লেখক: ড. এন এন তরুণ
একবার এক চিত্রকর সমগ্র পৃথিবীকে একটি ক্যানভাসে সাজাতে চাইছিলেন। কিন্তু কিছুতেই পারছিলেন না। কোথায় যেন, কীভাবে যেন, কিছু একটা গন্ডগোল হয়ে যাচ্ছিল। অনেক চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হলেন; তিনি উপলব্ধি করলেন, জীবনের তথা সমাজ ও রাষ্ট্রের বিরাজমান বিপত্তি ও অনিয়ম তাঁকে পৃথিবীটাকে সাজাতে দিচ্ছে না। কারণ, ইকুয়িলিব্রিমিয়ামহীন তথা ভারসাম্যহীন পৃথিবী তো সাজানো যায় না।
একজন চিত্রকর বুদ্ধিজীবীরই এক রূপ। পৃথিবীকে সাজাতে চাইলে ওই বিপত্তি ও অনিয়মগুলো দূর করতে হবে আগে। বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা তাই সব বিপত্তি ও অনিয়ম দূর করে পৃথিবীকে একটি ভারসাম্য অবস্থায় পৌঁছে দেওয়া। বুদ্ধির কাজ করে বা বিদ্যাদান করে জীবিকা নির্বাহ করেন যাঁরা, সমাজে ও রাষ্ট্রে তাঁদের ভূমিকা বিষয়ে যুগ যুগ ধরে বিতর্ক চলে আসছে। বিতর্কটা হলো, তাঁরা কি বুদ্ধির কাজ বা বিদ্যাদানের মধ্যেই তাঁদের দায়িত্ব-কর্তব্য সীমাবদ্ধ রাখবেন, নাকি সমাজের ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে অন্য কর্মকাণ্ডেও নিজেদের সম্পৃক্ত রাখবেন। অন্য কর্মকাণ্ড বলতে, নির্দিষ্ট করে বললে, আমরা আপাতত সংগঠন করাকেই ধরে নিই।
সক্রেটিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি যুব সম্প্রদায়কে ‘বিপথে’ চালিত করছিলেন। তার মানে হলো যুব সম্প্রদায়কে নিয়ে তিনি নিশ্চয়ই কিছু একটা করছিলেন। নির্দিষ্ট করে বললে তিনি তাঁর কথা দিয়ে তাঁদের প্রভাবিত করছিলেন। আর প্রভাবিত করা মানেই মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলা। আর সরকারপক্ষ সব সময়ই যুবশ্রেণিকে ভয় পায়। কারণ, একমাত্র তারাই তাদের গদিচ্যুতির সবচেয়ে হুমকি।
‘যে বুদ্ধিজীবী নিজের সময় ও সমাজ নিয়ে সন্তুষ্ট, সে গৃহপালিত পশু’—হুমায়ুন আজাদ যখন এ কথা বলেন, ঠিকই বলেন। বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা বিষয়ে কার্ল মার্ক্সের বক্তব্য পরিষ্কার, বুদ্ধিজীবীকে শুধু বুদ্ধি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ ও লেখালেখির মধ্যে তাঁর কাজ সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। তাঁকে সংগঠন করতে হবে, সমাজ নির্মাণে ও রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। কার্ল মার্ক্স নিজেও মৃত্যুর আগপর্যন্ত এ কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। বস্তুত মার্ক্সের জীবন ছিল ভীষণ রকম কর্মমুখর। পঠনপাঠন এবং বই, পুস্তিকা, লিফলেট, ইশতেহার ইত্যাদি লেখার ও পত্রিকা সম্পাদনার পাশাপাশি তাঁর মতবাদ প্রচার করে জনমত গঠনের জন্য খবরের কাগজেও তিনি প্রচুর নিবন্ধ লিখেছেন। নিউইয়র্ক ডেইলি ট্রিবিউনে তিনি দীর্ঘদিন নিবন্ধ লিখেছেন।
একজন বুদ্ধিজীবী কেন লিখবেন, কেন সংগঠন করবেন? এর উত্তর হলো, তিনি তাঁর সময় ও সমাজ নিয়ে সন্তুষ্ট নন। এই অসন্তোষ সব কালের ও সব সমাজের বুদ্ধিজীবীর জন্য প্রযোজ্য। কারণ, তিনি তাঁর জনগণের জীবনমান নিয়ে কখনোই সন্তুষ্ট নন, তা যতই উঁচু হোক না কেন। তিনি তাদের আরও অনেক উঁচুতে দেখতে চান। তা ছাড়া সমাজে বিরাজমান অসাম্যও তাঁকে গভীর বেদনা দেয়। জনগণ যদি নিজের ইচ্ছেমতো জীবন যাপন করতে না পারে, কর্মের ও বাক্যের স্বাধীনতা যদি ভোগ করতে না পারে, তিনি ব্যথিত হন। সে জন্যই একজন বুদ্ধিজীবী সততই ক্ষমতাসীন সরকারের, এস্টাবলিশমেন্ট তথা বিরাজমান প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থার বিপরীতে অবস্থান করেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁর কাঙ্ক্ষিত মতাদর্শের সরকার গঠিত হওয়ার পরপরই তিনি চলে যান বিপরীতে। বিপরীতে চলে গিয়ে তিনি অবতীর্ণ হন সমালোচকের ভূমিকায়; কারণ, নিশ্চিতভাবেই সরকার তার প্রিয় জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কখনোই পূরণ করতে পারবে না।
ম্যাক্সিম গোর্কি লেনিনের ব্যক্তিগত বন্ধু ছিলেন। তাঁর লেখা বই বিপ্লবে অন্যান্য ভূমিকা রেখেছিল। একসময় বহু কাঙ্ক্ষিত বিপ্লবী সরকার গঠিত হলো, স্বয়ং লেনিন যার প্রধান। কিন্তু গোর্কি সরকারের সমালোচনা করতে ছাড়েননি। গণতন্ত্র, বাক্স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা বিষয়ে তিনি সব সময় সরব থেকেছেন। অন্যান্য লেখকের মুক্তির জন্য লেনিনের সঙ্গে দেখা করে তার ব্যবস্থা করেছেন।
বাট্রান্ড রাসেল বুদ্ধিজীবী নামের অনুষঙ্গের সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ। রাসেল তাঁর আত্মজীবনীর মুখবন্ধে তিনটি প্রেষণার কথা উল্লেখ করেছিলেন। তার মধ্যে একটা হলো, বিপন্ন মানবতার প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা। সম্ভবত সে কারণেই তিনি নিজেকে সমাজতন্ত্রী ভাবতে পছন্দ করতেন। দুটি বিশ্বযুদ্ধের পরই যুদ্ধের বিরুদ্ধে, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির বিরুদ্ধে, এমনকি নিজ দেশের সরকারের ভূমিকার বিরুদ্ধে বহুবার বাট্রান্ড রাসেল বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন এবং যুবসমাজকে গভীরভাবে এসব বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ৮৯ বছর বয়সে দ্বিতীয়বার জেল খেটেছেন। তাঁর পিতামহ ছিলেন ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। বলার অপেক্ষা রাখে না যে তিনি একজন অতি উঁচুতলার ও রাষ্ট্রের সুবিধাভোগী শ্রেণির মানুষ। তাঁর কোনো দরকার ছিল না স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর, বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা পালন করার। কিন্তু তিনি মৃত্যুর আগপর্যন্ত এই কাজ করে গেছেন।
আলবার্ট আইনস্টাইন বিজ্ঞানী হয়েও শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি বিষয়ে প্রচুর লিখেছেন। বিজ্ঞানের বাইরে এসব লেখার উদ্দেশ্য হলো, শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, পৃথিবীকে বসবাসযোগ্য করার চেষ্টা করা। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি রোধ করতে বিশ্বব্যাপী জনমত গঠন ও সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোকে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে বাট্রান্ড রাসেল-সূচিত আন্দোলনে আইনস্টাইনও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সম্মেলন ও সেমিনারে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি প্রচুর বক্তৃতা করেন। ১৯৩২ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠেয় নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন সফল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি আবেদন জানিয়ে ১৯৩১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের দ্য নেশন ম্যাগাজিনে প্রবন্ধ লেখেন।
বিংশ শতাব্দীর সাড়াজাগানো দার্শনিক ও লেখক জ্যঁ পল সার্ত্র একদিকে ব্যক্তিস্বাধীনতা আর অন্যদিকে মার্ক্সীয় দর্শনের আলোকে একটি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মৃত্যুর আগপর্যন্ত সক্রিয় থেকেছেন লেখায়, সংগঠনে ও আন্দোলনে। ১৯৬৪ সালে নোবেল পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম ঘোষণা করা হলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। সার্ত্র কী রকম সক্রিয় ছিলেন, সে বিষয়ে ব্রিটানিকা লিখেছে, ‘সার্ত্র সচরাচরই রাজপথে চলে যেতেন সরকারের অপকর্মের বিরুদ্ধে দাঙ্গা করার জন্য, বামপন্থার বই বিক্রির জন্য, বিপ্লবের সহায়ক হতে পারে, এমন যেকোনো কাজে লেগে যেতেন যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো জায়গায়।’ কারণ, তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রতিশ্রুতি বা দায়বদ্ধতা একটি কথামাত্র নয়, প্রতিশ্রুতি হলো কাজ। সার্ত্রের সাহিত্যের সংজ্ঞাও তাই আমাদের বিস্ময়ে হতবাক করে: ‘সাহিত্য নিছক সাহিত্যকর্মই নয় অথবা একটি চরিত্র কিংবা অবস্থার বর্ণনা মাত্র নয়। সাহিত্য বরং মানুষের মুক্তি বিষয়ে লেখকের অঙ্গীকার, সাহিত্য হলো নৈতিক কর্মের শিল্পিত রূপ।’
নোবেল বিজয়ী চিলির কবি পাবলো নেরুদা মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণেই শুধু সাহিত্যকর্মের মধ্যে তাঁর কাজ সীমাবদ্ধ রাখেননি। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কমিউনিস্ট পার্টিতে যুক্ত হয়েছেন, চিলির বামপন্থী নেতা সালভাদর আয়েন্দের হয়ে ক্যাম্পেইন করেছেন। ব্রিটিশ লেখক গ্রাহাম গ্রিন আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লিখেছেন, আন্দোলন করেছেন আবার সমাজতন্ত্রের প্রতি সমর্থন সত্ত্বেও সোভিয়েত ইউনিয়নে ব্যক্তিস্বাধীনতায় রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।
অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকে ভারতে আমরা দেখি রাজা রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার এক জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে আবির্ভূত হতে। ভারতের মতো একটি পশ্চাৎপদ সমাজে ধর্মের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সতীদাহ প্রথা রদ ও বিধবাবিবাহ চালু করে অসম্ভবকে সম্ভব করার মতো কাজ তাঁরা করে গেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশেও আমরা আহমদ শরীফ ও হুমায়ুন আজাদকে পাই স্রোতের বিপরীতে, প্রথা ও প্রতিষ্ঠানকে অস্বীকার করতে, ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধাচরণ করতে।
কিন্তু বাংলাদেশে আজ বুদ্ধিজীবী শ্রেণি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত।তাঁরা আওয়ামীপন্থী, বিএনপিপন্থী, জামায়াতপন্থী, বামপন্থী, ভারতপন্থী, পাকিস্তানপন্থী, চীনপন্থী, আমেরিকাপন্থী, সৌদিপন্থী বা ইরানপন্থী হিসেবে সমাজে পরিচিত। মস্কোপন্থী এ দেশে আর তেমন দেখা যায় না। কারণ মস্কোর আগের সেই রমরমা অবস্থা এখন আর নেই। দেশের উন্নয়ন, দেশের সমস্যা নিজ দেশের ইতিহাস ও আর্থসামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে সমাধা করার বৈজ্ঞানিক পন্থা অবলম্বনের কোনো অভিপ্রায় আছে এমন বুদ্ধিজীবী খুঁজে পাওয়া এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে কী ঘটে, তা শুধু শিক্ষা খাতের একটিমাত্র চিত্র বর্ণনা করলে পুরো দেশের অবস্থা কিছুটা আন্দাজ করা যাবে। কলেজের অধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অচিরেই পরিবর্তন হয়ে যাবেন। স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটি পরিবর্তন হবে। কোনো কোনো অধ্যক্ষকে বিরোধী পক্ষের দল ক্ষমতায় থাকাকালে পুরোটা সময় পালিয়ে থাকতে হয়। জাতীয় কমিটিগুলোতে পরিবর্তন আসবে। রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর প্রধান ও অন্য অনেক পদ পূর্ণ হবে সরকার সমর্থক গোষ্ঠীর সদস্য দ্বারা। জাতীয় পুরস্কারগুলো চলে যাবে সরকার সমর্থক বাহিনীর হাতে। দল ও দলপ্রধানের প্রতি অকুণ্ঠ আনুগত্যই এসব পুরস্কারের প্রধান যোগ্যতা।
কোনো কিছু সৃষ্টির আগে একজন মানুষকে গভীর সাধনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যা অনেকটা ধ্রুপদি সংগীতচর্চার মতো ২০ থেকে ৫০ বছর লেগে যায় সিদ্ধিলাভ করতে। তারপরও সিদ্ধিলাভ হবে কি না, নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু বাংলাদেশে পুরস্কারপ্রাপ্তির যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তাতে আর সাধনার কোনো দরকার নেই। এর ফলে আমরা একটি মেধাহীন, সৃষ্টিহীন জাতিতে পরিণত হচ্ছি দিনে দিনে এবং এই ক্ষতি কোনো দিন কোনোকালেই আর পূর্ণ হবে না।
অথচ আমাদের সামনে রয়েছে দুই জ্বলন্ত উদাহরণ—এক. রবীন্দ্রনাথ, দুই. কাজী নজরুল ইসলাম। বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে পত্রিকা সম্পাদনা ও পত্রিকায় কলাম লেখা পর্যন্ত কী না করেছেন নজরুল। একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও একটি সাম্যবাদী রাষ্ট্র গড়ার প্রেষণা নজরুলকে তাড়িয়ে ফিরেছে সারাটা জীবন। রবীন্দ্রনাথের কথা বলাই বাহুল্য। তাঁর কবিতায় শ্রমজীবী মানুষের যথাযথ স্থান হয়নি বলে রবীন্দ্রনাথ গভীর বেদনা অনুভব করেছিলেন, অনুশোচনা করেছিলেন। ১৯৪১ সালে লেখা ‘জন্মদিনে’ কবিতায় তা বিধৃত। বাংলা ১৩০০ সালে লেখা ‘এবার ফিরাও মোরে’ কবিতায়ও তিনি ‘দরিদ্রের ভগবানের’ মুক্তি আবাহন করেন। নোবেলপ্রাপ্তির আগেই, ১৯০৫ সাল থেকেই রবীন্দ্রনাথ কৃষিবিজ্ঞান ও কৃষিব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকদের ভাগ্য ফেরানোর জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। নিজের ছেলেকে কৃষিবিজ্ঞানী করে চাষাবাদে ও অধিক ফলনের গবেষণায় নিয়োজিত করেন। শিল্পী-সাহিত্যিকের এমন দায়বদ্ধতার উজ্জ্বল উদাহরণ বাঙালির জীবনে ছিল। অথচ আমরা আজ সেই পথ থেকে সরে গেছি বহু দূরে।
উল্লেখিত যেসব বুদ্ধিজীবীর কথা বলা হলো, তাঁদের চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো প্রতিবাদ—অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অপশাসনের বিরুদ্ধে, যুদ্ধের বিরুদ্ধে, অস্ত্রের বিরুদ্ধে, মানবতার পক্ষে, শান্তির পক্ষে, মানুষের জন্য, সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য। এই প্রতিবাদ যাঁর রক্তে নেই, তিনি কোনোক্রমেই বুদ্ধিজীবী হতে পারেন না।
রবীন্দ্রনাথ নিজে বিপ্লবী হতে পারেননি বা হতে চাননি। তবে তিনি একজন বিপ্লবীর আবির্ভাব কামনা করেছিলেন একান্তভাবে। তিনি এমন একজন বিপ্লবীর আবির্ভাব চেয়েছিলেন, যিনি ভারতের অন্তর-বাহির সব পাল্টে দেবেন। একজন বিপ্লবীর জীবন কেমন হবে, কী রকম ত্যাগ স্বীকার করতে হবে তাঁকে, তা তিনি জানতেন। সে জন্যই সেই কাঙ্ক্ষিত বিপ্লবীকে তিনি সতর্ক করে দিয়েছিলেন কবিতায়:
ঘরের মঙ্গলশঙ্খ নহে তোর তরে,
নহে রে সন্ধ্যার দীপালোক,
নহে প্রেয়সীর অশ্রু-চোখ।
…
পথে পথে কণ্টকের অভ্যর্থনা,
পথে পথে গুপ্তসর্প গূঢ়ফণা।
নিন্দা দিবে জয়শঙ্খনাদ
এই তোর রুদ্রের প্রসাদ।
ড. এন এন তরুণ রাশিয়ার সাইবেরিয়ান ফেডারেল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির ভিজিটিং প্রফেসর ও সাউথ এশিয়া জার্নালের এডিটর অ্যাট লার্জ। nntarun@gmail. com
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ০১, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,