Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

বই রিভিউ- ” আমার মায়ের বাপের বাড়ি – লেখিকা : রানী চন্দ ।

Share on Facebook

#আমার মার বাপের বাড়ি

রানী চন্দর লেখা আমি আগে কখনো পড়িনি । আমার সরল স্বীকারোক্তি শুনে হায় হায় করে ওঠে বান্ধবীদ্বয় । আমার নাকি জীবনের বারো আনাই বৃথা ! ভারি রেগেমেগে একলা ঘুরতে চলে যাই কলেজস্ট্রিট , কিনে ফেলি গোটা দুয়েক রানী চন্দর বই । তারই একটি হল ” আমার মা’র বাপের বাড়ি ( আজ্ঞে হ্যাঁ , শিরোনামে ভুল আছে , হাইলাইটের স্বার্থে ) ।

নাহ কোনো গল্প উপন্যাস প্রবন্ধ নয় । মামাবাড়ির গ্রামে বালিকা লেখিকার কয়েকবছর থাকার বর্ণনা । সাদামাটা , সহজসরল , ঝরঝরে ভাষায় যেন মা ঠাকুমার গল্প বলার ওম লেখায় প্রতি পরতে জড়িয়ে । স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ লেখিকাকে বলেছিলেন তার ছোটোবেলার গ্রামের স্মৃতি গুলি লিখে ফেলতে। বলেছিলেন ,

” গ্রামে ভালোর দিকটা যেমন আছে খারাপ দিকও আছে। খারাপ দিকটা বাদ দিয়ে যা সুন্দর—- সেইটুকুই শুধু ছবির মতো ফুটিয়ে তুলবি। গ্রামের জীবন তো আর পাবি না ফিরে। লেখ্— লিখে ফেল্ ।”

গুরুদেবের কথা অমান্য করেননি লেখিকা । শুরু থেকে শুরু করেছেন। বিক্রমপুরের গঙ্গাধরপুরে লেখিকার মামাবাড়ি । বাবার বাড়ি ঢাকা। স্বামীর মৃত্যুর পর পূর্ণশশীদেবী পাঁচ নাবালক পুত্রকন্যা নিয়ে কয়েকবছর থাকেন তার বাপের বাড়িতে । সেই সময়ের গ্রামীন যাপনের দিনলিপি এই বই ।প্রথম প্রথম বছরে দুইবার বেড়াতে যাওয়া হত লেখিকার মামাবাড়ি । মামারা এসে তিনমাল্লাই নৌকায় করে নিয়ে যেতেন তাদের বুড়িগঙ্গা , ধলেশ্বরী পেরিয়ে ইছামতীতে। লেখিকার মা আট ভাইয়ের একমাত্র বোন তাই আদর যত্ন খুব।

প্রথম পর্বে গ্রামের বাড়ির কাঠামোর বর্ণনা দিয়েছেন লেখিকা । চালের নীচে কার , মুলিথাম , তাক , শিকা , পৈঠা , মধুখাম , নিরিমিষ রান্নাঘর , পুব- পশ্চিম- উত্তর- দক্ষিণ বারোঘর এক উঠোনের বিবরণ , সঙ্গে প্রতিবেশী ও গ্রামের সব বাড়ির বর্ণনা , মানুষজনের বৈশিষ্ট্য ছুঁয়ে গেছেন । মানুষের সুখ , দুঃখ , শোক , মুদ্রাদোষ , স্বভাব , বাতিক , কাজের ধরন , আর্থিক অবস্হা , সন্তানাদি সমস্তই বিবৃত করেছেন সুচারুভাবে। একজায়গায় লিখেছেন ,

” এই কান্নার মধ্যেও আছে কত রকমের সুর। সুর শুনে বোঝা যায় কিসের কান্না ।
শশধর চৌধুরী বউকে ধরে মারে , সেই কান্নার সুর আর – এক রকমের। আর শোকের যে কান্না— তার সুর একেবারে আলাদা । ”

দ্বিতীয় পর্যায়ে তুলে ধরেছেন গ্রামের সংস্কৃতি , উৎসব , বারব্রত । প্রতি মুহুর্তে ছড়া কেটে বা পাঁচালী উদ্ধৃত করে বর্ণনা করেছেন আরাইলের বিল বা নদী পুকুরে সুবচনীর ব্রত , বালিকাদের লালুব্রত , তারাব্রত , মাঘমন্ডল ব্রত , পুণ্যিপুকুর ব্রত , নাটাইমঙ্গলচন্ডীর ব্রত। গ্রামের বিয়ে , পাটিপত্র , অধিবাস , জলভরা ,বউবরণ , রাম সীতাকে নিয়ে বিয়ের গান কত বর্ণনা । গ্রামের কীর্তন , হরিরলুঠ , দিদিমার ফুল ফল দেখে মরশুম বা সময়ের হিসাব রাখা , নিরুদ্দেশ বড়মামা , বড়মামীমার পাঠশালা কত কত নতুন দিক গ্রামীন জীবনের ।

জলের দেশ । গাবের আঠা দিয়ে নৌকা মাজার গল্প , চাড়ি বাওয়ার গল্প আর ওহ মাছধরার গল্প । বিলের জলে লম্বা দড়িতে সারি সারি বড়শিতে জ্যন্ত কই শিঙির টোপ দিয়ে জিলা পাতেন লেখিকার মামারা । জল নড়লে নৌকায় করে এসে মাছ তুলে নিয়ে যান । ঢাইনমাছ , সাদা বোয়াল , কালো বোয়াল। শীতকালে পলো দিয়ে ধরা কইমাছ । কচুরিপানার শিকড়ে কানকো আটকে শীতকালে ঝোলে কই মাছ , বুক লাল তেলে ভরা স্বাদের কই। জল জমলে শিঙি মাগুর বেলে , নদীর ধার থেকে কাছিম , কালি কাউঠঠা , উবা কাউঠঠা । পুকুর গাবিয়ে উঠলে বাতাসী , চেলা , মেনী , ট্যাংরা ,চাঁদা ।

পরের পর্যায়ে গ্রামের মেয়েদের দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি সবরকমের কাজের বিবরণ । আহা আলপনা দেওয়াও এক কাজ । বিয়ের আলপনায় সব জোড়ে , লক্ষ্মী পুজোর আলপনা হবে উঠোনে , পদ্মফুল , অষ্টদল , শতদল , সহস্রদল । তারপর পদ্ম ঘিরে লতা — শঙ্খলতা , চালতেলতা ,কলমীলতা , খুন্তিলতা , চিরুনিলতা , কলালতা , অনন্তনাগ । শেষ হয় যাত্রাকলস দিয়ে । বাচ্চারা দেয় লক্ষ্মীর পাড়া ( জোড়া পায়ের ছাপ ), ধানছড়া ।

সম্বৎসরের মুড়িভাজা , চিড়েকোটা , গুড় জ্বাল , ছাঁচের সন্দেশ , কাসুন্দি , আমসত্ত্ব বানানো — কাজ কিছু কম নয় বৌ ঝি দের । গুড়েরই কত রকমফের । ক্ষীরপাটালি , এলাচ কর্পূর দিয়ে পোশাকি গুড় , নারকেলি গুড় , মুছিগুড় । অবসরে পলতে কাটা , জোত বানানো , রঙিন সুতোর শিকা বানানো , কাঁথা বোনা , ছাঁচ কাটা , গুছি বানানো — কাজ বড় কম নয় গাঁ ঘরে ।

গ্রামের গাছপালা , শাকসবজি , ফলপাকুড় , ছেলেদের কাজ , মেলা মোচ্ছব সব ছুঁয়ে গেছেন লেখিকা সহজ সরল ভাবে , কলমে তার অসাধারণ গল্প বলার মায়া বুলিয়ে । আমরা যারা অতি সাধারণ , মধ্যমেধার , যারা কঠিন জীবনদর্শণ বুঝিনে তেমন করে , যারা ইন্দুবালা ভাতের হোটেল পড়ে মুগ্ধ হয়ে যাই , সেইসময় বা প্রথম আলোর সাথে তুলনা করতে যাইনে , যারা জগন্নাথদেব মন্ডল বা সায়ন্তন ঠাকুরের মায়ার লেখায় বুঁদ হয়ে থাকি তাদের বোধকরি এ বই ভালো লাগবে । জীবনের নেতিবাচকতা , অবসাদ , চাতুর্য , হিসেব , শোক পেরিয়ে যারা একটু মায়া খুঁজি , তাদের ভালো লাগতে পারে এই বই ।
©স্বাতী ব্যানার্জ্জী ।
” আমার মা’র বাপের বাড়ি ”
লেখিকা : রানী চন্দ ।
প্রকাশক : বিশ্বভারতী।
মুদ্রিত মূল্য : ₹ 120/-

সূত্র:সংগৃহিত।
তারিখ: মার্চ ১৬, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ