এখন সারা বিশ্বব্যাপী এখন জলবায়ুতে অনেক পরিবর্তন সেখানে আমাদেরও এই ষড় ঋতুর দেশে জলবায়ুতে পরিবর্তন খুব ষ্পষ্ট। তবে ঋতু চক্রের পরিক্রমায় ঋতু পরিবর্তিত হচ্ছে তার আপন গতিতে।
হেমন্তকালের আগমন হলো আজ, বাংলা মাসের কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এই দুই মাস মিলে আমাদের হেমন্ত কাল, সেই হিসাবে আজ কার্তিক মাসের এক তারিখ, আর গতকাল ছিল ৩০ শে আশ্বিন অর্থাৎ শরৎ ঋতুর শেষ দিন। হেমন্ত এর প্রথম ভাগে শরৎ এর অনেক বৈশিষ্ট থেকে যায়- এই দুই ঋতুতে বেশ মিল থাকে পৃথক করাটা হয় অনেকটা গোপনে আর এটা হয় ঋতুর প্রতির আমাদের ভালোবাসার কারণে। আকাশ থেকে খন্ড খন্ড মেঘ সরে গিয়ে আমরা পাই একটি বিশাল নীল আকাশ, যে আকাশের দিকে তাকালে আমাদের মন হয় আরও প্রশস্ত ও উদার।
ছয় ঋতুর দেশে চতুর্থ ঋতু হেমন্ত কাল, কার্তিক মাস দিয়ে হেমন্ত কাল শুরু, গ্রামীন একটি বচন আছে “ঠেলা যায় হাত্তিকে. ঠেলা যায় না কার্তিককে” কৃষকের ঘরে এই সময় ফসলের মজুত ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে দেখা দেয় নানান অভাব, একটি হাতি ঠেলে নেওয়া কঠিন হলে্ও আরও ভয়াবহ অভাবের মাস কার্তিক মাসকে মোকাবেলা করা, কিন্তু আড়ালে চলে মাঠে, ক্ষেতে ফসল উৎপাদনের আয়োজন আর যা সুখের আর আনান্দের মুখ দেখায় নবান্ন উৎসবের মধ্য দিয়ে।
কৃষি নির্ভর থেকে দেশ শিল্প মুখিতে যাত্রা শুরু করার কারণে, ঋতু ভিক্তিক উৎসবগুলি দিনে দিনে কমে যাচ্ছে সেই সাথে যোগ হচ্ছে নগর কেন্দ্রিক আয়োজনের মেলা। তবে বাংলার ঐতিয্য ষড় ঋতু চক্রের গুরুত্ব কখনই কমবে না বরং গুরুত্ব বেড়ে যাবে মানুষের মধ্যে মানসিক সু-সুকুমার বৃত্তির উন্নয়ের কারণে।
হেমন্ত আমাদের জানান দেয় খুব ভোরে শরীরে একটি মৃদু শীতল অনুভূতি তখনই আমাদের বুঝে নিতে হয় ধরণীতে হেমন্তের আগমন ঘটেছে। সেই সাথে ঘাসের ও ধান গাছের ডগায় জমতে শুরু করা শিশিরের বিন্দু বিন্দু কণা জানান দেয় হেমন্ত কালের আগমনী বার্তা।
চারিদিকে শিউলি ফুলের সমারোহে আমাদের মন করে আকূল ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছা করে প্রকৃতির সব উপঢৌকন, মাঠের সবুজ মাঠ আর গাছের পাতায় শিশিরের আগমনে পাতায় পাতায় শিশিরে মাখানো রোদের এক মন জুড়ানো এক দৃশ্য।
আমাদের প্রধান ফসল ধান পেকে মাঠের পর মাঠে যেন সোনালী-হলুদ রঙে সেজে উঠবে সেই সাথে গ্রামগুলি হয়ে উঠবে স্বর্ণ-ভাণ্ডারে আর শষ্য ভান্ডারে, কৃষকের মুখে দেখা দিবে এক অনাবিল সুখের হাসি তার আগে শুরু হবে ঘরে ঘরে সোনালী ফসল তোলার মহা-আয়োজন।
এই হেমন্ত কালেও বৃক্ষ রাজি থাকে সবুজে ভরা যেন একটা ঘাঢ় সবুজে ছোঁয়া লেগে আছে গাছে গাছে, ভরা খাল-বিল নদী-নালা, বিল জুড়ে সাদা-লাল শাপলার মেলা আর পদ্ম ফুলে ফুলে। বিলে নদীতে পানি বেশ নেমে যায় আর তখন জেলেরা একটি ভিন্ন আনান্দের অনুভূতিতে মাছ ধরা শুরু করে । শান্ত নদীতে ভেসে চলে একটি বা অনেকগুলি নৌকা এমন দৃশ্যে কে না প্রকৃতি পাগল হয় !! এসব দেখেই আমরা বুঝতে পারি কত বিচিত্র আমাদের এই ছয় ঋতুর দেশ।
এই হেমন্তের আবহাওয়া বলে দেয় শীতকাল আসন্ন আর শীত বা তুষার প্রবণ অঞ্চল থেকে দল বেঁধে ছুটে আসতে শুরু করে শীতের অতিথি পাখি কিছুটা উষ্ণতার আশায়, এমনি এক মনোরম আবহাওয়ায় হেমন্তকে যেন আমরা পাই একেবারে প্রাণের মধ্য খানে, কোথাও হারিয়ে গিয়ে শান্তি প্রশান্তির মধ্য খানে।
হেমন্ত ঋতুতে যেমনই হোক আমাদের মানস পটে আঁকা থাক হেমন্ত ঋতু সেই আমাদের চির চেনা প্রাণের জানা বিশাল নীল আকাশ, শীত শীত হাওয়ার একটি মনোরম পরশ। প্রাণের হেমন্ত , শুভ হোক তোমার আগমন এই বাংলায় ।
তারিখ: অক্টোবর ১৭, ২০১৫
রেটিং করুনঃ ,