বন্ধুকে লেখা চিঠি
—————————–
প্রিয় আনোয়ার
আমাদের বন্ধুরা তোমার এই নামটায় চিনে না অনেকেই, রানা নাম ভালো করে চিনে।
আমরা কেউ মাষ্টার হতে চেয়েছিলাম, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।
অমলকান্তি সে-সব কিছু হতে চায়নি।
সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল!
আমরা কেউ মাষ্টার হতে চেয়েছিলাম, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল বা বড় ব্যবসায়ী বা সরকারী আমলা, কিন্তু সত্য সত্যই আমরা কেউ মাষ্টার, কেউ উকিল বা বড় ব্যবসায়ী বা সরকারী আমলা হতে পেরেছি তবে আমি বাদে।
আমি অমলকান্তির মত হতে চাই নি বা রোদ্দুরও হতে চাই নি, চেয়েছিলাম একজন ব্যাংককার হতে বা একজন ভালো চাকুরে, কিন্তু কোনটাই আমার হওয়া উঠে নি।
আমাদের একটা ধারনা আছে যারা লন্ডনে কাজে যায় তাঁরা হোটলে রান্না বান্না ও খাওয়ার পরিএষনের কাজ করে তুমিও
Copthorne Hotels London Gatwick & Effingham Park
Copthorne Way,
West Sussex,
সামে একটা হোটেলে কাজ কর তবে লেখা-পড়া শিখে Cluster Financial Controller এর পদে। গত ফ্রেরুয়ারীতে তুমি ঢাকা এলে, সম মনা সব বন্ধুদের সাথে সবার একটা যোগাযোগ ছিল, কিন্তু আমার সাথে কারো কোন যোগাযোগ ছিল না, আমি অমলকান্তির হয়তো তোমাদের মত অনেক কিছু হতে চায়নি বা রোদ্দুর হতে চাই নি। অথবা তোমাদের মত অনেক কিছু হতে পারি নি। দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাওয়া সময়ে সাথে পাল্লা দিয়ে আমি চলতে না পেরে ক্রমাগত আমি পিছিয়ে পড়ার দলে ছিলাম বলে আমার আর উঠে দাঁড়ানো হয় নি, তোমাদের সাধে যোগাযোগ রাখা হয় নি, আমার খবর তোমরা জানতে, কোথায় কোন কোম্পানীতে আমার জীবন মিশিয়ে দিয়েছি শুধু মাত্র বেঁচে থাকার জন্য, আমার সম্পর্কে তোমাদের একটি ভুল থারণা ছিল যেমন একটি ভালো চাকুরীতে একটি ভালো জীবন যাপন করে যাচ্ছি।
ঢাকায় এসে তোমার সম মনা বন্ধুদের সাথে এক সাথে দেখা করলে, একটি গেট টুগেদার করতে চাইলে সেখানে তুমি আমাকে ও দেখতে চাও। আমাকে অবাক দরে দিয়ে ফোন করলে গেট টুগেদারে আমাকে দেখতে চাও।
সকলেই তোমরা তোমাদের জীবনের সাফল্য গাঁথা কাহিনী বলে যেতে থাকলে, আমি অনেক অনেক পিছনে পড়ে আছি তোমাদের চেয়ে। আমার মুখ থেকে তেমন কোন কথা বের হলো না, তোমাদের শিক্ষা জীবনের সেই প্রাণ চাঞ্চল্য আমাকে আর সেই ভাবে দেখতে পেলে না।
ধাক সে সব কথা, সেই ছাত্র জীবন থেকে এই কর্ম জীবনে আজ পর্যন্ত অনেক পথ পাড়ি দেওয়া হয়েছে, আমার জীবন টা তেমন ঘটনা বহুল ছিল না তবে কখনও মনে হয়েছে মনের দিক দিয়ে জীবনটা বেশ ঘটনা বহুল ছিল।
মনের দিক থেকে আর্থিক দিকের মধ্যে অনেক পার্থক্য, মন যতই উন্নত হোক, বিশুদ্ধ হোক না কেন বিশেষ করে আমাদের দেশে উন্নত বা বিশুদ্ধ মনের তেমন কোন মূল্য থাকে না। রাজধানীতে কতটা ফ্লাট বাড়ি হয়েছে, ব্যাংককে কতটাকা জমা হয়েছে এখনও প্রতি মাসে কত টাকা জমা হচ্ছে, বাচ্চারা কোন কোন নামী দামী স্কুলে পড়ছে ! কে কোন ধরণের গাড়ি চালাচ্ছে – এটাই জীবনের সাফল্য মাপার নির্ধারক এখন। সীমা-পরিসীমা ছাড়িয়ে যাদের যত আয় অর্জন এ সমাজ তাঁদেরকে বড় জায়গা করে দিচ্ছে, কিম্বা সন্মান। সীমা-পরিসীমা ছাড়িয়ে আয় অর্জনের পিছনে কে না ছুটছে ! এবার একটা বিখ্যাত কথা এসে যায় ” আংগুর ফল টক।” অন্য কারো বলার দরকার নেই আমি নিজেকেই বলি সীমা-পরিসীমা ছাড়িয়ে আয় অর্জনের পথে চলতে পারি নি বলে এই সব জীবনকে টক বলে নিজেকে সান্তনা দিয়ে যাচ্ছি।
লেখাপড়ার অর্জিত সনদ পত্রগুলিকে মূল্যহীন করে দিয়ে একটি কারিগরি পেশায় নিজের জীবনকে বলা যায় বিলিয়ে দিয়েছিলাম যেখান নিজের সংসার ছোট্ট্ সন্তানের প্রতি খেয়ালও করা হত না, দুই এক কলম লেখার প্রশ্নও আনত না। আয় অর্জনের পথটা আমার কাছে বড় কঠিন মনে হয়েছিল কিন্তু যথন দেখলাম আমার কর্ম জীবন আমার সমস্ত চিন্তা চেতনাকে কিনে নিচ্ছে তখন ধীরে ধীরে কর্ম জীবনে কম সময় দিতে থাকলাম, লেখার কলমে হাত দিলাম, যখন হাত দিলাম তখন দেখলাম এভাবেও অনেক পিঠিয়ে পড়ে আছি, এখানেও পিছিয়ে পড়ার দলে।
একজন উন্নত মন মানসিকতার মানুখকে বুঝানো যায় যে, জীবনে চলান পথে অর্থের অনেক প্রয়োজন, অনেক মূল্য কিন্তু সীমা-পরিসীমা ছাড়িয়ে যাদের আয় অর্জন তাদেরকে বুছান োযায় না যে একজন উন্নত মন মানসিকতার মানুষেরও অনেক মূল্য। তাদের ভাবনার, চিন্তার পথ বা আকাশ খুবই সংকির্ণ
তারিখ মার্চ ০৫, ২০১৪
রেটিং করুনঃ ,