পৃথিবী ‘স্মার্ট কিন্তু অলস’ মানুষে ভরপুর
ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী নাভাল রবিকান্ত। যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে বেশ পরিচিত নাভাল উবার, ফোরস্কয়ার, ক্লাবহাউজের মতো দুই শ’র বেশি উদ্যোগে প্রাথমিক বিনিয়োগকারীদের একজন। সমৃদ্ধি, ঐশ্বর্য ও সুখী জীবনযাপনের ওপর নানা পডকাস্টে কথা বলেন তিনি। তাঁর ‘হাউ টু গেট রিচ’ পডকাস্টটি টুইটারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয়। কী বলছেন তিনি? পড়ুন নির্বাচিত অংশের বাংলা অনুবাদ।
আপনি আলাদা
নিজেকে অন্য সবার মতো করে গড়ে তোলা যাবে না। চিন্তাভাবনা ও কাজে অদ্ভুত বা খাপছাড়া হতে হবে। ভিন্নভাবে ভাবতে পারার মাধ্যমেই নতুন কিছু, দারুণ কিছু খুঁজে পাওয়া যায়। যেকোনো কাজের জন্য অন্যদের চেয়ে অনেক গভীরে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। অসাধারণ ব্যক্তিরাই কিন্তু অসাধারণ ফলাফল লাভ করে। আপনি সাধারণ হয়ে অসাধারণ ফলাফল প্রত্যাশা করতে পারেন না।
জীবন সাজাতে হবে
জীবনকে দীর্ঘ মেয়াদে সাজাতে হবে। নিজেকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে গড়ে তুলতে দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা শিখতে হবে। দূরদর্শী ভাবনা আমাদের জীবনকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। চলার পথে আপনি না চাইলেও অনেক মানুষের সঙ্গে কাজ করা শিখতে হবে। মানুষকে বিশ্বাস করা শিখতে হবে। যাদের সঙ্গে কাজ করবেন তাঁদের আপনারই খুঁজে বের করতে হবে। এই পৃথিবী ‘স্মার্ট কিন্তু অলস’ মানুষে ভরপুর, তাই কর্মচঞ্চল মানুষটির খোঁজ করতে হবে। একই সঙ্গে তাঁকে ন্যায়পরায়ণ হতে হবে। নতুবা দিন শেষে স্মার্ট ও পরিশ্রমী ব্যক্তি আপনার সঙ্গে প্রতারণা করতে পারে। মানুষকে বুঝতে শিখতে হবে। কে কতটা নৈতিক তা আপনাকে জানতে হবে। মানুষের কথায় নৈতিকতা প্রকাশ পায় না, তার কাজ ও আচরণে নৈতিকতা প্রকাশ পায়।
দক্ষতা বিকাশ করতে হবে
নিজেকে নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ করে তুলুন। নির্দিষ্ট কোনো বিষয় সম্পর্কে গভীরভাবে জানার চেষ্টা করুন। যেকোনো বিশেষায়িত জ্ঞান সব সময়ই শক্তি হিসেবে কাজ করে। বিশেষায়িত জ্ঞান নিজের মেধা, আগ্রহ ও কৌতূহল থেকে খুঁজে বের করে বিকশিত করতে হয়। আপনি যদি কোনো কিছু শতভাগ না জানেন, তাহলে শতভাগ জেনে অন্য কেউ এসে আপনাকে সরিয়ে দেবে। বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জন করা যায় শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করে। কেউ যদি বিশেষায়িত কিছু শিখতে চায় তাহলে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ শেখা শুরু করতে হবে। আপনি যে বিষয়ে আগ্রহী বা উৎসুক তা দীর্ঘ সময় ধরে করতে করতেই বিশেষায়িত জ্ঞান তৈরি হয়। শুধু বই পড়ে বা ক্লাসে তা শেখা যায় না।
পড়া, পড়া, শেখা
প্রচুর পড়তে হবে। পড়তে থাকুন, যতক্ষণ না পড়ার প্রতি আপনার ভালো লাগা তৈরি হয়। ক্ষুদ্র অর্থনীতি, গেম থিওরি, মনোবিজ্ঞান, নৈতিকতা, গণিত ও কম্পিউটার সম্পর্কে পড়াশোনা করুন। শোনার চেয়ে পড়া দ্রুত কাজ করে, দেখার চেয়ে হাতে-কলমে শেখার গভীরতা বেশি। শেখার ভিত্তি হচ্ছে পড়া। এমন কোনো স্মার্ট মানুষকে দেখা যায় না যারা পড়ে না। পড়াকে অভ্যাসে পরিণত করুন। খুব সাধারণ বিষয়ে পড়লে আপনি দ্রুতই বিরক্ত হয়ে যাবেন। ধীরে ধীরে জটিল বিষয়ে পড়তে হবে। বিজ্ঞান, গণিত, দর্শনসহ নানা বিষয়ে পড়ুন। যা-ই পড়ুন না কেন তা যেন ফাউন্ডেশনাল বা বুনিয়াদি হয়। যেকোনো ব্যবসাবিষয়ক বই পড়ার আগে আড্যাম স্মিথের দ্য ওয়েলথ অব নেশনস পড়ুন, জীববিজ্ঞান ও বিবর্তনের ওপর যেকোনো বই পড়ার আগে চার্লস ডারউইনের দ্য অরিজিন অব স্পিসিস পড়ুন। বিজ্ঞানের ওপর রিচার্ড ফাইনম্যানের ছয়টি লেকচার আছে, তা দেখুন। কোনো কোনো বই ধীরে ধীরে পড়া ভালো। না বুঝলে আবার পড়তে হবে। দ্রুত শেষ করাই যেন লক্ষ্য না হয়। ব্রুস লি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হাজার রকমের লাথি ও হাজার রকমের ঘুষি মারতে জানে আমি তাকে ভয় পাই না। আমি তো ভয় পাই তাঁকে, যে একই রকমের ঘুষি দশ হাজারবার চর্চা করে।’
কার্যকর চিন্তাবিদ হতে হবে
বর্তমানের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হচ্ছে: পড়া, লেখা, গণিত, বোঝাতে পারা ও কম্পিউটার প্রোগ্রামিং। আপনি যদি কম্পিউটার ভালো জানেন, গণিত বোঝেন, লিখতে পারেন ভালো, বলতে পারেন গুছিয়ে, পড়তে ভালোবাসেন তাহলে জীবন আপনার জন্য তৈরি এখন। পৃথিবীতে যা-ই করুন, তাতে আপনি সেরা হিসেবে নিজেকে তৈরির চেষ্টা করুন। এই সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য বারবার নিজেকে শুধরে সামনে এগোতে থাকুন। একই কাজ বারবার করার মাধ্যমে, একই পদ্ধতি বারবার ব্যবহারের মাধ্যমে যুক্তি ও মৌলিক জ্ঞান আমাদের কার্যকর চিন্তা করতে শেখার সুযোগ দেয়।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: এপ্রিল ০৯, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,