Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

বাংলাদেশ চীন ও ভারতের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে পারছে না (২০২৪)

Share on Facebook

লেখা: মো. তৌহিদ হোসেন।

চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ৮ জুলাই চীন গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে অবশ্য এক দিন কমিয়ে ১০ জুলাই ফিরে আসেন তিনি। সফর সংক্ষিপ্ত করার কারণ নিয়ে দুই রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব। সে বিতর্কে না গিয়ে বরং নজর দেওয়া যাক গুরুত্বপূর্ণ এই সফরে বাংলাদেশের প্রাপ্তি বা অপ্রাপ্তিতে।

বেইজিংয়ে বাংলাদেশ ও চীন ২১টি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি ঘোষণাও এসেছে। সংখ্যার দিক থেকে এটা বেশ উৎসাহব্যঞ্জক, কিন্তু এর কোনোটাই বড় কিছু নয়। সফর শেষে ২৭ অনুচ্ছেদসমৃদ্ধ এক যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতির অধিকাংশজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে পারস্পরিক সমর্থন জ্ঞাপন, উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ বজায় রাখা, বিভিন্ন প্রকল্প সমাপনে সন্তোষ প্রকাশ, ব্যবসা-বাণিজ্যে সহযোগিতা আরও গভীর করা, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে চীনা সহযোগিতার আশ্বাস, কৃষি ও পানি ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা বাড়ানো, ব্লু ইকোনমি সহযোগিতা, এশিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় সহযোগিতা ইত্যাদি। এসবের বেশির ভাগই চলমান ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে তেমন গুরুত্ব বহন করে না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রয়োজনে চীন আরাকান আর্মির সঙ্গেও কথা বলবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সত্যিই যদি তা-ই হয় এবং চীন আন্তরিকভাবেই এ সমস্যার সমাধান চায়, তাহলে এটাকে একটা বড় অর্জন বলতে হবে
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন সফর সফল হয়েছে। তাহলে তো বলতে হয় যে প্রধানমন্ত্রীর সফরে এটুকুই প্রত্যাশা ছিল এবং প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। সাধারণভাবে অবশ্য তা মনে করা হয় না। আরও অনেক প্রত্যাশা ছিল এই সফরে, যা পূর্ণ হয়নি—এমনটাই প্রচলিত বিশ্বাস। যেকোনো সফর শেষে সরকারি বিবৃতিতে সাফল্যের কথা বলারই নিয়ম এবং আমি মনে করি, ঐতিহ্যগত এই নিয়ম পালন করতেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেছেন। সফরে তেমন বড় কোনো প্রাপ্তি নেই, তা তিনি বিলক্ষণ জানেন।

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকে মূল্যায়ন করতে হলে তাঁর কয় দিন আগের ভারত সফরের সঙ্গে মিলিয়ে বিবেচনা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে দুই নেতার একান্ত বৈঠকে কী কথাবার্তা হয়েছিল তা আমরা জানি না, জানার কথাও নয়। তবে এটা নিশ্চিতভাবেই অনুমান করা যায়, আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের ব্যাপারে ভারতের যা কিছু উদ্বেগ, তা ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কিছু কথায়ও তার আভাস মেলে। তিনি বলেছেন, চীন সফরের ব্যাপারে ভারতের কোনো আপত্তি নেই। এই অনাপত্তি জ্ঞাপনের প্রক্রিয়ায় ভারত অবশ্যই নিশ্চিত হতে পেরেছে যে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ এমন কিছু করবে না, যাতে ভারতের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়।

আরও পড়ুন
চীনের ১০০ কোটি ইউয়ানকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই
১৪ জুলাই ২০২৪
চীনের ১০০ কোটি ইউয়ানকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই
ইস্যু ছিল মূলত দুটি, যা নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ ছিল। এক. তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প, আর দুই. বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটাতে চীনের অর্থসহায়তা, অর্থাৎ অনুদান বা ঋণ। তিস্তা প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের প্রয়োজন পুরোপুরি উপেক্ষা করে বন্ধু ভারত নদীটির সম্পূর্ণ পানি আটকে দেওয়ায়।

এই প্রকল্প নিয়ে চীন বেশ উৎসাহী ছিল প্রথম থেকেই এবং চীনা রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেছিলেন যে বাংলাদেশের নির্বাচনের পরপরই এ নিয়ে কাজ শুরু করা যাবে। মাঝে যখন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এসে অপ্রত্যাশিতভাবে প্রকল্পে ভারতের অর্থায়নের প্রস্তাব করেন, তখনই বোঝা যাচ্ছিল যে বিষয়টা ঝুলে গেল। ভারত থেকে ফিরে চীন সফরে যাওয়ার প্রাক্কালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোটামুটি স্পষ্ট করে দেন যে প্রকল্পে ভারতই জড়িত হবে, চীন নয়। এরূপ সিদ্ধান্তে চীনের খুব প্রীত হওয়ার কথা নয়। সোনাদিয়া বন্দরের কথা আশা করি মনে আছে সবার।

দ্বিতীয় ইস্যুতে কোনো সাফল্যই নেই, তা ঠিক বলা যাবে না। আমি অনুমান করেছিলাম, চীন জানে ও বোঝে যে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পক্ষে ভারতের অসন্তোষ উৎপাদন করবে—এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। তারপরও তারা আর্থিক সহায়তা, বিশেষত প্রকল্প অর্থায়নে আগ্রহী হবে তাদের নিজেদের স্বার্থেই। কারণ, প্রদত্ত ঋণ তারা ফেরত পাবে সুদসহ, আর এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো প্রতিযোগিতা ছাড়া উচ্চমূল্যে কাজ পাবে তাদের ঠিকাদারেরাই। বাজেট-সহায়তা দিলেও সে টাকায় পণ্যসামগ্রী কেনা হবে চীন থেকেই।

আমার এই অতি সরল অনুমান সঠিক হয়নি। সফরের বেশ কয় দিন আগে থেকে জোরেশোরেই শোনা যাচ্ছিল যে চীন পাঁচ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ চীনা ইউয়ান বাংলাদেশকে দেবে। অতি আশাবাদী কেউ কেউ তো ২০ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ আসবে, এমনও বলছিলেন। দিন শেষে সহযোগিতার আশ্বাস এল মাত্রই এক বিলিয়ন ইউয়ানের, যা কমবেশি ১৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান। বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার, বর্তমান সংকটের ব্যাপ্তি এবং বৈদেশিক মুদ্রার জরুরি প্রয়োজনের নিরিখে পরিমাণটি নিতান্ত অকিঞ্চিৎকর।

কিন্তু এত হাঁকডাক, সম্পর্কের নতুন উচ্চতা, গেম চেঞ্জার সফর ইত্যাদির পর এমনটি হলো কেন? এর অনেক ভদ্রস্থ ব্যাখ্যা হয়তো তৈরি করা যায়। বাস্তবতা হলো, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে যতই উচ্চমার্গের কথা বলা হোক না কেন, চূড়ান্ত বিচারে এটি একটি দেওয়া-নেওয়ার বিষয়। আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সফরকালে চীনকে দেওয়ার মতো কিছু সঙ্গে করে নিয়ে যাননি আমাদের প্রধানমন্ত্রী, যার বিনিময়ে চীন আগ্রহী হবে বাংলাদেশের প্রয়োজন মেটাতে। চীন বরং দেখেছে যে বাংলাদেশ সদ্যই ভারতকে রেল করিডর দিয়ে এসেছে বিনিময়ে দৃশ্যমান কিছু না পেয়েই। আর ভবিষ্যতে ভারত ও চীন যদি কোনো উত্তপ্ত সংঘাতে জড়ায়, এই করিডর হয়ে উঠতে পারে ভারতের চিকেনস নেক বা শিলিগুড়ি করিডরের বিকল্প।

বলা যেতে পারে যে বাংলাদেশ বরাবর এক চীন নীতিতে অটল, তাইওয়ান ও তিব্বত চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, এ কথা অবিরাম উচ্চারণ করছে। বিষয়টি চীনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সন্দেহ নেই, কিন্তু এটিই যথেষ্ট নয়। চীন দেখতে চাইবে বাংলাদেশ চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে একধরনের ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে। গত দুই সপ্তাহের ঘটনাপ্রবাহ সে রকম ইঙ্গিত দেয় না।

সবকিছুর পরও সম্ভবত একটি ইতিবাচক বিষয় এই সফর থেকে উঠে এসেছে। যৌথ বিবৃতিতে যদিও এভাবে উল্লেখ নেই, পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রয়োজনে চীন আরাকান আর্মির সঙ্গেও কথা বলবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সত্যিই যদি তা-ই হয় এবং চীন আন্তরিকভাবেই এ সমস্যার সমাধান চায়, তাহলে এটাকে একটা বড় অর্জন বলতে হবে। গৃহযুদ্ধ-উত্তর মিয়ানমারে আরাকান আর্মি হবে রাখাইন রাজ্যের বড় নিয়ন্ত্রক এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন তাদের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব হবে না।

***মো. তৌহিদ হোসেন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব।

সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ: জুলাই ১৫, ২০২৪

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ