Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

বাংলাদেশের ধনী হতে কত দূর (২০২১)

Share on Facebook

লেখক:সাইফুল সামিন, ঢাকা।

বাংলাদেশ থেকে উড়োজাহাজে চেপে সরাসরি সিঙ্গাপুর যেতে ঘণ্টা কয়েক সময় লাগে। দূরত্ব দেড় হাজার নটিক্যাল মাইলের কিছুটা বেশি। সিঙ্গাপুর স্বাধীন হয় ১৯৬৫ সালে। তার ছয় বছরের মাথায় ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। সিঙ্গাপুরকে একসময় ‘জেলেপল্লি’ বলা হতো। অন্যদিকে বাংলাদেশকে বলা হতো ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’। সেই সিঙ্গাপুর এখন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধনী। আর বাংলাদেশ ‘উদীয়মান নক্ষত্র’।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, স্বাধীনতা অর্জনের ৪০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে সিঙ্গাপুর কীভাবে বিশ্বের প্রথম সারির ধনী দেশ হয়ে উঠল? আর কেনই-বা বাংলাদেশ এখনো উন্নয়নশীল দেশের কাতারে? সিঙ্গাপুরের মতো বাংলাদেশ কবে ধনী দেশের ক্লাবে নাম লেখাতে সক্ষম হবে—এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে বর্তমান সময়ের শীর্ষস্থানীয় ধনী দেশগুলোর নাম চট করে দেখে নেওয়া যাক।

শীর্ষ ১০ ধনী দেশ
২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ বিশ্বের ১০টি ধনী দেশের তালিকা করেছে। এগুলো যথাক্রমে লুক্সেমবার্গ, সিঙ্গাপুর, আয়ারল্যান্ড, কাতার, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রুনেই দারুসসালাম, হংকং ও ডেনমার্ক। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) গত এপ্রিলের তথ্যের ভিত্তিতে গ্লোবাল ফিন্যান্স ম্যাগাজিন অনুরূপ একটি তালিকা করেছে।

সিইওওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনের তালিকা অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০টি দেশ হলো লুক্সেমবার্গ, সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, যুক্তরাষ্ট্র, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া ও কাতার।

ধনী দেশ পরিমাপের উপায়
একটা দেশ ধনী কি না কিংবা কতটা ধনী, তা বোঝার জন্য অনেকে প্রাথমিকভাবে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বিবেচনায় নেয়। কিন্তু জিডিপির সমস্যা হলো, তা একটা দেশের অর্থনীতির সঠিক চিত্র তুলে ধরে না। একটি দেশের মানুষ কেমন আছে, কেমন তাদের জীবনযাত্রার মান, তা উপস্থাপনে জিডিপি ব্যর্থ।

মোট জিডিপিকে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে (মাথাপিছু জিডিপি) ধনী দেশ পরিমাপের চেষ্টা কেউ কেউ করে থাকে। তবে এ পদ্ধতিও নিখুঁত নয়। কেননা, এখানে আয়ের বৈষম্যের দিকটি ধরা পড়ে না।

তাহলে উপায়?

ধনী দেশ পরিমাপের একটা জুতসই উপায় হতে পারে কোনো দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সমতা বা পারচেইজিং পাওয়ার প্যারিটি (পিপিপি)। পিপিপিতে ব্যক্তি তার আয় দিয়ে কী কী বা কতটা জিনিস কিনতে পারে, তা যাচাই করা যায়। সে ক্ষেত্রে অবশ্য একটা বিষয় সামনে চলে আসে। দেশভেদে পণ্যের দাম ভিন্ন হয়ে থাকে। এ সমস্যার সমাধানে দেশভিত্তিক অর্থনৈতিক তুলনার জন্য পিপিপির আলোকে জিডিপির আকার হিসাব করা হয়।

একটি দেশ কেমন করে ধনী হয়
একটি দেশ কেমন করে ধনী হয়—এ প্রশ্নে উন্নয়ন অর্থনীতিবিদের কাছ থেকে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের চিন্তন প্রতিষ্ঠান ডিসকভারি ইনস্টিটিউটের সেন্টার অন ওয়েলথ অ্যান্ড পভার্টির ফেলো নাথান লুইস বিখ্যাত ফোর্বস সাময়িকীতে লেখা এক নিবন্ধে বিষয়টি তাঁর দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করেছেন।

কেন কিছু দেশ ধনী হয়, আর কেনই-বা অন্যগুলো হয় না, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নাথান চার শব্দের একটি ফর্মুলা বা সূত্র দিয়েছেন—‘নিম্ন কর, স্থিতিশীল অর্থ’। একে ‘ম্যাজিক ফর্মুলা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি।

নাথানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, কোনো দেশের ধনী হওয়ার প্রাথমিক উপায় হলো পুঁজিবাদ। কম কর ও স্থিতিশীল অর্থের ক্ষেত্রে পুঁজিবাদ সর্বোত্তমভাবে কাজ করে। অন্যদিকে, কর যদি খুব বেশি হয়, আর অর্থ যদি খুব অস্থিতিশীল হয়, তাহলে পুঁজিবাদ দুর্বল হয়ে পড়ে কিংবা তা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে। কোনো দেশ এ ‘ম্যাজিক ফর্মুলা’ কার্যকর করতে পারলে তার সম্পদ-সমৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

নাথানের ভাষ্য, ‘যখন আপনার কাছে ম্যাজিক ফর্মুলা থাকে, তখন আপনি অন্য সবকিছুই পেতে পারেন। আর যখন আপনার কাছে তা থাকবে না, তখন অন্য সবকিছু আপনার চোখের সামনে ভেঙে পড়বে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারপারসন রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীরের মতে, কোনো দেশ হুট করে ধনী বনে যায় না। রাউটলেজ থেকে প্রকাশিত তাঁর ‘ফিসক্যাল অ্যান্ড মনেটারি পলিসিজ ইন ডেভেলপিং কান্ট্রিজ: স্টেট, সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন’ শীর্ষক বইয়ে তিনি সমৃদ্ধি বা প্রগতির (ধনী অর্থে) ইতিহাসগত প্রক্রিয়া বর্ণনা করেছেন। এতে বলা হয়, কোনো দেশ ধাপে ধাপে কয়েকটি শর্ত পূরণের মধ্য দিয়ে প্রগতি অর্জন করে। ধাপগুলো হলো স্থিতিশীলতা, রূপান্তরযোগ্যতা ও টেকসই স্থায়িত্বশীলতা। তিনি শিক্ষা-স্বাস্থ্য-পরিবেশের উন্নতি, প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি, দক্ষ কর্মশক্তি তৈরি ইত্যাদিকে প্রগতির প্রয়োজনীয় শর্ত হিসেবে দেখিয়েছেন। এ ছাড়া মূল বা অপরিহার্য শর্ত পূরণের কথাও বলেছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নাগরিক রাষ্ট্র গঠন, অনানুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রীতি-নীতি-মূল্যবোধের উন্নয়ন।

সিঙ্গাপুর মডেল
অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এশিয়ায় চারটি ‘বাঘ’ থাকার কথা বলা হয়। এগুলো হলো সিঙ্গাপুর, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান। চার বাঘের মধ্যে সিঙ্গাপুর সবচেয়ে শক্তিশালী। বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক অর্থনীতির সাম্প্রতিক র‌্যাঙ্কিংয়ে সিঙ্গাপুরের অবস্থান পঞ্চম। সিঙ্গাপুরের ওপরে রয়েছে নেদারল্যান্ডস (চতুর্থ), ডেনমার্ক (তৃতীয়), সুইডেন (দ্বিতীয়) ও সুইজারল্যান্ড (প্রথম)।

আইএমএফের গত এপ্রিলের তথ্য অনুযায়ী, সিঙ্গাপুরে পিপিপি জিডিপিতে মাথাপিছু আয় ৯৭ হাজার ৫৭ ডলার। অথচ ১৯৬৫ সালে স্বাধীনতার সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্ষুদ্র দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা ধর্তব্যের মধ্যে ছিল না। তাহলে স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছরের মধ্যে কী করে সিঙ্গাপুর ধনী হলো এবং সেই ধারা তারা এখনো কেমন করে ধরে রেখেছে?

দক্ষিণ কোরীয় লেখক ও অর্থনীতি বিশ্লেষক জুন ইয়ুথ কাওন সম্প্রতি এশিয়া টাইমসে লেখা এক নিবন্ধে ধনী হওয়ার সিঙ্গাপুর মডেলের ব্যাখ্যা দেন। সিঙ্গাপুরের টেকসই সাফল্যের কিছু কার্যকর কারণ উল্লেখ করেছেন তিনি। এগুলো হলো ভৌগোলিক অবস্থান, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, সরকারি খাতে দক্ষ জনবল ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ।

জুন ইয়ুথ কাওন লিখেছেন, বাণিজ্য-কৌশলগত দিক দিয়ে বেশ সুবিধাজনক অবস্থান রয়েছে সিঙ্গাপুর। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ঠিক মাঝে দেশটির অবস্থান। ফলে, আশপাশের দেশগুলোর অন্যতম প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ টানা তিন দশক ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি কঠোর, সুশৃঙ্খল ও স্থিতিশীল শাসনের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরকে তৃতীয় থেকে প্রথম বিশ্বে নিয়ে যান। সিঙ্গাপুরে সরকারি মালিকানাধীন জমির সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরের যেসব মেধাবী তরুণ সরকারি বৃত্তি নিয়ে বাইরে পড়তে যান, তাঁদের বাধ্যতামূলকভাবে দেশে ফিরে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সরকারি চাকরি করতে হয়। দেশটিতে দক্ষ সরকারি কর্মীদের উচ্চ বেতন দেওয়া হয়।

সিঙ্গাপুর এশিয়ার অন্যতম করের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত। এখানে অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন করা হয় না। তা ছাড়া করও খুব কম। সিঙ্গাপুরে বহু খাতে ট্যাক্স নেওয়া হয় না। এই বাধাবিঘ্নহীন লেনদেনের কারণে সিঙ্গাপুরে বিদেশি বিনিয়োগ ক্রমেই বাড়ছে। অনেকে সিঙ্গাপুরে স্থায়ীভাবে বসবাসে আগ্রহী হচ্ছে। দেশটিতে সরকারি পরিবহনে যাতায়াত ও মালামাল বহন বেশ সস্তা। মূলত, এসব বিষয় সিঙ্গাপুরকে ধনী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে বলে মনে করেন জুন।

ব্রিটিশ-আমেরিকান অর্থনীতিবিদ ও লন্ডন বিজনেস স্কুলের অর্থনীতির অ্যাডজাংক্ট অধ্যাপক লিন্ডা ইউয়েহ বিবিসি অনলাইনে এক নিবন্ধে উল্লেখ করেন, প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরের মধ্যে ধনী হতে পেরেছে—বিশ্বের এমন গুটিকয়েক দেশের মধ্যে সিঙ্গাপুর অন্যতম। সিঙ্গাপুর যেভাবে ধনী হয়েছে, তার কিছু দিক উল্লেখ করেন লিন্ডা। তাঁর মতে, সিঙ্গাপুর সরকার কম শুল্ক আরোপের মাধ্যমে উদ্যোক্তা টানছে। এই উদ্যোক্তারা স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছেন। সারা বিশ্ব থেকে দক্ষ শ্রমিকেরা সিঙ্গাপুরে আসেন। সিঙ্গাপুরে প্রবাসীশ্রমিক আকৃষ্ট হওয়ার মূল কারণ সেখানকার উন্নত জীবনমান। বিদেশি উদ্যোক্তা ও শ্রমিকদের এ সংমিশ্রণ সিঙ্গাপুরকে ‘এশিয়ার সুইজারল্যান্ডে’ পরিণত করেছে।

সিঙ্গাপুর নিজেকে একটি বড় উৎপাদনকারী বা ম্যানুফ্যাকচারিং দেশ হওয়ার সক্ষমতা তৈরি করেছে বলে উল্লেখ করেন লিন্ডা। সংগত কারণেই সিঙ্গাপুরের অর্থনীতির একটা বড় অংশ আসে উৎপাদন খাত থেকে। লিন্ডার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সিঙ্গাপুর শুরুতে একেবারে সস্তা পণ্য উৎপাদন করত। তারা যাতে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে না পড়ে, সে জন্য দক্ষতার উন্নয়ন ঘটায়। কেননা, উচ্চ আয়ের দেশ হিসেবে বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রবেশের জন্য উচ্চস্তরের দক্ষতার প্রয়োজন। আর এ জন্য সিঙ্গাপুর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ খাতে প্রচুর বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি করে। আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলে সিঙ্গাপুর বিশ্বের সেরা প্রতিভা টানার কাজটি করে। সিঙ্গাপুর এখন অত্যাধুনিক ও দামি প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন করে। দেশটির রপ্তানির অর্ধেকই উচ্চ প্রযুক্তিপণ্য। এভাবে সিঙ্গাপুর নিজেকে একটি আন্তর্জাতিকমুখী অর্থনীতিতে পরিণত করেছে।

কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ
২০১৭ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ওয়েবসাইটে ‘দেয়ার কুড বি আ নিউ “এশিয়ান টাইগার”, হেয়ারস হোয়াই’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এ নিবন্ধে এশিয়ার নতুন বাঘ হিসেবে বাংলাদেশের আবির্ভাবের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়।

স্বাধীনতা-উত্তর দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৮৮ ডলার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, এখন তা ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার (নতুন ভিত্তি বছর ধরে এখন তা ২ হাজার ৫৫৪ ডলার)। দেশের জিডিপির পরিমাণ বেড়ে এখন হয়েছে ৩০ লাখ ৮৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আর ৪ নভেম্বর দিন শেষে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়, যা ২০১০ সালে ছিল মাত্র ৯ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে সব মিলিয়ে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আসে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের চেয়ে তা ৩৬ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, বিদায়ী অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশের মোট আয় হয় ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, করোনার বছরে কোটি টাকার বেশি আছে—এমন ১০ হাজার নতুন ব্যাংক হিসাব যুক্ত হয়েছে দেশের ব্যাংকব্যবস্থায়। আর ৫০ কোটি টাকার ওপরে আমানত রেখেছে—এমন হিসাবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৯০।

আইএমএফের সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২১ সালে চলতি মূল্যে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হবে ২ হাজার ১৩৮ দশমিক ৭৯৪ ডলার, যা ভারতের চেয়ে বেশি। ভারতের মাথাপিছু জিডিপি হবে ২ হাজার ১১৬ দশমিক ৪৪৪ ডলার।

ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি) ১০ অক্টোবর প্রকাশিত নিউজ বুলেটিনে বলেছে, গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। ৩০৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি জিডিপি নিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহত্তম অর্থনীতি। দারিদ্র্য হ্রাস করার ক্ষেত্রেও বিশ্বসেরাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

চলতি মাসের শুরুর দিকে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বার্ষিক গ্লোবাল রিসার্চ ব্রিফিংয়ে ব্যাংকটির দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিবিদ সৌরভ আনন্দ বলেন, ২০২১–২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। আর ২০২৫-২৬ অর্থবছর নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার হতে পারে ৫০০ বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয় উন্নীত হতে পারে ৩ হাজার ডলারে।

‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২১’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশটি হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি।

বাংলাদেশ যেভাবে ধনী হতে পারে
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ অবশ্যই ধনী দেশ হতে পারবে। ৩০ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। বাংলাদেশ ক্রমাগত নিজের জায়গায় উন্নতি করছে। এ উন্নতি ঠিক কাউকে ছোঁয়ার জন্য নয়। কর্মক্ষেত্রে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি, বেসরকারি খাতের ভূমিকা ও বিশ্বমুখীন চিন্তা উন্নয়নে অবদানে রাখছে। বাংলাদেশ একটি ম্যানুফ্যাকচারিং দেশে পরিণত হচ্ছে। ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে দেশের আরও উন্নতি হবে। তবে ধনী হতে হলে উন্নয়নের বর্তমান ধারণা ভেঙে সামনে অগ্রসর হতে হবে। বৈষম্যমুক্ত সমাজের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। উন্নয়নের সংকীর্ণ চিন্তা থেকে বেরিয়ে জাতির সামগ্রিক, বৈষয়িক, আত্মিক ঐশ্বর্যনির্ভর উন্নয়নের কথা ভাবতে হবে। আমাদের একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ধীরে ধীরে গড়ে তুলতে হবে। উন্নয়নের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোকেও বিবেচনায় নিতে হবে।

সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে একসময় বাংলাদেশের অবস্থার খুব বেশি পার্থক্য ছিল না বলে জানান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, ‘ওই দেশগুলো অর্থনৈতিক নীতির সঙ্গে মানব উন্নয়নকে যুক্ত করে অগ্রসর হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তারা ধারাবাহিকভাবে পরিকল্পনা নিয়েছে। তার বাস্তবায়ন করেছে। আমাদেরও ওই দেশগুলোর মতো ভালো করার সুযোগ ছিল। এখনো আছে। এ জন্য আমাদের বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কার আনতে হবে। অর্থনীতির বহুমুখীকরণ করতে হবে। অর্থনীতির সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয়াবলিও একটা চমৎকার সমন্বয় দরকার।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারপারসন রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, বাংলাদেশ যে একদিন ধনী রাষ্ট্র হবে, এ ব্যাপারে তিনি খুবই আশাবাদী। তিনি বাংলাদেশকে একটি নাগরিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন।

উন্নয়ন অর্থনীতির গবেষক ও অ্যাকটিভিস্ট মাহা মির্জা অবশ্য ‘ধনী রাষ্ট্র’ ধারণার সঙ্গেই একমত নন। তিনি বলেন, জিডিপি, রেমিট্যান্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক মানদণ্ডে একটা দেশ প্রচলিত অর্থে ধনী হতে পারে। কিন্তু এখানে দেখার বিষয় হলো সম্পদের সুষম বণ্টন হলো কি না। যদি গুটিকয়েক গোষ্ঠীর কাছে সম্পদ কুক্ষিগত থাকার মধ্য দিয়ে একটি দেশ ধনী হয়, তবে তা একদিকে অর্থহীন, অন্যদিকে অশ্লীলও। অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ সার্বিক দিক দিয়ে সমতা প্রতিষ্ঠিত হলে তবে তা একটি দেশের জন্য ইতিবাচক। জিডিপির চর্চা নয়, বরং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, জীবনমানসহ সামগ্রিক ক্ষেত্রে সমতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ যদি অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়, সে ক্ষেত্রেও তাকে প্রকৃত সমৃদ্ধি বলা যাবে। সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে এ পথেই হাঁটতে হবে।

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ নভেম্বর ০৭, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

,

ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪,শনিবার

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ