ধারণা করা হয়েছিল, এ বছর মূল্যস্ফীতির ধাক্কা অনেকটাই কমে আসবে আর তাতে ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদ বৃদ্ধির হার কমবে। কিন্তু আপাতত তা হচ্ছে না। জানা গেছে, মার্কিন অর্থনীতি প্রত্যাশার তুলনায় বেশি চাঙা থাকায় এ বছরও নীতি সুদহার বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখবে। এমনকি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হারে তা বাড়তে পারে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, সিনেট ব্যাংকিং কমিটির অর্ধবার্ষিক এক সভায় ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি শক্তিশালী। এতে মনে হচ্ছে, প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হারে আমাদের নীতি সুদহার বাড়াতে হতে পারে’।
এবারের শীতকালে আমেরিকা ও ইউরোপে তাপমাত্রার পারদ অতটা নামেনি; অর্থনীতি চাঙা থাকার যা একটি কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু এর পরিণতিতে ফেডারেল রিজার্ভকে হয়তো আরও বেশি হারে নীতি সুদহার বাড়াতে হতে পারে। এমনকি শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট হারেও তা বাড়াতে হতে পারে।
পাওয়েলের বক্তব্য, ‘সব তথ্য-উপাত্ত যদি আমাদের তেমন ইঙ্গিত দেয়, তাহলে আমাদের বেশি হারেই নীতি সুদ বাড়াতে হবে।’
তবে সিনেটের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা পাওয়েলের কথা মানতে পারেননি। তাঁদের বক্তব্য, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণ সম্ভবত করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর উচ্চ মুনাফা করার প্রবণতা।
ম্যাসাচুসেটসের সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেন, ফেডারেল রিজার্ভ মানুষের জীবন নিয়ে জুয়া খেলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানই বলছে, এই সুদহার বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে বেকারত্বের হার ১ শতাংশীয় পয়েন্টের চেয়ে বেশি হারে বাড়বে, যা সাধারণত মন্দার সময় দেখা যায়।
বৈঠকে পাওয়েলকে উদ্দেশ করে ওয়ারেন বলেন, ‘আপনার দাবি, সমাধান একটাই—লাখ লাখ কর্মী ছাঁটাই।’
জবাবে পাওয়েল বলেন, ‘আমরা কাজ ছেড়ে দিলে ও মূল্যস্ফীতির হার বাড়লে কি শ্রমজীবী মানুষ ভালো থাকবে।’
তবে নীতি সুদহার বাড়ানো হলেও বেসরকারি কোম্পানিগুলো এই সংকটের সুযোগে দাম বাড়াবে না, এমনটা হবে না বলে মনে করেন ওহাইও অঞ্চলের সিনেটর শেরড ব্রাউন।
ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল একপর্যায়ে স্বীকার করেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফার হার কমলে মূল্যস্ফীতি কমবে।
এ ছাড়া এক রিপাবলিকান সিনেটর বলেন, জ্বালানি উৎপাদন বৃদ্ধি করা হলে মূল্যস্ফীতির হার কমবে; ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল এই কথাও মেনে নেন।
এক বছর আগে, অর্থাৎ ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহার ছিল প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। কিন্তু গত বছর বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রেও মূল্যস্ফীতির হার রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। তা মোকাবিলায় গত বছর মোট সাতবার নীতি সুদহার বাড়ায় ফেড। সেই ধাক্কায় শুরুতে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমলেও আবার তা বাড়তে শুরু করেছে।
নীতি সুদহার বৃদ্ধির বিপদ
যুক্তরাষ্ট্রে নীতি সুদহার বৃদ্ধির আরেকটি ফল হচ্ছে, সে দেশে ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বৃদ্ধি পাওয়া। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা আর টালমাটাল সময়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। তাঁরা ভাবছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করাই ভালো, আরামে সুদ খাওয়া যাবে। তারা বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বিশ্বজুড়েই হার্ড কারেন্সি হিসেবে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেও ডলারে চাহিদা বেড়েছে। ফলে, ডলারের বিনিময়মূল্য বাড়ছে, দেশে দেশে স্থানীয় মুদ্রার দরপতন হচ্ছে। বিনিময়মূল্য বৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয়বহুল হচ্ছে, পরিণামে, অবধারিতভাবে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে।
অন্যদিকে, যেসব কোম্পানির নেট দায় ডলারের সাপেক্ষে নির্ধারিত হয়, তাদের মুনাফা কমবে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশে মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তার জেরে অনেক দেশে উল্টো মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:মার্চ ০৮, ২০২৩
রেটিং করুনঃ ,