Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

ফ্রাঙ্কফুর্ট–দিল্লি: শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার অনিশ্চিত যাত্রা (২০২১)

Share on Facebook

লেখক: সরাফ আহমেদ

ব্রাসেলস, বেলজিয়াম। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ছিলেন রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের বাসভবনে। সেখানে শেখ হাসিনার সঙ্গে আরও ছিলেন স্বামী ওয়াজেদ মিয়া এবং দুই শিশুসন্তান জয় ও পুতুল।

পশ্চিম জার্মানির রাজধানী বন থেকে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সানাউল হকের বাসভবনে ফোন দিয়ে জানালেন ঢাকায় ঘটে যাওয়া ভয়ংকর খবর। ওয়াজেদ মিয়া যখন জানতে পারলেন বঙ্গবন্ধু আর নেই, তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। ঢাকায় আর কে কে বেঁচে আছেন, সেই সংবাদও কেউ জানেন না।

ব্রাসেলসের সেই বাসভবন ছেড়ে তাঁরা চলে এলেন বনে রাষ্ট্রদূত চৌধুরীর বাসভবনে। ক্রন্দনরত দুই বোনকে হাত ধরে দোতলায় নিয়ে গেলেন রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী মাহজাবীন চৌধুরী আর দূতাবাসের প্রথম সচিব তারিক এ করিমের স্ত্রী নাগমা করিম। ইউরোপের সংবাদমাধ্যম খবর রটাল, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে বনে রাষ্ট্রদূতের বাসায় বন্দী করে রাখা হয়েছে। তাঁদের যে বন্দী করা হয়নি, সে জন্য সাংবাদিকদের সামনে এসে দাঁড়াতে হলো দুই বোনকে।

বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন ১৫ আগস্ট এসেছিলেন বনে এবং সেখানে রাত যাপনও করেছিলেন। ওই দিন সন্ধ্যায় বনে রাষ্ট্রদূতের বাসভবনের ড্রয়িংরুমে বসে ড. কামাল হোসেন, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ও ওয়াজেদ মিয়া উত্কণ্ঠিত অবস্থায় বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা ও অন্যান্য রেডিও স্টেশন থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতে থাকেন। তখন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী দুজনই শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাদের নানাভাবে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। দিচ্ছিলেন সাহস ও অভয়। কিন্তু ঘটনা সম্পূর্ণ না জানলেও তাঁরা দুজনেই ভেঙে পড়েন।

১৫ আগস্ট থেকেই অত্যন্ত গোপনে রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করিয়ে দেওয়া যায় কি না, সেসব নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন। ১৬ আগস্ট রাষ্ট্রদূত চৌধুরী পশ্চিম জার্মানিতে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত মহম্মদ আতাউর রহমানের সঙ্গে তাঁদের ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়লাভের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। রাষ্ট্রদূত আতাউর রহমান বিষয়টি নিয়ে তাঁর দুই সহকর্মী ভারতীয় দূতাবাসের প্রথম সচিব অরুণ পাটবর্ধন এবং কাউন্সেলর ও ডেপুটি চিফ (পলিটিক্যাল) সি ভি রঙ্গনাথনের সঙ্গে কথা বলেন।

মুজিব-কন্যাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের এ বিষয়টি দিল্লিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে খুব দ্রুত ও গুরুত্বসহকারে জানানো হয়। দুই দিন পরই দিল্লির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জবাব আসে। তাতে বলা হয়েছিল, শিগগিরই যেন তাঁদের দিল্লি পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তবে বিষয়টি খুব গোপনে ও দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে এবং শেখ হাসিনার পরিবারের বাইরে কাউকে যেন বিষয়টি সম্পর্কে কিছু জানানো না হয়। শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগের স্বার্থে কেবল রাষ্ট্রদূত চৌধুরীকে বিষয়টি জানানো হয়। ভারতীয় কর্মকর্তাদের তরফ থেকে আরও একটি বিষয়ে বলা হয়, শেখ হাসিনাদের যেন এয়ার ইন্ডিয়ার প্লেনে সরাসরি দিল্লিতে পাঠানো হয়।

পশ্চিম জার্মানির কার্লসরুয়েতে ওয়াজেদ মিয়ার ঘনিষ্টজন ছিলেন শহীদ হোসেন। দিল্লি যাওয়ার আগের দিন সন্ধ্যার দিকে শহীদ হোসেনকে ওয়াজেদ মিয়া বলেন, ‘আগামীকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমরা ফ্রাঙ্কফুর্ট যাব, তোমাকেও সঙ্গে থাকতে হবে।’ শহীদ হোসেন তাঁর সম্মতি জানান।

এ সময় রেহানা কাঁদতে কাঁদতে শহীদ হোসেনকে একটি ছোট মিনোল্টা ক্যামেরা দিয়ে বলেন, ‘শহীদ ভাই এটা আপনার কাছে রেখে দেন। এটি সঙ্গে এনেছিলাম আমাদের ইউরোপ ভ্রমণের কিছু ছবি তুলব বলে। কিন্তু সে সুযোগ আর হলো না। কিন্তু ক্যামেরায় ছবি তোলা একটা রিল আছে, যেটি বের করতে হবে।’

শেখ রেহানা শহীদ হোসেনকে আরও বলেন, ‘এই ক্যামেরা দিয়ে আমার দুই ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামালের বিয়ের ছবি তুলেছিলাম, এই রিলে সেই ছবিগুলিই আছে। ভেবেছিলাম ছবিগুলি এখানে ওয়াশ ও প্রিন্ট করব, সেই সুযোগ তো আর হলো না। কোনো সময় পারলে ফিল্ম ওয়াশ করে ছবিগুলি আমাকে প্রিন্ট করে দেবেন।’ এই কথা বলে রেহানার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়তে থাকে। শেখ রেহানার এই কথাগুলো শুনে শহীদ হোসেনও কাঁদতে থাকেন।

পরবর্তী সময়ে দিল্লি পৌঁছে, ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫ শেখ হাসিনা জার্মানির কার্লসরুয়ে শহরে অবস্থানরত শহীদ হোসেনকে চিঠিতে লেখেন, ‘ফটোগুলি এলে আপনার কাছে রাখবেন। সবই তো হারিয়েছি। ওগুলি থাকবে শুধু স্মৃতি হয়ে।’

দিল্লি অধ্যায়

শেখ হাসিনারা ২৪ আগস্ট বিকেলের দিকে ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হন। ২৫ আগস্ট খুব ভোরে তাঁরা দিল্লি পৌঁছান। পালাম বিমানবন্দরে নামার পর তাঁদের প্রায় চার ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। ভারত সরকারের একজন যুগ্ম সচিব তাঁদের স্বাগত জানান। তাঁদের প্রথমে ৫৬ নম্বর রিং রোডের একটি ‘সেফ হাউস’-এ রাখা হয়। পরে ডিফেন্স কলোনির একটি বাড়িতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই বাসায় ছিল একটি ড্রয়িং-কাম-ডাইনিংরুম এবং দুটি বেডরুম। তাঁদের তিনটি পরামর্শ দেওয়া হয়। এক. বাড়ির বাইরে না যাওয়া, দুই. সেখানে কারও কাছে তাঁদের পরিচয় না দেওয়া এবং তিন. দিল্লিতে কারও সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা।

১০ দিন পরে অর্থাৎ ৪ সেপ্টেম্বর ভারতের একজন সরকারি কর্মকর্তা তাঁদের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সরকারি বাসভবন ১ সফদরজং রোডের বাসায় নিয়ে যান। সেই সময় ইন্দিরা গান্ধীকে শেখ হাসিনা জিজ্ঞেস করেন, ‘১৫ই আগস্ট ঠিক কী হয়েছিল?’ সেখানে উপস্থিত একজন অফিসার শেখ হাসিনাকে বলেন, তাঁর পরিবারের আর কেউ জীবিত নেই। এসব শুনে তাঁরা দুই বোন কান্নায় ভেঙে পড়েন। ইন্দিরা গান্ধী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘তোমার যা ক্ষতি হয়েছে, তা তো পূরণ করা যাবে না। তোমার তো এক ছেলে, এক মেয়ে আছে। আজ থেকে ছেলেকে নিজের বাবা আর মেয়েকে নিজের মা বলে মনে করো।’ ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাতের দিন দশেক পরে তাঁদের ইন্ডিয়া গেটের কাছে পান্ডারা পার্কের সি ব্লকের একটি ফ্ল্যাটে নেওয়া হয়। ওই ফ্ল্যাটে তিনটি শোবার ঘর আর কিছু আসবাবও ছিল। পরে শেখ হাসিনা নিজেই কিছু কিছু আসবাব কিনেছিলেন। তাঁর ওপর কড়া নির্দেশ ছিল, তিনি যেন ঘরের বাইরে না যান অথবা কারও সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ না করেন। খবর দেখার জন্য একটা সাদা–কালো টেলিভিশন সেটও দেওয়া হয়। ভারতের টেলিভিশনে শুধু দুই ঘণ্টার জন্য দূরদর্শনের অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো। সেই সময় তাঁদের বাড়িতে কোনো টেলিফোন সংযোগ দেওয়া হয়নি।

শেখ হাসিনারা দিল্লিতে পৌঁছানোর পর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী প্রণব মুখার্জিকে বলেছিলেন, ‘আপনি এখন থেকে দিল্লিতে ওদের অভিভাবক।’ কূটনীতিবিদ তারিক এ করিম এ লেখককে জানান জার্মানিতে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত মহম্মদ আতাউর রহমান তাঁকে এ কথা বলেছিলেন। সেই সময় প্রণব মুখার্জি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশ্বস্ত সহকর্মী ছিলেন।

বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্দিরা গান্ধীর সরকারের মন্ত্রী প্রণব মুখার্জি ও তাঁর পরিবার শেখ হাসিনার পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলত। শেখ হাসিনার সন্তানদের মাঝেমধ্যেই মি. মুখার্জির সরকারি বাসভবনে খেলতে দেখা যেত। নিজের বই ড্রামাটিক ডিকেড-এ প্রণব মুখার্জি সে সময়ের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে লিখেছেন যে দুটি পরিবারের মধ্যে মাঝেমধ্যে শুধু দেখাই হতো না, দিল্লির বাইরে একত্রে পিকনিকেও যাওয়া হতো।

নতুন এক জীবনযুদ্ধ

কার্লসরুয়ে থেকে ফ্রাঙ্কফুর্ট হয়ে দিল্লি পৌঁছানোর পর শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার শুরু হয় নতুন এক জীবনযুদ্ধ। ২০১৩ সালে লন্ডনে শেখ রেহানা এক সাক্ষাত্কারে লন্ডনপ্রবাসী সাংবাদিক সৈয়দ আনাস পাশাকে বলেন, ‘বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছিল জয় আর পুতুল। সারা দিন বিছানায় পড়ে থাকতাম, খাওয়াদাওয়া কিছুই নেই। জয়-পুতুল যখন কেঁদে উঠত তখন তাদের খাবার দিতে স্বাভাবিক হতে হতো আমাদের।’ তিনি বলেন, ‘শুধুই আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতাম। দুলাভাইয়ের এক বন্ধু ড. শহীদ হোসেন, কার্লসরুয়ে শহরে আমাদেরকে কিছু দোয়া লিখে দিয়ে বলেছিলেন, কান্নাকাটি না করে তোমরা এ দোয়াগুলো পড়তে থাকো। এই দোয়াগুলো পড়তে থাকলাম আমরা। আপাকে সান্ত্বনা দেই আমি, আমাকে সান্ত্বনা দেন আপা। এই আমাদের অবস্থা।’

ইন্দিরা গান্ধীর স্নেহ

হাসিনা: আ ডটারস টেল তথ্যচিত্রে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিসেস গান্ধী যেহেতু আমাদের মেসেজ পাঠালেন, সে ব্যবস্থা অনুযায়ী আমরা ইন্ডিয়াতে চলে আসি। মিসেস গান্ধী আমাদের দেখাশোনা করার জন্য একজন অফিসার ঠিক করে দিয়েছিলেন। একটা বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা, সিকিউরিটির ব্যবস্থা করে দিলেন আর ওয়াজেদ সাহেবকে একটা চাকরিও দিলেন অ্যাটমিক মিনারেল এক্সপ্লোরেশনে। মিসেস গান্ধী ছিলেন খুবই মানবিক চরিত্রের। আমাদের খুবই স্নেহের চোখে দেখতেন। একবার আমরা আজমির শরিফে গিয়েছিলাম রেহানা আর বাচ্চাদের নিয়ে। তো আমরা ওখানে থাকতেই উনি একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিলেন ওনার সঙ্গে দেখা করার। আবার আমরা আসার সময় আমাদের গাড়িটা নষ্ট হলো। তাতে সময় নষ্ট হয়ে গেল। তখন রেহানা বলল যে বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে আবার তৈরি হয়ে যাওয়া তো সম্ভব না। তো তুমি একাই চলে যাও। তাই ফিরে গাড়ি থেকে নেমেই কোনোমতে কাপড়টাপড় চেঞ্জ করেই আমি দৌড়ালাম ওনার সঙ্গে দেখা করতে। তো একটু কথা বলার পর উনি আমার মুখটা দেখে বললেন, তুমি…তুমি কিছু খেয়েছ? তুমি অমলেট খাবে? টোস্ট খাবে? চা খাবে? উনি উঠে গিয়ে সেই অমলেট, টোস্ট আর চা নিয়ে এলেন। নিজে কাপে চা ঢেলে দিলেন, আমাকে বললেন, তুমি খাও। তোমার মুখটা একদম শুকনা। তুমি কিচ্ছু খাওনি। আসলে এই যে স্নেহটা, ভালোবাসাটা, ঘরোয়া ভাবের যে ব্যবহারটা, সেটা ভোলা যায় না। সত্যি কথা বলতে কি ওই সময়ে ওনার সামনে গিয়ে এইটুকুই অনুভূতি হচ্ছিল—না, আমাদের জন্য কেউ আছে।’

(প্রথমা প্রকাশন থেকে সদ্য প্রকাশিত সরাফ আহমেদের বই ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড: প্রবাসে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার দুঃসহ দিন-এর তিনটি অধ্যায় থেকে সংক্ষেপিত)

লেখক: সরাফ আহমেদ: প্রথম আলোর জার্মানি প্রতিনিধি [email protected]

সূত্র: পোথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ১৫, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ