সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের নাম পরিবর্তন নিয়ে এখন শোরগোল চারিদিকে। সম্প্রতি ফেসবুকের একজন কর্মচারী চাকরি ছাড়ার পর ওই কোম্পানি সম্পর্কে বিভিন্ন গোপন তথ্য ফাঁস করে। এরপর একের পর নেতিবাচক খবর প্রকাশ হতে থাকে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই নাম পরিবর্তন করলো ফেসবুক।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির কর্পোরেট নাম ‘মেটা’ করার পর ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, এটির পরিসর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বাইরেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটির (ভিআর) মতো ক্ষেত্রগুলোতে বাড়িয়েছে। তবে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো স্বতন্ত্র প্ল্যাটফর্মগুলোর কোন নাম পরিবর্তন হচ্ছে না। নাম বদলাবে শুধুমাত্র তাদের মালিকানাধীন মূল কোম্পানির।
২০১৫ সালে গুগল তাদের মূল কোম্পানির নাম বদলে অ্যালফাবেট রাখে। তবে এই নামটি সামনে আসেনি।
১৭ বছর আগে একটি কলেজ ডর্ম রুমে একটি সামাজিক নেটওয়ার্ক হিসাবে যাত্রা শুরু হয়েছিল ফেসবুকের। কিন্তু ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং মেসেঞ্জার সেবা মিলিয়ে প্রযুক্তি সেবার বাজারের একটা বড় অংশ এখন ফেসবুকের দখলে। হার্ডওয়্যার ও অনলাইন লেনদেন সেবানির্ভর ব্যবসা এখনও আঁতুর ঘড়ে থাকলেও এই খাতেও এগোচ্ছে ফেইসবুক।
চলতি বছরেই জাকারবার্গ ঘোষণা দিয়েছিলেন, এক সময়ে প্রতিষ্ঠানটি ‘মেটাভার্স নামে পরিচিত হবে। এরপর রে-ব্যানের সঙ্গে জোট বেঁধে স্মার্ট-গ্লাস উন্মোচন করে পেশাদারি কাজে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের জন্য ভার্চুয়াল রিয়ালিটি হেডসেটের পরিকল্পনার ঘোষণা দেন জাকারবার্গ। দীর্ঘ দিনের পুরনো বন্ধু অ্যান্ড্রু বসওর্থকে পদোন্নতি দিয়ে প্রতিষ্ঠানের নতুন চিফ টেকনোলজি অফিসার বানিয়েছেন তিনি।
পরবর্তীতে, ইউরোপের বাজারে ‘মেটাভার্স সংশ্লিষ্ট পদে ১০ হাজার নতুন কর্মী নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দেয় ফেসবুক।অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় হার্ডওয়্যার বিভাগ নিয়ে ভবিষ্যত প্রতিবেদনে আলাদা লাইন হিসেবে যোগ হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন জাকারবার্গ; এই খাতে বিনিয়োগের ফলে ২০২০ সালের মুনাফা এক হাজার কোটি ডলার খরচ হবে বলে জানান তিনি।
ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ জানান, মূলত ‘মেটাভার্স’ নামে একটি অনলাইন দুনিয়া তৈরির পরিকল্পনা উন্মোচন করেছেন – যেখানে মানুষ ভার্চুয়াল পরিবেশে ভিআর হেডসেট ব্যবহার করে বিভিন্ন কাজ করার পাশাপাশি, গেইম খেলা এবং যোগাযোগ করতে পারবে।
এক ভার্চুয়াল কনফারেন্সে তিনি বলেন, ‘আমরা যা কিছু করছি এবং ভবিষ্যতে করব, সেটা বিদ্যমান ব্র্যান্ডটি সম্ভবত উপস্থাপন করতে পারছে না, তাই পরিবর্তন দরকার। আমি আশা করি যে সময়ের সাথে সাথে আমাদের মেটাভার্স কোম্পানি হিসাবে দেখা হবে। আর আমরা সামনে যা তৈরি করতে যাচ্ছি, সেটার ওপর ভিত্তি করেই আমাদের কাজ ও পরিচয় গড়ে উঠবে।’
জাকারবার্গ বলেন, ‘আমরা এখন আমাদের ব্যবসাকে দুটি ভিন্ন অংশ হিসাবে দেখছি, একটি অংশ আমাদের অ্যাপস পরিবারের জন্য এবং আরেকটি অংশ ভবিষ্যতের প্ল্যাটফর্মে কাজের জন্য৷ আর তাই সময় এসেছে নতুন ব্র্যান্ড গ্রহণ করা, যাতে আমরা যা কিছু করি, আমরা কে এবং আমরা কী তৈরি করতে চাই – এই বিষয়গুলোকে প্রতিফলিত করে।’
ফেসবুক গত বৃহস্পতিবার ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্কে তাদের সদর দপ্তরে একটি নতুন সাইনবোর্ড উন্মোচন করেছে। যেখানে থাম্বস-আপ ‘লাইক’ লোগোটিকে সরিয়ে একটি নীল অসীম আকৃতির লোগো বসিয়েছে।
মার্ক জাকারবার্গ জানিয়েছেন, সময়ের সাথে সাথে ব্যবহারকারীদের কোম্পানির অন্যান্য পরিষেবাগুলো ব্যবহারের জন্য আর ফেসবুক ব্যবহার করা লাগবে না। নতুন নামটি সেই বিষয়টি প্রতিফলিত করে। ‘মেটা’ শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ থেকে, যার অর্থ ‘গণ্ডির বাইরে’।
একজন বহিরাগতের কাছে, মেটাভার্স দেখতে ভিআর-এর একটি সংস্করণের মতো হতে পারে, কিন্তু কিছু মানুষ বিশ্বাস করে যে এটি ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ হতে পারে। সেখানে মানুষ কম্পিউটারে কাজ করার পরিবর্তে, মেটাভার্স নামের ভার্চুয়াল জগতে হেডসেটের সাহায্যের প্রবেশ করতে পারবে। যেখানে সব ধরণের ডিজিটাল পরিবেশের সাথে সংযোগ স্থাপন করা যাবে৷ ভার্চুয়াল জগতটি কাজ, খেলা এবং কনসার্ট থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাথে যোগাযোগের জন্যও ব্যবহার করা যাবে।
ফেসবুক বলছে, তারা পহেলা ডিসেম্বর থেকে নতুন স্টক টিকার এমভিআরএস-এর অধীনে তাদের শেয়ার লেনদেন শুরু করতে চায়।
সূত্রঃ সমকাল।
তারিখঃ অক্টোবর ২৯, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,