Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

প্রশাসনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে সময় লাগবে (২০২৪)

Share on Facebook

লেখক: আরিফুর রহমান ঢাকা।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর গত দুই সপ্তাহে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে যুগ্ম সচিব

পর্যন্ত ৩৪০ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

অবসর থেকে ফিরিয়ে পাঁচজন সাবেক অতিরিক্ত সচিবকে আগামী দুই বছরের জন্য জ্যেষ্ঠ সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

উপসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া অন্তত ৫০ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে।

গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে জনপ্রশাসনে এখনো স্বাভাবিক অবস্থা ফেরেনি। বিগত সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত কিছু কর্মকর্তা সচিবালয়ে আসছেন না। একজন সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে সচিব পদে থাকা ১১ জন কর্মকর্তার।

অন্যদিকে বিগত সরকারের আমলে পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তারা বিক্ষোভে নেমেছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পদোন্নতি দেওয়াও শুরু হয়েছে। গত দুই সপ্তাহে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদ পর্যন্ত মোট ৩৪০ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

মাঠ প্রশাসনেও একধরনের অস্থিরতা চলছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। এর ফলে মাঠ প্রশাসনের কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের আন্দোলনের মুখে তিন দিনের ছুটি নিয়ে কর্মস্থল ছেড়েছেন ঝিনাইদহের ডিসি এস এম রফিকুল ইসলাম। গত রোববার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ডিসির দুর্নীতি, দলীয়করণ, ঘুষ-বাণিজ্য ও অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য পাচারের অভিযোগ এনে তাঁর কার্যালয় ঘেরাও করেন। এরপর ডিসি ছুটিতে যেতে বাধ্য হন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিগত সরকারের আস্থাভাজন সব ডিসিকে প্রত্যাহার করা হবে। তাঁদের পরিবর্তে নতুন ডিসি নিয়োগের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

সচিবালয় ও মাঠপ্রশাসনের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সাবেক দুজন জ্যেষ্ঠ আমলার মূল্যায়ন হচ্ছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে জনপ্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে, তা এর আগে কখনো দেখা যায়নি। এই অনিয়মের ফল হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের সব স্তরে একধরনের অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন
পদোন্নতি–পদায়ন নিয়ে পুলিশে অস্থিরতা
১৯ আগস্ট ২০২৪
পদোন্নতি–পদায়ন নিয়ে পুলিশে অস্থিরতা
৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর গত দুই সপ্তাহে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদ পর্যন্ত মোট ৩৪০ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পদোন্নতি-সংক্রান্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দীর্ঘদিন যাঁরা বঞ্চিত ছিলেন, তাঁরা যেমন পদোন্নতি পেয়েছেন, তেমনি যাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাঁরাও পদোন্নতি পেয়েছেন। এ নিয়েও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত ৪৫ জন কর্মকর্তা জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে প্রথমে উপসচিব, এরপর আবার পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সচিব হয়ে গেছেন। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে দুবার পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে বলা হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে ওই কর্মকর্তারা পদোন্নতিবঞ্চিত ছিলেন। তাঁদের ব্যাচের অনেক কর্মকর্তা কয়েক বছর আগেই সচিব হয়ে গেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপসচিব পদমর্যাদার একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এখন চাপ দিয়ে পদোন্নতি নেওয়া হচ্ছে। শৃঙ্খলা মানা হচ্ছে না। পদোন্নতিবঞ্চিতরা অন্য কর্মকর্তাদের কক্ষে (যাঁরা এখন অফিসে আসছেন না) বসে থাকেন। এটি জনপ্রশাসনের শৃঙ্খলা নষ্ট করছে।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৪৫ জন কর্মকর্তাকে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে প্রথমে উপসচিব, এরপর যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন, তা জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, এখন এক ব্যতিক্রমী ও অস্বাভাবিক সময় চলছে। পদোন্নতির বিষয়টিকে সেভাবেই দেখা উচিত। এর প্রভাব কী হবে, তা এখনই বলা যাবে না।

নিজেদের লোক বসাতে গিয়ে প্রশাসনের শৃঙ্খলা-দক্ষতা নষ্ট করা হয়েছে। এই ধারা থেকে এখন বেরিয়ে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান, সাবেক অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর ৬-৮ আগস্ট দেশে কার্যত কোনো সরকার ছিল না। অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেওয়ার আগেই ৬ আগস্ট বিভিন্ন দপ্তর থেকে ২২ জন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। এসব কর্মকর্তা বিগত সরকারের সময়ে পদোন্নতিবঞ্চিত ছিলেন। তাঁরা সচিবালয়ের বাইরে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দপ্তরে ছিলেন।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার আগে ওই কর্মকর্তাদের কীভাবে বদলি করা হলো, জানতে চাইলে জনপ্রশাসনসচিব মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রপতি তাঁর নির্বাহী আদেশে এসব বদলি করেছেন। সচিবালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, ওই কর্মকর্তাদের কারও পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কারও বাড়ি বগুড়ায় কেউবা ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

পদোন্নতি

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ‘বঞ্চিত’ ১১৭ জন কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয় ১৩ আগস্ট। এরপর ১৮ আগস্ট যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয় ২০১ জন কর্মকর্তাকে। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৪৫ জন ১৩ আগস্ট একবার পদোন্নতি পেয়েছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার আরও ২২ কর্মকর্তাকে উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে গত দুই সপ্তাহে ৩৪০ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এসব পদোন্নতির মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ এখন অনেকটাই বিএনপি–জামায়াত সমর্থক হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তাদের কাছে চলে গেছে বলে সচিবালয়ের একাধিক সূত্র বলছে। তবে যাঁরা পেশাদার কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত, তাঁদের অনেকে এখন সমস্যায় পড়ছেন। তাঁদের কেউ কেউ পদোন্নতির ক্ষেত্রে আগেও বঞ্চিত হয়েছেন, এখনো হচ্ছেন।

বিসিএস ২৮তম ব্যাচ (২০১০ সালে এই ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পান) থেকে ৪২তম ব্যাচ পর্যন্ত ২৫৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয় ১৪ আগস্ট। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কথা বলে তাঁদের এত বছর নিয়োগ দেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার। অন্যদিকে ৬ থেকে ২০ আগস্ট (গতকাল) পর্যন্ত মোট ২৮ জন কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল হয়েছে।

সরকারি চাকরির বিধিবিধানের বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে প্রশাসনে দ্রুত শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভেবেচিন্তে। সবাইকে খুশি করতে গেলে লেজেগোবরে হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে রাতারাতি কোনো কিছুর পরিবর্তন সম্ভব নয়।

জনপ্রশাসনে অতিরিক্ত সচিবের অনুমোদিত পদ এখন ২১২টি। এখন কর্মরত আছেন ৩৯৬ জন। যুগ্ম সচিবের অনুমোদিত পদ রয়েছে ৫০২টি। এখন কর্মরত ৭৭৪ জন। এ ছাড়া উপসচিব পদে অনুমোদিত পদ যেখানে এক হাজার, সেখানে কর্মরত আছেন ১ হাজার ৬৯৮ জন। সচিব পদে কর্মরত ৮৪ জন।

চুক্তিতে পাঁচ সচিব

অন্তর্বর্তী সরকার ১৭ আগস্ট পাঁচজন সাবেক অতিরিক্ত সচিবকে আগামী দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে। এই পাঁচ আমলা বিসিএস ’৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা। বিএনপি সরকারের আস্থাভাজন ছিলেন তাঁরা। অতিরিক্ত সচিব থেকে তাঁরা সরকারি চাকরি থেকে বিদায় নেন। এখন চুক্তিতে সচিব হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরদিন তাঁদের জ্যেষ্ঠ সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে শেখ আবদুর রশিদকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিভাগে, এহছানুল হককে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে, মোহাম্মদ আব্দুল মোমেনকে জননিরাপত্তা বিভাগে, নাসিমুল গনিকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব এবং এম এ আকমল হোসেন আজাদকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়।

চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া পাঁচ সচিবের কেউ এক যুগ আগে কেউবা ১০ বছর আগে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে গেছেন। এত বছর পর তাঁদের ফিরিয়ে এনে জনপ্রশাসন গতিশীল করা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে তাঁদের (চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া পাঁচজন সচিব) সে অর্থে কোনো যোগাযোগ বা সম্পর্ক নেই। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাঁরা কতটা কী করতে পারবেন, সেটি সময়ই বলে দেবে।

তবে বিষয়টি নিয়ে ভিন্নমতও রয়েছে। এ বিষয়ে সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, বিগত সরকারের সময়ে ওই পাঁচজনের ওপর চরম অবিচার করা হয়েছে। তাঁরা মেধাবী ও যোগ্য। এখন সচিব পদে তাঁদের নিয়োগের মাধ্যমে দেশ উপকৃত হবে বলে মনে করেন তিনি।

পদোন্নতি পাওয়া ৫০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

পদোন্নতির নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৩ আগস্ট যে ১১৭ জন কর্মকর্তাকে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্তত ৫০ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, উপসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া বিসিএস ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা সেকেন্দার হায়াত ঝালকাঠির নলছিটিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করেন। পরে তাঁর নামে বিভাগীয় মামলা হয়। শাস্তি হিসেবে তিন বছর তাঁর বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা হয়। পদোন্নতি পাওয়া আরেক কর্মকর্তা আকবর আলী ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত থাকাকালে ২০ লাখ টাকার গাছ ৫৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। এ ঘটনায় বিভাগীয় মামলার পর দুই বছরের জন্য তাঁর পদোন্নতি স্থগিত রাখা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বিসিএস ২১তম ব্যাচের কর্মকর্তা আব্দুর রউফ তালুকদার মাদারীপুরে সহকারী কমিশনার থাকাকালে একটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেননি। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎ, তথ্য গোপন করার অভিযোগ বিভাগীয় তদন্তে প্রমাণিত হয়। এসব কারণে তাঁকেও লঘুদণ্ড দ‌েওয়া হয়েছিল। তিনিও জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি পান।

এ বিষয়ে আব্দুর রউফ তালুকদার গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কেউ তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে নানা অভিযোগ তুলেছিল। তিনি এখন গাইবান্ধা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বিসিএস ২২তম ব্যাচের কর্মকর্তা এ এইচ এম আসিফ বিন ইকবাল সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) থাকার সময় এক পাথর ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। পরে বিভাগীয় মামলায় ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় তাঁর বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি দুই বছরের জন্য স্থগিত রাখা হয়। তিনিও এবার পদোন্নতি পেয়ে উপসচিব হন।

এ ছাড়া উপসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া বিসিএস ২৪তম ব্যাচের পাঁচজন, ২৫তম ব্যাচের ছয়জন, বিসিএস ২৭তম ব্যাচের ছয়জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। পরে বিভাগীয় তদন্তে তাঁদের কারও পদোন্নতি দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হয়, কাউকে তিরস্কার করা হয়।

জনপ্রশাসনে উপসচিব পদমর্যাদার শতাধিক কর্মকর্তা গতকাল সকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের সঙ্গে দেখা করে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের ডিসি পদে নিয়োগ না দিতে অনুরোধ করেন। তাঁদের মাঠ প্রশাসনে পাঠানো হলে সরকারের সুনাম নষ্ট হবে বলে জানান তাঁরা। গত সরকারের সময়ে যাঁরা বঞ্চিত, সৎ, যোগ্য ও মেধাবী, তাঁদের ডিসি বানানোর অনুরোধ করেন ওই কর্মকর্তা।

প্রত্যাহার হচ্ছেন ডিসিরা

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিগত সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের প্রত্যাহার করা হচ্ছে। বিতর্কিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন এসব ডিসি। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লাসহ ২৫ জেলার ডিসিকে প্রত্যাহার করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে বদলি করেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন ডিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বঞ্চিত হওয়া কর্মকর্তাদের বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিসিএস ২৪তম (২০০৫ সালে নিয়োগ পাওয়া), ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মাঠ প্রশাসন সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জেলায় যে আন্দোলন হয়েছে, তার সঠিক চিত্র সরকারের কাছে তুলে ধরতে পারেননি বর্তমান ডিসিরা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো বেশির ভাগ ডিসির প্রতিবেদনে বলা হতো, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভের কথা তাঁদের প্রতিবেদনে আসত না। তা ছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় অনেক জেলায় অতি উৎসাহী ডিসিদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৫ বছরে জনপ্রশাসনের সব স্তরে ব্যাপক দলীয়করণ হয়েছে। মেধাবী ও যোগ্য অনেক কর্মকর্তাকে পদোন্নতিবঞ্চিত করা হয়েছে। এখন উচিত হবে রাজনৈতিক মতাদর্শ ও তোষামোদ বাদ দিয়ে মেধার ভিত্তিতে পদোন্নতি ও পদায়নের ব্যবস্থা করা। তিনি বলেন, নিজেদের লোক বসাতে গিয়ে প্রশাসনের শৃঙ্খলা-দক্ষতা নষ্ট করা হয়েছে। এই ধারা থেকে এখন বেরিয়ে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আশা করা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে।

সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ২১, ২০২৪

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ