ফরেস্ট গাম্প – প্রিভিউ পোস্ট উইনস্টোন গ্রুম (চলচ্চিত্র থেকে অনুদিত)
ভিয়েতনাম। ১৯৬৭ সাল।
ফরেস্ট আর বাব্বা হেলিকপ্টারে করে তাদের নতুন বদলী হওয়া রেজিমেন্টে যাচ্ছে। হেলিকপ্টারের দুদিকে দুইজন সৈনিক মেশিনগান নিয়ে নিচের দিকে সতর্ক দৃষ্টিতে দেখছে। হেলিকপ্টারটি এসে ভিয়েতনামের মেকং ডেলটা নামক স্থানে তার রেজিমেন্টের চতুর্থ প্লাটুনের হেলিপ্যাডে এসে একটা চক্কর দিয়েই নেমে পড়ল। বাব্বা আর ফরেস্ট তাদের জিনিসপত্র ও অস্ত্র হাতে নিয়ে লাফিয়ে নামল। ওদের নামিয়ে দিয়েই হেলিকপ্টারটা যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকে চলে গেল। ওরা চারিদিকে অবাক হয়ে দেখছে আর ধীর ধীরে তাদের ব্যারাকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ফরেস্টকে আগেই বলা হয়েছিল যে, ভিয়েতনাম আমেরিকার চেয়ে একেবারে ভিন্ন ধরণের একটি জায়গা, ওখানের পরিস্থিতিও সম্পূর্ণ ভিন্ন। তার কাছে অবশ্য ভিন্ন কিছু মনে হলো না। সে দেখছে একদল সৈনিক গলা ছেড়ে গান গাইছে, একজন সৈনিক একটা বিয়ারের কেইস এনে অনেকগুলো বিয়ারের কেসের ওপরে রেখে সেখান থেকে দুটো বিয়ার নিয়ে পান শুরু করল, পেছনে দেখা যাচ্ছে, একদল সৈনিক বার্বিকিউ করছে আর বিয়ার পান করছে। সবকিছুই আমেরিকার মতোই তো!
ওরা যেখানে আছে, তার প্রায় সবদিকেই পানি। সেদিকে তাকিয়ে বাব্বা বলল, “তুমি জানো ফরেস্ট, আমি বাজি ধরতে পারি, এইসব পানি চিংড়িতে ভর্তি থাকবে। দেশে থাকতেও আমি শুনেছি, ভিয়েতনাম নাকি চিংড়ির জন্য বিখ্যাত একটা জায়গা। ধরো, যখন আমরা এই যুদ্ধে জিতে যাব, তখন এইসব জায়গা আমাদের হয়ে যাবে, আর আমরা আমেরিকান চিংড়ি চাষীদের এনে এসব পানিতে চিংড়ি ধরায় লাগিয়ে দেব। আমরা সারাদিন শুধুই চিংড়ি ধরব। এত এত চিংড়ি! বিশ্বাস হয়?”
এইসময় তাঁবু থেকে খালিগায়ে বেরিয়ে একজন তাদের দিকে এগিয়ে এলো। তার হাতে এক রোল টয়লেট পেপার আর মুখে একটা জ্বলন্ত চুরুট। অদ্ভুত এক দক্ষতায় তিনি ঠোঁটের এক দিকে চুরুটটা ধরে রেখে অবিরাম কথা বলে যান। পরবর্তিতে ফরেস্ট লেফটেন্যান্ট ড্যানকে এক মুহূর্তের জন্যও ঠোঁটে জ্বলন্ত চুরুট ছাড়া দেখেনি!
“আমার নাম লেফটেন্যান্ট ড্যান টেইলর। তোমরা নিশ্চয়ই নতুন সৈনিক?”
বাব্বা ও ফরেস্ট একত্রে স্যালুট দিয়ে বলে উঠল, “গুড মর্নিং, স্যার!”
“হে… হেই… কী করছ! হাত নামাও! আমাকে কখনোই স্যালুট করবে না। চারিদিকে অনেক অনেক ভিয়েতনামী স্নাইপার অস্ত্র নিয়ে তাদের লক্ষবস্তু খুঁজছে। আমি অফিসার, এটা জানতে পারলে সাথেসাথেই আমাকে গুলি করে মেরে ফেলবে, বুঝেছ? যাইহোক, চার নম্বর প্লাটুনে তোমাদের স্বাগতম।”
বাব্বার অস্বাভাবিক দেখতে ঝুলন্ত ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে লেফটেন্যান্ট ড্যান অবাক হয়ে বললেন, “তোমার ঠোঁটে কী হয়েছে?”
“স্যার জন্মের সময়ই আমার ঠোঁটগুলো এমন ফোলা ছিল।”
“আচ্ছা বুঝেছি, তবে তুমি এই ঝুলন্ত অংশটিকে ভেতরের দিকে টেনে রেখো, না হলে এটা কাঁটাতারের বেড়া পেরুনোর সময় সেখানে আটকে যেতে পারে,” বলতেই বাব্বা জোর করে তার ফোলা ঠোঁটটা কামড়ে ধরে মুখের ভেতর নিয়ে গেল। “তো, তোমরা আমেরিকার কোন অংশ থেকে এসেছ?”
ওরা দুজন একত্রে বলে উঠল, “অ্যালাবামা, স্যার!”
“তোমরা কি জমজ?” ফরেস্ট সাদা আর বাব্বা কালো, দুইজনের চেহারায়ও কোনো মিল নেই, তাই এমন অদ্ভুত প্রশ্নে তারা ঘুরে একে অন্যের দিকে তাকালো।
“না, আমরা আত্মীয় নই, স্যার!” ফরেস্ট জোর দিয়ে বলল।
লেফটেন্যান্ট ড্যান উল্টো ঘুরে টয়লেটের দিকে এগুতে শুরু করতেই তারা দুজন তাদের জিনিসপত্র উঠিয়ে দ্রুত তার পেছনে হাঁটতে লাগল। তিনি বলে চলেছেন, “শোনো, এখানে কিছু বিষয় আছে, যেগুলো একেবারে ব্যাসিক। যেমন, তোমরা নতুন বলে সবসময় আমার কাছাকাছি থাকবে, আর যারা তোমাদের আগে এসেছে তাদের কাছ থেকে সবকিছু শেখার চেষ্টা করবে। মৃত ও জীবিত সৈনিকের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য কী জানো?” তাদের উত্তরের অপেক্ষা না করে তিনি বলে চললেন, “সেই পার্থক্যটা গড়ে তোলার জন্য একটা নিয়ম কখনোই পালন করতে ভুলবে না,” বলে তিনি তাদের দিকে ফিরে তাকালেন। “সেটা হলো মোজা। মোজা হবে নরম, পরিষ্কার ও সবসময় শুকনো। তোমাদের পা-গুলোকে সবসময় শুকনো রাখবে। তবে প্রায়ই আমাদেরকে পানির ভেতর দিয়ে চলতে হবে, তাই মনে রাখবে, যখনই আমরা কোথাও থামব, তোমরা অবশ্যই মোজাজোড়া পালটে ফেলবে। মেকং ডেলটা এলাকাটা এমন, যদি যত্ন না নাও, এটা তোমাদের পুরো পা খেয়ে ফেলবে, বুঝেছ?”
লেফটেন্যান্ট ড্যান, ফরেস্ট ও বাব্বা তার পেছনে আসছে দেখে বলতে থাকলেন, “তো, তোমরা আরকানসাস রাজ্য থেকে এসেছো, হাহ? আমিও ওখানে কিছুদিন ছিলাম। লিটল রক সুন্দর একটা শহর। যাইহোক, এখন যাও, তোমাদের জিনিসপত্র জায়গামতো রেখে প্লাটুন সার্জেন্টের সাথে দেখা করো। যুদ্ধের জন্য যা যা লাগবে সে তোমাদেরকে দিয়ে দেবে,” বলেই লেফটেন্যান্ট ড্যান টয়লেটের ভেতরে ঢুকে গেলেন।
টয়লেট বলতে, বুক পর্যন্ত উঁচু চট দিয়ে মোড়ানো চারকোনা তিন বাই তিন ফুট বর্গাকৃতির একটা জায়গা। একহাতে টয়লেট পেপারটি ধরে রেখে ভেতরে দাঁড়িয়ে চুরুট মুখে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, “ক্ষুদার্ত হয়ে থাকলে, আমাদের এখানে সব আছে। ওই যে দেখ, বারবিকিউ চলছে। ওখানে চলে যাও।“ বলেই বসে পড়ে তিনি প্রায় সাথেসাথেই আবারও উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “এই প্লাটুনে দুটো স্থায়ী আদেশ আছে; এক; তোমার পায়ের যথাযথ যত্ন নেবে, দুই; বোকার মতো কিছু করবে না, যেমন- মারা যাওয়া,” বলেই তিনি বসে পড়তেই আবারও তাদের দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলেন। ফরেস্ট আর বাব্বা অবাক হয়ে একে অন্যের দিকে তাকাতে থাকল। বোঝা যাচ্ছে, প্রথম দর্শনেই তারা তাদের এই লেফটেন্যান্টকে পছন্দ করে ফেলেছে!
বইঃ ফরেস্ট গাম্প
অনুবাদঃ বদরুল মিল্লাত
প্রকাশনীঃ নহলী
সূত্র: সংগৃহিত।
তারিখ: , ২০২১
রেটিং করুনঃ ,