরিকভাবে ঠেকানোর পরিকল্পনা নেওয়ায় এই দুই পরাশক্তি নতুন বিবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে।
রাশিয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথাও কমেনি। ইউক্রেনে রাশিয়ার অব্যাহত হস্তক্ষেপ ঠেকাতে বাইডেন প্রেসিডেন্ট পুতিনকে কঠোর ভাষায় সাবধান করে দিয়েছেন। মার্কিন মহল থেকে বলা হচ্ছে, যেকোনো সময় রাশিয়া ইউক্রেনের দনবাস এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষে সামরিক হামলা চালাতে পারে। জবাবে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘কঠোরতম অর্থনৈতিক ব্যবস্থা’ নেবে বলে হুঁশিয়ার করেছে। কিন্তু তার বেশি কিছু নয়। রাশিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো আগ্রহ অথবা ক্ষমতা এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের নেই। ইতিপূর্বে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, তাতে পুতিনের কেশাগ্র ভিজেছে বলে মনে হয় না। পশ্চিমা সামরিক জোটেরও ইউক্রেনকে সামরিকভাবে সাহায্য করা ছাড়া আর কিছু করার আগ্রহ বা ক্ষুধা আছে বলে মনে হয় না। ফলে, রাশিয়া যদি আজ বা দুই দিন বাদে ইউক্রেন আক্রমণ করে বসে, বাইডেনকে হয়তো আরও একটি ব্যর্থতার নিন্দা মেনে নিতে হবে।
ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেই বসেছেন, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ২০২১ সাল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ছিল ব্যর্থতার বছর। ২০২২ সালও তাঁর ভিন্ন কিছু হবে না।
অলৌকিক হস্তক্ষেপের অপেক্ষায়
ভাবা হয়েছিল, প্রথম বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে বাইডেন তাঁর অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি ঢেলে সাজাবেন। বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে তেমন একটি সুযোগ তাঁর ছিল। কিন্তু সে সুযোগের সদ্ব্যবহার তিনি করেননি। কোভিড অথবা মুদ্রাস্ফীতি প্রশ্নে তাঁর ব্যাখ্যা মার্কিনদের আশ্বস্ত করেনি, বরং উভয় প্রশ্নেই বিভ্রান্তি বেড়েছে। নিজের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে তাঁকে হয় নিজ দলের বিবাদ মেটাতে হবে অথবা মধ্যপন্থী রিপাবলিকান (যেমন সিনেটর মিট রমনি) সদস্যদের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে সে চেষ্টার কোনো ইঙ্গিত তিনি দেননি। প্রস্তাবিত ‘বিল্ড ব্যাক বেটার’ কর্মসূচি কয়েক ভাগে বিভক্ত করে অগ্রসর হওয়ার কথা তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন। কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব, তার কোনো ব্যাখ্যা দেননি।
একই সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন রাশিয়া প্রশ্নে নতুন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছেন। তিনি জানান, ইউক্রেনে অনুপ্রবেশজাতীয় ছোটখাটো ঘটনা
ঘটলে উদ্বেগের কিছু নেই। পরে হোয়াইট হাউস থেকে তাঁর কথার ব্যাখ্যায় বলা হয়, ইউক্রেনে যেকোনো হামলা ঘটলে রাশিয়াকে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার ততক্ষণে হয়ে গেছে। বাইডেনের মুখ ফসকে বলা কথায় উদ্বিগ্ন ইউক্রেনের সরকারি মহল মনে করছে, বাইডেন আসলে রাশিয়াকে হামলা চালানোর ‘সবুজ সংকেত’ পাঠালেন।
দ্বিতীয় বছরে এসে বাইডেনের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ, নিজ নেতৃত্বের ব্যাপারে জনমনে আস্থা বৃদ্ধি। অর্থনীতি ও কোভিড প্রশ্নে নাগরিক অসন্তোষ রিপাবলিকানদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, বাইডেনের জনসমর্থনে ধসের ফলে ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ‘লাল ঢেউ’ ঠেকানো অসম্ভব হবে। ডেমোক্র্যাটরা অবশ্য আশা করছেন, এখনো অবস্থা সামাল দেওয়া সম্ভব। ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডের হস্তক্ষেপের ফলে মুদ্রাস্ফীতি দ্রুত বাগে চলে আসবে। নিজ গৃহে বসে সংক্রমণ পরীক্ষার যে ব্যাপক পরিকল্পনা বাইডেন নিয়েছেন, তার ফলে কোভিডের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। সবচেয়ে বড় কথা, নিজেদের মধ্যে মতভেদ কাটিয়ে তাঁরা ‘বিল্ড ব্যাক বেটার’ ও ভোটাধিকার আইন পাসে সক্ষম হবেন।
কিন্তু ‘ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ’ ছাড়া এর কোনোটাই যে রাতারাতি ঘটবে না, এ কথাও তাঁরা মানেন।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ জানুয়ারী ২১, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,