বিবিসি বাংলা।
আকস্মিক বন্যায় কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলা। টেলিযোগাযোগসহ সব ধরনের যোগাযোগ থমকে যাওয়ায় বন্যাদুর্গত পরিবার ও স্বজনদের খোঁজখবর খবর না পেয়ে উদ্বেগে সময় কাটছে অনেকের।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ফেনী জেলা। এই জেলার বাসিন্দাদের স্মৃতিতে এমন বন্যার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তাই, আকস্মিক বন্যায় পূর্ব প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগও পাননি অনেকে।
এমন বাস্তবতায় উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকা কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে জানাচ্ছেন, ফেনীতে থাকা পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘসময় ধরে কোনোরকম যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেননি।
কারো ক্ষেত্রে সময়টা কয়েক ঘন্টা, কারো কয়েকদিন।
তেমনই একজন আদিত্য আরাফাত।
বাংলাদেশের একটি বেসরকারি গণমাধ্যমে কর্মরত মি. আরাফাত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে জানান, ৩০ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি তিনি।
ফেনী সদরের নতুন রানীর হাটে তাদের বাড়ি।
“ফেনী শহরের কাছে আমাদের গ্রামে কখনো বন্যা আসেনি। আমার বয়োজ্যষ্ঠ বাবা মা জানে না কীভাবে বন্যা মোকাবিলা করতে হয়। ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় আমি বাবা মায়ের কণ্ঠস্বর শুনছি না,” ফেসবুকে লিখেছেন মি. আরাফাত।
শুক্রবার সন্ধ্যায় তার সাথে কথা হয় বিবিসি বাংলার। জানালেন, তার বড় ভাইয়ের বাসা পাঁচ ছয় কিলোমিটার দূরে। তিনি কয়েকবার তাদের পিতা-মাতাকে আনতে গিয়ে ফেরত আসেন। সর্বশেষ, গত পরশু কথা হয় দুই ভাইয়ের।
“বড় ভাইয়া বললো বাবা মাকে উদ্ধার করতে যাচ্ছে। এখন ওনার নাম্বারও বন্ধ,” যোগ করেন আদিত্য আরাফাত।
তার বাবা পারকিনসনস্ এ আক্রান্ত। মা শ্বাসকষ্টের রোগী। এমন দুর্যোগে তাই তাদের নিয়ে সন্তানের শংকাটা আরো বেশি।
বিদ্যুৎ না থাকায় একদিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু রাখা দুরূহ হয়ে পড়েছে অন্যদিকে চার্জ না থাকায় ফোনগুলোও কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
যে কারণে ফেনীতে থাকা পরিবার বা প্রতিবেশী কারো সঙ্গেই যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।
ঢাকার একজন বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান বিবিসি বাংলাকে জানাচ্ছিলেন, একান্নবর্তী পরিবারের ১২ সদস্য কী অবস্থায় আছে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় কাটছে তার।
সর্বশেষ শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে স্বজনদের সাথে কথা হয় মি. নোমানের।
রাতে উঠানে পানি এলেও বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন তারা।
“আমার পরিবার মনে করছে, ভিটা উঁচু, পানি উঠবে না। কিন্তু, ভোরে পানি বাড়তে শুরু করে। ফজরের পর থেকে দুই ঘন্টার মধ্যে পানি হাঁটু পরিমাণ হয়ে যায়,” বলছিলেন আব্দুল্লাহ আল নোমান।
এরপর থেকে তিনি আর যোগাযোগ করতে পারেননি।
নোমান এবং আরাফাত দু’জনেই জানালেন তাদের জীবদ্দশায় নিজেদের এলাকায় এমন বন্যা তারা দেখেননি, শোনেওনি।
“১৯৯৮ সালে শুধু একবার উঠান পর্যন্ত পানি আসছে। সেই জন্য আব্বা ভাবছে যতো পানিই হোক আমার ঘরে তো ওঠার কথা না,” যোগ করেন মি. নোমান।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
তারিখ: আগষ্ট ২৫, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,