লেখক:জাহাঙ্গীর শাহ।
অর্থনীতি সামাল দেওয়া গেলেও এখনো মূল্যস্ফীতি, রেমিট্যান্স, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ও রাজস্ব এসব খাতে চাপ রয়ে গেছে।
করোনার দ্বিতীয় বছর শেষ হতে যাচ্ছে। এর প্রভাবে দেশের অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েনি। তবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেলেও অর্থনীতিতে কিছু অস্বস্তি কিন্তু আছে, যা নিয়ে অর্থমন্ত্রী ভবিষ্যতে বিপাকে পড়তে পারেন। যেমন ডিজেল ও কেরোসিনের পাশাপাশি নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে। মূল্যস্ফীতি এখন ৬ ছুঁই ছুঁই করছে। সাত মাস ধরে রপ্তানি আয় ধারাবাহিকভাবে কমেছে। অন্যদিকে রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয়েও তেমন গতি নেই। বিশাল লক্ষ্যের বিপরীতে শুল্ক-কর আদায়ে ক্রমে পিছিয়ে পড়ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
অবশ্য খরচে কিছুটা স্বস্তিও আছে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি থাকায় অর্থনীতিতে কম রাজস্ব আদায়ের চাপ তেমন একটা নেই।
এ বছর জানুয়ারি মাসে ৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে বছর শুরু হয়। পরের ছয় মাস কখনো বেড়েছে, কখনো কমেছে। গত জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। পরের পাঁচ মাস মূল্যস্ফীতি টানা বেড়েছে। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
বিশ্বজুড়েই মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। করোনার ধকল কাটিয়ে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এর ফলে মানুষের হাতে টাকা যাচ্ছে। বাংলাদেশেও অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ায় দেশেও ডিজেল–কেরোসিনের দাম বেড়েছে। ফলে পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে এর প্রভাব পড়েছে। অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। করোনার কারণে কাজ হারানো মানুষও কাজ পেতে শুরু করেছেন। এসব কারণে মূল্যস্ফীতি কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী।
টানা সাত মাস রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয় কমেছে। গত মে মাসে ২১৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা সাম্প্রতিক কালে কোনো এক মাসে সর্বোচ্চ। এরপর প্রতি মাসেই রেমিট্যান্স কমেছে। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে ১৫৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। প্রবাসে শ্রমিক যাওয়াও কমেছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে রেমিট্যান্সের সুখ না–ও থাকতে পারে। এ ছাড়া প্রবাসী আয় আসাটা অমিক্রন সংক্রমণের ওপরও নির্ভর করছে।
রপ্তানি আয়ে কিছুটা স্থিতিশীলতা ও স্বস্তি আছে। তবে কোনো মাসে বাড়ে, কোনো কমে। তা প্রতি মাসে ৩০০–৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের মধ্যেই থাকে। গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত রপ্তানি আয় এক মাসে ৩৫০ কোটি ডলারের বেশি ওঠেনি। অক্টোবরে অবশ্য রপ্তানি আয় সর্বোচ্চ ৪৭২ কোটি ডলার হয়েছে। তবে নভেম্বরে তা কমে ৪০৫ কোটি ডলারে নেমেছে।
আগস্ট থেকে রপ্তানি আয় বাড়তে থাকে। কারণ, ওই সময়ে শীত মৌসুমের তৈরি পোশাক ইউরোপ ও আমেরিকায় রপ্তানি শুরু হয়।
গত ২০২০–২১ অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছিল। কিন্তু বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) পুরোটা বাস্তবায়ন না হওয়ায় তাতে সরকারের অর্থের ঘাটতি হয়নি। চলতি ২০২১–২২ অর্থবছরের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্য হলো ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু গত অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ৭৯ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যের মাত্র ২৪ শতাংশ।
বেতন–ভাতাসহ বিভিন্ন স্থায়ী খরচের বাইরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) খরচ করে। বেতন–ভাতার খরচ কমানো না গেলেও এডিপির খরচ কমানো সম্ভব। অর্থবছরের প্রথম চার মাস জুলাই–অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র ১৩ শতাংশ টাকা খরচ হয়েছে। মোট এডিপির আকার ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। এটি কাঙ্ক্ষিত হারে বাস্তবায়ন না হওয়ায় রাজস্ব আদায়ের চাপ তুলনামূলক কম।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ ডিসেম্বর ২৭, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,