Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

বাংলাদেশে হিন্দুদের জন্য কতদূর কী করার আছে ভারতের (২০২৪

Share on Facebook

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে গত সাড়ে চার মাসে, ভারতের পক্ষ থেকে বারবার বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করার ব্যাপারে জোরালো আহ্বান জানানো হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একাধিকবার বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন, টেলিফোনে এবং টুইটারে বার্তা দিয়েছেন। এ বিষয়টি ভারত-বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র সচিবদের আলোচনায়ও উঠে এসেছে।

ভারত সরকার তাদের সংসদেও বাংলাদেশে হিন্দুদের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত কয়েক মাসে ভারত সরকারের বিভিন্ন স্তরের বিবৃতিতে বাংলাদেশে হিন্দুদের অবস্থার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ওঠে এসেছে, এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ নিয়ে অক্লান্তভাবে মন্তব্য করেছেন।

ভারতীয় গণমাধ্যমে এবং টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশের হিন্দুদের পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন, আলোচনা এবং তর্কবিতর্ক চলছে। যদিও বাংলাদেশ সরকার এ সমস্ত খবরকে অতিরঞ্জিত বা ‘ফেক নিউজ’ হিসেবে নাকচ করেছে, তবে ভারতের ভেতরে এই প্রতিবেদনগুলো ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সামাজিক মাধ্যমেও বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের প্রসঙ্গ ঘিরে বিষোদগার অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশের হিন্দুদের সুরক্ষা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ এতটাই তীব্র হয়ে উঠেছে যে, এটি দ্রুত ভারতের অন্যতম প্রধান জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ বা ত্রিপুরা নয়, সুদূর গুজরাট, রাজস্থান এবং তামিলনাডুতেও এই বিষয় নিয়ে আন্দোলন চলছে। ভারতীয় শাসক দল বিজেপি এবং বিরোধী দল কংগ্রেস, উভয়েই এই ইস্যুতে একমত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে এবং বাংলাদেশে হিন্দুদের প্রতি নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়েছে।

সেপ্টেম্বরের শেষদিকে, যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ভারত সফরে আসে, তখন অনেক সংগঠন দাবি করে যে, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বন্ধ না হলে ভারতের উচিত ক্রিকেট সিরিজ বয়কট করা। পাকিস্তানকে নিয়ে এই ধরনের দাবি শোনা গেলেও, বাংলাদেশকে নিয়ে এমন হুঁশিয়ারি ভারতে এই প্রথম ছিল।

ভারতের কিছু সংগঠনও দাবি করেছে- বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা হিন্দুদের জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়া হোক। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এই দাবির পক্ষে সমর্থন জানিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন।

এদিকে ভারতীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ভারত আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে পারে। কিছু সমালোচক বলছেন, ২০১৫ সালে নেপালের নতুন সংবিধান নিয়ে ভারত যে অর্থনৈতিক অবরোধ চালিয়েছিল, সেই ধরনের পদক্ষেপ বাংলাদেশেও প্রয়োগ করা হতে পারে। তবে এর পালটা যুক্তিও উঠে এসেছে– বাংলাদেশ একটি স্থলবেষ্টিত দেশ নয়, তাই ভারত থেকে পণ্য না আসলেও তারা সমুদ্রপথে সরবরাহ চালিয়ে যেতে পারবে, যদিও এতে মূল্য বাড়বে।

এ পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে – বাংলাদেশে হিন্দুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ভারত কী ধরনের বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে পারে। সরকার, নীতিনির্ধারকরা এবং সাধারণ মানুষ এই বিষয়ে চিন্তা করছেন, তবে রাজনীতির ভাষণে যতই দাবি করা হোক, বাস্তবে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হবে, তা সময়ই বলে দেবে।

‘কূটনৈতিক পথে সমাধান খোঁজাই একমাত্র রাস্তা’

মাত্র বছর চারেক আগেও বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন রীভা গাঙ্গুলি দাশ। ভারতের এই সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিবিদ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাংস্কৃতিক শাখা আইসিসিআরের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব সামলেছেন। ক্যারিয়ারে একাধিকবার ঢাকায় নিযুক্ত ছিলেন, বাংলাদেশ এখনও তার গবেষণা ও আগ্রহের ক্ষেত্র।

তিনি মনে করেন, ভারতকে এই সংকটের সমাধান খুঁজতে হবে একমাত্র কূটনৈতিক পথেই!

বিবিসি বাংলাকে দাশ বলেন, ‘বাংলাদেশে এই পরিস্থিতি নতুন নয়। ২০০১ সালের অক্টোবরে শেখ হাসিনা সরকার ভোটে হারার পরই বাংলাদেশ জুড়ে যে ধরনের হিন্দু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল, তার ব্যাপকতা ও সহিংসতার মাত্রা ছিল এবারের চেয়েও অনেক বেশি।’

তিনি বলেন, ‘আমি তখন ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসেই পোস্টেড, মনে আছে তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী তার অত্যন্ত আস্থাভাজন নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রজেশ মিশ্রকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন। ব্রজেশ মিশ্র সে বার খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারকে বেশ কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে যান – যে ভারতের পক্ষে এটা চুপচাপ বসে দেখা কিছুতেই সম্ভব নয়। আরও কী বলেছিলেন আমি জানি না, তবে পরিস্থিতিতে কিন্তু তারপরই দ্রুত উন্নতি হয়েছিল!’

২০০১ আর ২০২৪-এর পরিস্থিতি অবশ্যই এক নয়, ভারত ও বাংলাদেশেও তখনকার আর এখনকার সরকারের চরিত্রে অনেক ফারাক – কিন্তু এই মুহুর্তে কীভাবে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলে সে দেশের হিন্দুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে, তা ভারতকেই ভেবে বের করতে হবে বলে মিজ দাশের অভিমত।

তিনি বলেন, ‘আসলে একটা জিনিস আমাদের বুঝতে হবে, বাংলাদেশের হিন্দুরা নির্যাতিত হয়ে যদি ভারতে চলে আসারও চেষ্টা করেন, ভারতের পক্ষে আজ তাদের আর আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ সংখ্যাটা তো দু-পাঁচশো নয়, লাখ লাখ!’

দাশ বলেন, ‘সুতরাং বাংলাদেশের মাটিতেই তাদের রাখতে হবে, আর সেখানেই তাদের জীবন-সম্পত্তি সুরক্ষিত করতে হবে। এটা ভারতের জন্য অবশ্যই খুব বড় চ্যালেঞ্জ!’

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বছরকয়েক আগেও বাংলাদেশের কোনও প্রান্তে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বা মন্দিরে হামলার কোনও ঘটনা ঘটলেই ঢাকার ভারতীয় দূ‍তাবাস থেকে রাষ্ট্রদূত বা অন্য কর্মকর্তারা সেখানে ছুটে যেতেন – এই বার্তা দিতে যে তাদের বিপদের মুহূর্তে ভারত পাশে আছে।

তবে ক্রমশ ভারতের পক্ষ থেকে নির্যাতিত হিন্দুদের এটাও বোঝানো হতে থাকে যে হামলা হলেই কোনও মতে জমিবাড়ি বেচে ‘ইন্ডিয়া চলে যাওয়া’টা কোনো সমাধান নয়। বাংলাদেশই তাদের দেশ, তাই নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকারে তাদের সেখানেই থেকে যাওয়ার চেষ্টা করা উচিত।

বর্তমান সংকটেও ভারতের সেই অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলাই বাহুল্য!

রীভা গাঙ্গুলি দাশের মতে, বাংলাদেশের হিন্দুরা যাতে সে দেশে থেকেই সুরক্ষিত বোধ করতে পারেন এবং ভারতের পানে পাড়ি না দেন – দিল্লির নিজের স্বার্থেও সেটা নিশ্চিত করা দরকার, এবং সেটা করতে হবে কূটনীতির রাস্তাতেই!

‘দরকারে বাংলাদেশের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করা হোক’

তথাগত রায় পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাবেক সভাপতি, সদস্য ছিলেন দলের জাতীয় কর্মসমিতিরও। নরেন্দ্র মোদি সরকারের আমলে উত্তর-পূর্ব ভারতে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী একাধিক রাজ্যে রাজ্যপালের দায়িত্বও পালন করেছেন। বাংলাদেশে হিন্দুদের দুর্দশা নিয়ে বহুদিন ধরে লেখালেখি করছেন আরএসএসের ঘনিষ্ঠ এই রাজনীতিক।

প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বিশ্বাস করেন, হিন্দু নির্যাতনের প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দেওয়ার জন্য ভারতের সামনে আসলে অনেক রাস্তাই খোলা আছে। তবে সেগুলো সব একবারে প্রয়োগ করার দরকার নেই, ধাপে ধাপে পরিস্থিতি বুঝে পর্যায়ক্রমিকভাবে সেগুলো পরখ করে দেখা যেতে পারে।

তথাগত রায় বলেন, ‘প্রথমত, বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ডাউনগ্রেড করা যেতে পারে। ধরা যাক হাইকমিশনারকে প্রত্যাহার করে আমরা সম্পর্কটা ‘স্কেল ডাউন’ করলাম, ঠিক যেমনটা শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ইস্যুতে কানাডার সঙ্গেও করা হয়েছে। এতে একটা খুব কড়া বার্তা যাবে যে হিন্দু নির্যাতনের প্রশ্নে ভারত কোনও ধরনের আপস করবে না।’

এতেও যদি কোনও কাজ না হয়, তাহলে একে একে বেশ কিছু অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি, যা সরাসরি বাংলাদেশের স্বার্থে আঘাত করবে।

তিনি আরও বলেন, ‘যেমন ধরুন, বাংলাদেশের জন্য ভারতের এয়ারস্পেস বা আকাশসীমা রেস্ট্রিক্ট করে দেওয়া হল। তাতে মধ্যপ্রাচ্য বা ইউরোপের জন্য বাংলাদেশের গেটওয়ে-টাই বন্ধ হয়ে যাবে, তাদের রফতানি বাণিজ্য তছনছ হয়ে যাবে। সব বিদেশি এয়ারলাইনও তখন বাংলাদেশ থেকে পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হবে। একইভাবে বাংলাদেশ-গামী জাহাজের জন্য ভারতের সমুদ্রসীমাও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এখন যদি ভারত সেই গারমেন্ট তৈরির কাঁচামাল বা ইয়ার্নের রফতানিই বন্ধ করে দেয়, তারা গভীর সমস্যায় পড়বে। একই ভাবে আলু-পেঁয়াজ-চাল-ডিমের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের রফতানিও নিষিদ্ধ করা হলে তাদের অনেক বেশি দামে অন্য জায়গা থেকে কিনতে হবে।’

বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ বলেন, ‘কিছুতেই কিছু কাজ না হলে এখন এই শীতের শুষ্ক মৌশুমে অভিন্ন নদীগুলোর জলও আটকে দেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে … কিংবা বর্ষার সময় সব লকগেট খুলে দেওয়ার কথা! ঘরের পাশে হিন্দুরা নির্যাতিত হলে ভারতের তো আন্তর্জাতিক চুক্তির মর্যাদা দেওয়ার দায় থাকে না!’

পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ভারতের উচিত হবে দেশের ভেতরে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান শুরু করে তাদের ব্যাপক হারে সীমান্তের অন্য পারে পুশব্যাক করা – যাতে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ বাড়ানো যায়।

কিন্তু এই ধরনের চরম পদক্ষেপ নিলে ভারতকেও তো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কড়া ‘ব্যাকল্যাশ’ বা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়তে হবে?

জবাবে তথাগত রায় বলেন,‘এখন অ্যাপার্থাইডের জন্য সারা বিশ্ব যদি একযোগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে, তাহলে ঠিকমতো বিশ্ব জনমত তৈরি করতে পারলে ও কার্যকরী কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে পারলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও দুনিয়াকে একজোট করা সম্ভব!’

‘চাপটা আসতে হবে ভারতের বাইরে থেকে’

দিল্লির জহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি (জেএনইউ), আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেন এবং মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ছিলেন বলদাস ঘোষাল। বর্তমানে তিনি থিঙ্কট্যাঙ্ক তিলোত্তমা ফাউন্ডেশনের গবেষণা প্রধান। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতির সুপরিচিত এই বিষেশজ্ঞ বাংলাদেশকে পর্যবেক্ষণ করছেন বিগত বহু বহু বছর ধরে, তার নিজের শৈশব ও কৈশোরও কেটেছে পূর্ব পাকিস্তানেই।

অধ্যাপক ঘোষাল সোজাসুজি বলছেন, হিন্দু নির্যাতনের ইস্যুটা অ্যাড্রেস করার জন্য ভারতের সামনে সত্যি বলতে বাস্তবসম্মত অপশন খুবই কম – কারণ ‘বাংলাদেশ ইজ আ টোট্যালি ডিফারেন্ট বলগেম!’

তিনি বলেন, ‘আসলে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নিপীড়ন অত্যাচারের ঘটনা নতুন কিছু নয়, বহু বহু বছর ধরে ঘটে আসছে আর তার পেছনে গভীর আর্থসামসাজিক ও ঐতিহাসিক কারণও নিহিত আছে। এমন নয় যে ৫ অগাস্টের পর আচমকা এই জিনিস শুরু হল। এখন বাইরে থেকে ভারত যদি চাপ দিয়ে এটা বন্ধ করতে চায় কিংবা কড়া শাস্তি দিয়ে ও বাংলাদেশকে ভয় দেখিয়ে এটা বন্ধ করার চেষ্টা করে, তাতে হয়তো হিতে বিপরীতও হতে পারে। মানে তখন হয়তো দেখা গেল বাংলাদেশকে শিক্ষা দিতে দিয়ে সে দেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের মাত্রাটাই বেড়ে গেল। ফলে আমি মনে করি এভাবে কোনো সমাধান বেরোবে না। ’

তাহলে কি ভারত সরকারের কড়া বিবৃতি দেওয়া ছাড়া এ ব্যাপারে আসলেই কিছু করার নেই?

‘না, তা নয়। তবে বিষয়টা যেহেতু খুবই স্পর্শকাতর, আর আমরা সেনা পাঠিয়েও কাউকে সিধে করতে পারছি না তাই খুব সাবধানে পা ফেলে এই সমস্যার নিষ্পত্তির চেষ্টা চালাতে হবে’, জবাব দেন তিনি।

কীভাবে ভারত সরকার এই লক্ষ্যে এগোতে পারে, তার দুটো নির্দিষ্ট উদাহরণও দিচ্ছেন অধ্যাপক ঘোষাল।

‘যেমন ধরুন প্রথমত ভারত নিজেরা সরাসরি চাপ না দিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বে তাদের মিত্রদের দিয়ে বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করাতে পারে, যাতে সেখানে হিন্দু নির্যাতন বন্ধ হয়। পশ্চিমারা বা জাপানের কাছ থেকে এ ব্যাপারে চাপ এলে বাংলাদেশ নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আর এর জন্য আগামী ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণ করা অবধি অপেক্ষা করাটাই সমীচীন। আশা করা যায় ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিতে বাংলাদেশ প্রশ্নে আমেরিকার অবস্থান ভারতের মতের সঙ্গে অনেক বেশি মিলবে, আর সেটা কাজে লাগিয়েই দিল্লির উচিত হবে ওয়াশিংটনকে দিয়েই ঢাকার ওপর চাপ দেওয়া! দ্বিতীয় পদক্ষেপটা হওয়া উচিত ভারতের অভ্যন্তরে এই প্রশ্নটায় একটা রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলা।’

বলদাস ঘোষাল বলেন, মানে বাংলাদেশে হিন্দুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে কীভাবে এগোনো দরকার, নরেন্দ্র মোদি সরকার তা নিয়ে আলোচনা করতে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকতে পারে, শাসক জোটের শরিক ও বিরোধীদের সঙ্গে পরামর্শ করে একটা সুচিন্তিত স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণ করতে পারে, যাতে ভারতের সব রাজনৈতিক শক্তি একমত হবে।

তিনি যুক্তি দিচ্ছেন, ভারতের ভেতরে এই প্রশ্নটায় একটা বলিষ্ঠ ‘কনসেনসাস’ আছে, এটা দেখানো গেলে বাংলাদেশও ভারতের উদ্বেগকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হবে।

ভারত যে ইসরায়েল নয়, এটা বুঝতে হবে

স্ম্রুতি এস পট্টনায়ক দিল্লির প্রথম সারির স্ট্র্যাটেজিক থিঙ্কট্যাঙ্ক মনোহর পারিকর আইডিএসএ-র সিনিয়র ফেলো, তার গবেষণার ক্ষেত্র দক্ষিণ এশিয়া এবং এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক। কাজের সূত্রে তিনি ঘন ঘন বাংলাদেশেও যান, ভারত সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়েও তার নিয়মিত যোগাযোগ আছে।

পট্টনায়কের পরিষ্কার কথা – এই সংকটের সমাধান খুঁজতে হবে নীরবে ও চোখের আড়ালে, মিডিয়াতে ঢাকঢোল পেটালে তাতে অযথাই আরও জলঘোলা হবে।

তিনি বলেন, ‘আসলে ভারত যদি বাংলাদেশে হিন্দুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চায়, ‘পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি’ করে তাতে কোনো লাভ হবে না। মানে বলতে চাইছি মিডিয়াতে ফলাও করে বিবৃতি দিয়ে বা প্রকাশ্যে কড়া সমালোচনা করে কাজের কাজ হবে না, বরং ভারতকে যা করার তা চুপচাপ করতে হবে পর্দার আড়ালে।’

কিন্তু তিনি সেই সঙ্গে এটাও বিশ্বাস করেন, আসলে ভারত নিজেদের সারা দুনিয়ার হিন্দুদের ‘রক্ষাকর্তা’ বলে ঘোষণা করেই পরিস্থিতিটাকে আরও জটিল করে তুলেছে। বাংলাদেশের নির্যাতিত হিন্দুদেরও ভারতের ওপর এক ধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, যা পূরণ করা খুবই কঠিন।

প্রসঙ্গত, এটাও মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে ৫ অগাস্টের অব্যবহিত পর বাংলাদেশের শত শত বাংলাদেশি যখন ভারত সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় এসে জড়ো হয়েছিলেন বা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে আশ্রয় চেয়েছিলেন– তখন কিন্তু ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ তাদের ফিরিয়ে দিয়েছিল।

তিনি বলেন, সোজা কথা সোজা বলাই ভাল। ইসরাইল যেভাবে সারা পৃথিবীর নির্যাতিত ইহুদীদের আশ্রয় দেওয়ার নীতি নিয়ে চলে, দরকারে ভিন দেশ থেকে ইভ্যাকুয়েট করেও নিয়ে আসে – ভারতের পক্ষে চাইলেও সারা দুনিয়ার হিন্দুদের এভাবে উদ্ধার করে আনা সম্ভব নয়! আপনি বলতে পারেন ভারতের বর্তমান সরকারই তো বাংলাদেশের নিপীড়িত হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন এনেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে সেখানেও কিন্তু একটা কাট-অফ ডেট আছে – ২০১৪ এর ৩১ ডিসেম্বর।

পট্টনায়ক বলেন, ফলে আজ যারা বাংলাদেশে নির্যাতিত হচ্ছেন তাদের কিন্তু আর এখন ভারতে এসে নতুন করে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ নেই। এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই আমাদের একটা সমাধানের রাস্তা বের করতে হবে।

ভারত যাতে বাংলাদেশের হিন্দুদের ‘মুখপাত্র’ হিসেবে নিজেদের তুলে না-ধরে, সে ব্যাপারেও দিল্লির সতর্ক থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে একটি উদাহরণ দিয়ে পট্টনায়ক বলেন, যেমন ধরুন বাংলাদেশে ইসকনের হয়েও আমরা বিবৃতি দিচ্ছি। অথচ ইসকন বা ‘ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস’ তো একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন, পশ্চিমের বহু দেশেই তাদের খুব ভালো প্রভাব আছে … তো ইসকনের হয়ে ব্যাট করার কাজটা তো ভারত তো তাদের ওপরেও ছেড়ে দিলে পারে?’

তার মতে, এটা করলে লাভ হবে একটাই – মিডিয়াতে দুপক্ষের তোপ দাগা কিংবা বিবৃতি ও পালটা বিবৃতির বাইরে হিন্দুদের সুরক্ষার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার হয়তো একটা অবকাশ তৈরি হবে।

ভারত যদি বাইরে ইস্যুটা নিয়ে সংযত প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং ভেতরে ভেতরে বাংলাদেশ সরকারের ওপর কড়া চাপ বজায় রাখে – তাহলে সে দেশের পুলিশ-প্রশাসনকেও ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করা যাবে বলে তিনি মনে করছেন।

আসলে ভারতের জন্য এই সমস্যাটা অত্যন্ত জটিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই – এর প্রতিকারের জন্য নানা মহল থেকে নানা ধরনের পরামর্শও আসছে। কিন্তু দিল্লি ঠিক কোন পথে এগিয়ে বাংলাদেশের হিন্দুদের জানমাল সুরক্ষিত করার কথা ভাবছে, বলা যেতেই পারে তার কোনো স্পষ্ট আভাস এখনো পাওয়া যায়নি।

সূত্র:যুগান্তর।
তারিখ: ডিসেম্বর ২১, ২০২৪

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ