আজ আশ্বিনের শেষ দিনে, প্রাণের ঋতু শরৎ- এরও শেষ দিন ! ষড় ঋতুর এই দেশে এবার ঋতুতে বেশ বৈচিত্র্যতা ছিল, চিরাচরিত বিশাল খোলা আকাশের মাঝে খন্ড খন্ড সাদা মেঘের যেমন ভেলা ছিল আবার তেমন ছিল শ্রাবণের দিনের মত ঘন কালো মেঘ, অঝরে বৃষ্টির ধারা, সেই সাথে ছিল ছিল রৌদ্র ও ছায়ার খেলা, ছিল এই বৃষ্টি এই রোদের প্রাণ-মাতানো খেলা। হঠাৎ মাটিতে রোদ, আর মেঘের ছায়া।
বাংলা মাসের ভাদ্র ও আশ্বিন মিলে আমাদের শরৎ কাল, সেই হিসাবে আজ আশ্বিন মাসের ত্রিশ তারিখ, অর্থাৎ শরৎ ঋতুর শেষ দিন। শরৎ এর প্রথম ভাগে বর্ষার অনেক বৈশিষ্ট ছিল- কখনও আকাশ ঢেকে ছিল কালো মেঘে, অ-ঝরে বৃষ্টি ধারা, শ্রাবণের দিনের মত, এর পরে ছিল প্রকৃতির নিয়মে মেঘেরা ধীরে ধীরে বিদায় নিয়ে সারা আকাশ নীল আর নীল, আকাশে এক খন্ড বা খন্ড খন্ড মেঘের দল।
হঠাৎ রোদ আর হঠাৎ বৃষ্টির এক অদ্ভুত খেলা চলেছে মধ্য শরৎ পর্যন্ত অর্থাৎ ভাদ্রের দিন গুলিতে আর সময়টিতে ছিল এক অন্য ধরণের গরম যাকে আমরা বলি ভ্যাপসা গরম, লোক গাঁথা কথার মত যাকে বলি – তাল বা কাঁঠাল পাকার গরম আর বলতেই হয় এই সময়টিতে বাজারে মিলেছে কাঁঠাল, তাল সহ আরও স্বুসাদু ফলাদী, যদিও আমের মৌসুমটা বিদায় নিয়েছিল শরতেই।
এই শরৎ কালে বৃক্ষ রাজি ছিল সব চেয়ে সবুজে ভরা যেন একটা ঘাঢ় সবুজে ছোঁয়া লেগে ছিল গাছে গাছে, ভরা খাল-বিল নদী-নালা, বিল জুড়ে সাদা-লাল শাপলার মেলা আর পদ্ম ফুলে ফুলে। বিলের পাড়ে নদীরে পাড়ে অনেক গাছ এখনো ডুবে আছে পানিতে বা গাছের পাতাগুলি ছুঁয়ে আছে নদী বিলের পানিতে। শান্ত নদীতে ভেসে চলেছে একটি বা অনেকগুলি নৌকা এমন দৃশ্যে কে না প্রকৃতি পাগল হয় ! এসব দেখেই আমরা বুঝতে পারি কত বিচিত্র আমাদের এই ছয় ঋতুর দেশ।
শুধু শাপলা আর পদ্ম ফুলে ফুলের মেলা নয়, শাপলা আর পদ্ম ফুলে খাল বিলগুলি এমন দখলে রাখে যে নৌকা চলা চলে বাঁধা আসে যেন দেখাই যায় না খালের পানি, নানান রঙে বিলগুলি যেন এক সৌন্দর্যে জলা ভূমি। খালে বিলে যে,ন নানান লতা, তেমন ছিল বাগানে বা পথের ধার জুড়ে কামিনী, মালতি, জবা, টগর, হাসনাহেনা আর আমাদের মনে শরৎ এর আগমনী বার্তা বেশি করে দিয়েছিল কাশ ফুল আর শিউলি ফুলের দৃষ্টি জুড়ানো কৌতহল, কবিরা লিখেছের কত কবিতা গান এই শরৎ এর ফুল নিয়ে তা উল্ল্যেখ করে শেষ করা যাবে না।
শরৎ কালকে মন থেকে অন্তর থেকে উপভোগ করার মত এ বাংলায় আছেন বহু শরৎ প্রেমী, শরৎ-এর প্রেমে আমরা অনেকেই দিশে হারা হয়েছি রবি ঠাকুরের সুরে সরে বলেছি –
কী করি আজ ভেবে না পাই, পথ হারিয়ে কোন্ বনে যাই,
কোন্ মাঠে যে ছুটে বেড়াই সকল ছেলে জুটি। আহা, হাহা, হা।
কেয়া- পাতার নৌকো গড়ে সাজিয়ে দেব ফুলে–
তাল দিঘিতে ভাসিয়ে দেব, চলবে দুলে দুলে।
রাখাল ছেলের সঙ্গে ধেনু চরাব আজ বাজিয়ে বেণু,
মাখব গায়ে ফুলের রেণু চাঁপার বনে লুটি। আহা, হাহা, হা॥
তবে এবার আশ্বিনের শেষ দিনে, প্রাণের ঋতু শরৎ- এর শেষ দিনের আকাশে তেমন সাদা মেঘের ভেলা ছিল না খন্ড খন্ড মেঘের মেলাও ছিল না। রাজধানীর আকাশ বা ঢাকার আকাশ ছিল মেঘলা, কালো মেঘেও ছিল। আশ্বিনের শেষ দিনে, শরৎ- এর শেষ দিনে খোলা আকাশে নীল আকাশের মাঝে খন্ড খন্ড সাদা মেঘের ভেলা দেখার আশা ছিল, বিশাল নীল আকাশ, আর তার মাঝে রবী ঠাকুরের সাদা মেঘের ভেলা।
তবুও কখনও কখনও আমাদের মন গেয়ে উঠে ছিল রবীন্দ্র সংগীতের সুরে –
” আজ ধানের খেতে রৌদ্রছায়ায়
লুকোচুরি খেলা ।
নীল আকশে কে ভাসালে
সাদা মেঘের ভেলা ।
আজ ভ্রমর ভোলে মধু খেতে ,
উড়ে বেড়ায় আলোয় মেতে ;
আজ কিসের তরে নদীর চরে
চখাচখির মেলা ।”
শরৎ কালের শেষে আর আশ্বিনের শেষের দিনগুলিতে শরীরে লাগে একটি মৃদু শীতল হাওয়া ভিশেষ করে ভোরের দিকে তখনই আমাদের বুঝা হয় এখন শরৎ বিদায়ের দিন।
চারিদিকে শিউলি ফুলের সমারোহে আমাদের মন করে আকূল ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছা করে প্রকৃতির সব উপঢৌকন, সকালে মাঠের সবুজ ঘাসের সাথে আর গাছের পাতায় শিশিরের আগমনে সেই সাথে পাতায় পাতায় শিশিরে মাখানো রোদের এক অপূর্ব দশ্যে মন জুড়ানো অনুভূতির প্রকাশ আসে আমাদের মনে।
এক দিনের আকাশ দেখে শরৎ কালকে বিচার করা যায় না। ছয় ঋতুর তৃতীয় ঋতু শরৎ কাল, ভাদ্র ও আশ্বিন বাংলা মাস মিলে শরৎ কাল বা শরৎ ঋতু, ইদানিং কালে শরৎ ঋতু যেমনই হোক আমাদের মানস পটে আঁকা থাক শরৎ ঋতু সেই আমাদের চির চেনা প্রাণের জানা বিশাল নীল আকাশের মাঝে খন্ড খন্ড সাদা মেঘের ভেলা। প্রাণের শরৎ – শরৎ, আজ তোমাকে বিদায়।
তারিখঃ ১৫ অক্টোবর ২০১৫
রেটিং করুনঃ ,