যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নতুন মাইলফলকে পৌঁছেছে বাংলাদেশ। বিদায়ী ২০২১–২২ অর্থবছর দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ৯০১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক, যা দেশীয় মুদ্রায় ৮৪ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। এই রপ্তানি গত ২০২০–২১ অর্থবছরের তুলনায় ৫১ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। ওই অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছিল ৫৯৪ কোটি ডলারের পোশাক।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভালো প্রবৃদ্ধি হওয়ায় বিদায়ী ২০২১–২২ অর্থবছর শেষে সব মিলিয়ে ৪ হাজার ২৬১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ২০২০–২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ১৪৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। তার মানে, এক বছরের ব্যবধানে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১ হাজার ১১৬ কোটি ডলারের।
দেশ অনুযায়ী পোশাক রপ্তানির এই চিত্র গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। শুধু যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে তা নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), কানাডা ও যুক্তরাজ্যের বাজারেও ভালো করেছে দেশের শীর্ষ রপ্তানি আয়ের এই খাত।
বিদায়ী অর্থবছরে ইইউতে ২ হাজার ১৪০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় এর আগের বছরের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। ২০২০–২১ অর্থবছরে ইইউতে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৫৯৮ কোটি ডলার।
ইইউর মধ্যে সর্বোচ্চ জার্মানিতে বিদায়ী অর্থবছরে ৭১৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থবছরে দেশটিতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৬১ কোটি ডলারের পোশাক। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি হয়েছে স্পেনে। দেশটিতে ৩০২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে গত অর্থবছর। ২০২০–২১ অর্থবছরে স্পেনে ২১৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।
এদিকে নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভালো করেছে বাংলাদেশ। বিদায়ী অর্থবছরে ৬৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় এর আগের বছরের তুলনায় ২৫ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। ২০২০–২১ অর্থবছরে নতুন বাজারে রপ্তানি হয়েছিল ৫০৮ কোটি ডলারের পোশাক।
নতুন বাজারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে জাপানে, ১১০ কোটি ডলারের পোশাক। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি হয়েছে যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়ায় ৮১ কোটি ও ভারতে ৭১ কোটি ডলারের পোশাক।
ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর পরও রাশিয়ার বাজারে পোশাক রপ্তানি খুব বেশি কমেনি। বিদায়ী অর্থবছরে রাশিয়ায় ৫৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। আগের অর্থবছর রপ্তানি হয়েছিল ৫৯ কোটি ডলারের।
তৈরি পোশাক
রপ্তানি ধরে রাখা চ্যালেঞ্জিং হবে
লেখা:ফজলুল হক।
তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার অর্জন খুবই ইতিবাচক। এই সংখ্যা আমাদের বাড়তি সাহস দেবে। তবে পোশাক রপ্তানি সামনের দিনে কেমন হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
পোশাকে এই রেকর্ড রপ্তানির বড় কারণ হলো, করোনার পর বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো তাদের বিক্রয়কেন্দ্রের শূন্যস্থান পূরণে গত অর্থবছরের শুরুর দিকে প্রচুর ক্রয়াদেশ দেয়। আবার কাঁচামালের দামও ব্যাপক বেড়েছিল। তাতে পোশাকের বাড়তি দামও মিলেছে। বাড়তি ক্রয়াদেশ এখন কমে এসেছে। সুতার দামও কমছে। ফলে চলতি বছর পোশাক রপ্তানির গতি ধরে রাখা চ্যালেঞ্জিং হবে। বিদায়ী বছরের রপ্তানি ধরে রাখাই আমাদের জন্য ইতিবাচক।
চলতি বছর মোটাদাগে চারটি চ্যালেঞ্জ আছে—বাড়তি ক্রয়াদেশ কমে যাওয়া, কাঁচামালের দামের নিম্নমুখিতার কারণে পোশাকের দাম কমে যাওয়া, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও দেশে গ্যাস–বিদ্যুতের সংকট। আর ভালো খবর হচ্ছে, করোনার কারণে চীনের সরবরাহব্যবস্থায় অনিশ্চয়তা আছে। আবার কাঁচামালের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় ভিয়েতনামও সমস্যায় আছে।
*****ফজলুল হক, সাবেক সভাপতি, বিকেএমইএ
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: জুলাই ০৮, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,