Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

বাইডেনের ‘গণতন্ত্র সম্মেলনে’ বাংলাদেশের অনুপস্থিতি বিস্ময়কর (২০২১)

Share on Facebook

লেখক:হাসান ফেরদৌস।

২০২১ সালের ১০ মার্চ তারিখে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় খ্যাতনামা সাংবাদিক ও কলাম লেখক নিকোলাস ক্রিস্টফ লিখেছিলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যদি যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্র্য কমাতে চান, তাহলে তাঁর উচিত হবে বাংলাদেশের পথ অনুসরণ করা। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ ঠিকই, কিন্তু এখনো এ দেশের মানুষের একটি বড় অংশ দারিদ্র্যপীড়িত। বাইডেন সে অবস্থার পরিবর্তন চান। একসময় বাংলাদেশ ভীষণ গরিব ছিল। হেনরি কিসিঞ্জার দেশটিকে ‘বাস্কেট-কেস’ বলে তাচ্ছিল্য করেছিলেন। ১৯৯১ সালে ভয়াবহ সাইক্লোনের পর ক্রিস্টফও লিখেছিলেন, বাংলাদেশে শুধু একটি জিনিসের অভাব নেই, আর তা হলো, দুর্ভাগ্য।

‘আমি ভুল বলেছিলাম’, ক্রিস্টফ তাঁর কলামে লিখেছেন। ‘গত তিন দশকে বাংলাদেশ অভাবিত অগ্রগতি অর্জন করেছে। হতে পারে দেশটি একসময় হতাশার প্রতীক ছিল। কিন্তু এখন সে বিশ্বের সবাইকে শেখাতে পারে, অগ্রগতি কীভাবে অর্জন করতে হয়।’ (বিস্তারিত দেখুন )

এটা আট মাস আগের কথা। মাত্র গত মাসে ঢাকায় এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী মন্ত্রী কেলি কেইডারলিং। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ সম্বন্ধে যে পুরোনো ধারণা ছিল, যুক্তরাষ্ট্র সেখান থেকে সরে এসেছে। এই নতুন ধারণার আলোকে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির সঙ্গে পরবর্তী ৫০ বছর নতুন সম্পর্কের প্রতিষ্ঠা চায়। (বিস্তারিত দেখুন )

যে বাংলাদেশ সম্বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এত উঁচু ধারণা, যার কাছ থেকে খোদ প্রেসিডেন্ট বাইডেন দারিদ্র্যবিমোচনে পরামর্শ নিতে পারেন বলে নিকোলাস ক্রিস্টফের মতো নামজাদা সাংবাদিক রায় দিতে পারেন, তাকে কেন যুক্তরাষ্ট্র আয়োজিত ‘গণতন্ত্রের পক্ষে শীর্ষ বৈঠকে’ আমন্ত্রিত দেশের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হলো?

প্রশ্নটা আমি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কাছে করেছিলাম। জবাবে তারা আমাকে এক প্রথামাফিক লিখিত জবাবে জানিয়েছে, বাইডেনের আহূত এই শীর্ষ বৈঠকের লক্ষ্য ‘গণতান্ত্রিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত ও গণতন্ত্রের পথে আগুয়ান এমন আঞ্চলিক ও আর্থসামাজিকভাবে মিশ্র দেশগুলোকে’ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র আমাকে আশ্বাস দিয়ে বললেন, এ ব্যাপারে এটাই শেষ বৈঠক নয়, ২০২২ সালে যে বৈঠক হবে তাতেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সরকার অর্থপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ পাবে। তার এই জবাবে খুশি না হয়ে আমি নাছোড়বান্দার মতো জিজ্ঞাসা করলাম, বাংলাদেশ তো আগুয়ান গণতান্ত্রিক দেশ, তাকে কেন ডাকা হয়নি? উত্তরে বলা হলো, এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না।

কেন বাংলাদেশ আমন্ত্রিত নয়
যে ১১০টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তার মধ্যে কে কতটা গণতান্ত্রিক, তার একটি পরিসংখ্যানগত হিসাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি ইনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস। তাদের হিসাবে, আমন্ত্রিত ৬৯ শতাংশ দেশ ‘মুক্ত’; (অর্থাৎ গণতান্ত্রিক), অবশিষ্ট ৩১ শতাংশ দেশ হয় আংশিক মুক্ত বা মোটেই মুক্ত নয়। এই থিঙ্ক ট্যাংকের মতে, আমন্ত্রিতদের মধ্যে আটটি দেশ রয়েছে, যাদের গণতান্ত্রিক বলা কঠিন। দেশগুলো হলো—অ্যাঙ্গোলা, কঙ্গো, ইরাক, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, সার্বিয়া ও জাম্বিয়া।

বাংলাদেশ যে আমন্ত্রিত দেশগুলোর তালিকায় নেই, সেটিও বিস্ময়কর। বাংলাদেশের ভেতরে তো বটেই, বাংলাদেশের বাইরেও বিষয়টি আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে। প্রভাবশালী ব্লুমবার্গ ওয়েব পত্রিকার কলাম লেখক মিহির শর্মা বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না করাকে বড় ধরনের ‘কূটনৈতিক ভুল’ বলে উল্লেখ করেছেন।

পাকিস্তান আমন্ত্রিত হয়েছে, অথচ বাংলাদেশ নেই। এর পেছনে কী যুক্তি থাকতে পারে? শ্রীলঙ্কাও আমন্ত্রিত দেশের তালিকায় নেই। গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পাকিস্তানের তুলনায় এদের খামতি কোথায়? মিহির শর্মা মনে করিয়ে দিয়েছেন, ফ্রিডম হাউস, যারা প্রতিবছর কোন দেশ কতটা গণতান্ত্রিক তার হিসাব দিয়ে থাকে, তাদের সবশেষ প্রতিবেদনে ১০০-এর মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৩৯ পয়েন্ট, আর পাকিস্তান ৩৭। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, যারা প্রতিবছর একটি ‘ডেমোক্রেসি ইন্ডেক্স’ প্রকাশ করে থাকে, তাতে বাংলাদেশের স্থান ৭৬, আর পাকিস্তানের ১০৫। অন্য কথায়, উভয় হিসাবেই পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ।

মিহির শর্মা অনুমান করেছেন, বাংলাদেশে গত বছরে অনুষ্ঠিত নির্বাচন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের চোখে সুষ্ঠু ছিল না। কিন্তু পাকিস্তানে সেনা তত্ত্বাবধানে যে নির্বাচন হলো, সেটা কি খুব সুষ্ঠু ছিল? সে সময় স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে বলা হয়েছিল, পাকিস্তানে ‘ভোটের আগে সামরিক ও গোয়েন্দা দপ্তরগুলোর হস্তক্ষেপ ভারসাম্যহীন অবস্থার সৃষ্টি করে।’

‘চীনা তাস’
অন্য একটি সম্ভাব্য কারণের কথা আমাকে বলেছেন ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশীয় বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান। তিনি মনে করেন, এই শীর্ষ বৈঠক প্রবল রকম রাজনৈতিক, যেখানে গণতন্ত্রয়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতি করেছে, এমন অনেক দেশ বাদ গেছে। আবার গণতন্ত্র থেকে পিছু হটেছে, এমন দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

কুগেলম্যানের ধারণা, আসল ব্যাপার হলো, যুক্তরাষ্ট্র এমন সব দেশকে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছে, যাদের সঙ্গে সম্পর্ক পোক্ত করতে সে বিশেষভাবে আগ্রহী। ভারতকে ডাকা হয়েছে, কারণ, সে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদার। পাকিস্তানকে আমন্ত্রণ জানানোর কারণ, যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে, তালেবান-নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানে, যারা এই সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়নি, সেখানে ইসলামাবাদ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অনুকূল ভূমিকা পালন করবে।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্য যে দুটি দেশ আমন্ত্রিত হয়েছে, তারা হলো নেপাল ও মালদ্বীপ। সাম্প্রতিক সময়ে বাইডেন প্রশাসন এই দুই দেশের ব্যাপারে বেশ উৎসাহী হয়ে উঠেছে। এরা ভারতের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন হলেও সাম্প্রতিক সময়ে চীনের ব্যাপারে খুব আগ্রহী। চীনের খপ্পর থেকে এদের রক্ষা করা ওয়াশিংটনের আরেকটি প্রধান কূটনৈতিক লক্ষ্য।

মাইকেলের কথায় যুক্তি আছে, কিন্তু তাতে পুরো সত্যটি ধরা পড়েনি। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশও চীনের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সে ক্রমেই চীনের দিকে ঝুঁকছে। এই নীতিকে বলা হয়েছে ‘হাসিনার চীনা তাস’। বাংলাদেশ যাতে ভারত ছেড়ে চীন বেছে না নেয় সে জন্য যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিও মনোযোগী, এ কথা ভাবার কারণ রয়েছে। কেলি কেইডারলিং গত মাসে তাঁর ঢাকা সফরের সময় সেই অ্যাজেন্ডা নিয়েই এসেছিলেন। ফলে কুগেলম্যানের চীনা যুক্তি পুরোপুরি ধোপে টেকে না।

ভারতীয় দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার কূটনীতিবিষয়ক বিভাগীয় সম্পাদক ইন্দ্রানী বাগচি একটি ভিন্ন কারণের কথা বলেছেন। গত দুটি নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি পুরোপুরি অংশ নেয়নি। বিষয়টি মার্কিনিদের নজর এড়ায়নি। অন্য কথায়, গণতন্ত্রের প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সন্দেহ রয়েছে। অন্য আরেকটি কারণ, মার্কিন সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে থাকতে পারে বলে পত্রিকাটি মনে করে। ‘এটি সুপরিচিত যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে।’ ইন্দ্রানী বাগচি এর বেশ খোলাসা করে বলেননি, তবে অনুমান করি তিনি স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই সিদ্ধান্তের পেছনে বিএনপির প্রভাব থাকতে পারে বলে ভাবছেন। (দেখুন )

সম্ভাবনার অপচয়
এই সম্মেলন কেন, তার ব্যাখ্যা দিয়েছে হোয়াইট হাউস। নির্বাচনী প্রচারণার সময়েই জো বাইডেন পৃথিবীর সর্বত্র গণতান্ত্রিক প্রাতিষ্ঠানিকতা অর্জনে জোরদার ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরে যুক্তরাষ্ট্র নিজে যেমন অধিকতর কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছিল, তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও সে একনায়ক ও কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলোকে সমর্থন জানিয়েছিল।

বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নির্বাচিত হলে সে নীতির পরিবর্তন হবে। এই শীর্ষ বৈঠক সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের অংশ হিসেবেই আয়োজিত হচ্ছে। হোয়াইট হাউসের ভাষ্য অনুযায়ী এর লক্ষ্য তিনটি—কর্তৃত্ববাদ ঠেকানো, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং মানবাধিকারের সুরক্ষা। সম্মেলনের মূলমন্ত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাইডেনের একটি উক্তি ব্যবহার করেছে, যেখানে তিনি বলেছেন, আপনা-আপনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। এর জন্য লড়াই করতে হয়, গণতন্ত্রকে পোক্ত করতে হয়, তার নবায়ন করতে হয়।

একদম সত্যি কথা। আর সত্যি কথা বলেই এই সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ জরুরি ছিল। যেসব দেশে ইতিমধ্যেই গণতান্ত্রিক সুশাসন পূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিকতা পেয়েছে, এই সম্মেলনে তাদের পাওয়ার খুব বেশি কিছু নেই। বরং সেসব দেশ, যারা এখনো গণতান্ত্রিক প্রাতিষ্ঠানিকতা অর্জনের জন্য অব্যাহত লড়াইয়ের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, এই সম্মেলন তাদের জন্য অধিক অর্থপূর্ণ হতে পারে। একে অপরের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা আদান-প্রদানের মাধ্যমে তারা জানতে পারবে, কে কীভাবে গণতন্ত্রের জন্য সেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

এই শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ না পাওয়া, কারও কারও চোখে বাংলাদেশের জন্য মৃদু তিরস্কার। এই সম্মেলনে অংশগ্রহণের ফলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র আরও পোক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ত। সে সম্ভাবনা ব্যবহার না করে যুক্তরাষ্ট্রও যে একটি সুযোগ হারাল, সে কথাই বা কী করে অস্বীকার করি।

***হাসান ফেরদৌস প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ ডিসেম্বর ০৭, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ