চির দিনের সেই তুমি,
হঠাৎ তোমার চিঠির উত্তর !! তোমার হাতের লেখায় খুব অল্প কথায়, তবুও চিঠিটা একটি কাব্য গ্রন্থের কথা বলে, আমার হাতের তালুতে বেশ শক্ত করে রেখেছি তোমার লেখা চিঠিটা, আবেগ যখন পাথর হয় সে ভাবে। জ্যোৎস্না রাতের মধ্য আকাশের পূর্ণ চাঁদটার মত চিঠিটা এলো আমার হাতের মুঠোয়, চাঁদট কি কখনো করো হাতের মুঠোয় আসে ! জানা নেই। তবে তোমার হাতের লেখায় চিঠিটি তোমার পরশ নিয়ে, একটি বার্তা নিয়ে বহু বহু দুরের পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে জ্যোৎস্না রাতের মধ্য আকাশ থেকে আমার হাতে এলো।
ঠিক পনেরোটা বছর পরে তোমার চিঠিতে লেখা একটি বাক্য আমার হাতে এসে ধরা দিল, জানি নাই কোন আকাশে আজ আমার প্রকাশ হল !! বিষাদ মাখা আকাশে !! সুখময় আকাশে নাকি হারিয়ে যাওয়ার কঠিন ভারে অন্য এক আকাশে ! তবে প্রকাশ হয়েছে আমার অন্য এক অনন্ত আকাশে, হালকা মেঘলা বিকালের আকাশে রঙ ধনুর তোরণের মধ্য দিয়ে।
এর আগের চিঠিতে তোমাকে লিখেছিলাম আমার চির বিদায়ের পরে অন্তত কিছু দিন যদি আমাকে কেউ মনে না রাখে সেটাকেও আমার জীবন মনে হয় না, যতই আমারা ক্ষুদ্র হই না কেন যদি টমাস আলভার মত রবি ঠাকুরের মত অনন্ত এক কোটি ভাগের এক ভাগ অবদান রেখে যেতে পারি এ পৃথিবীর পরে তখন তাকে আমি জীবন বলি। কিন্তু আজ আমার কাংখিত জীবনকে খুব তুচ্ছ মনে হচ্ছে, আমার সমস্ত জীবন দর্শণ, চিন্তা ভাবনা আজ তুচ্ছ হয়ে গেল তোমার ছোট্ট চিঠিটির কাছে, পরাজিত হলো এতো দিনের আমার সমস্ত কল্পনা, সমস্ত ভাবনা, চিঠিতে লিখেছিলাম ” কে বা ত্যাগ, যন্ত্রনা, দুঃখ বোধকে জীবন সাথী করতে চায় !! কে বা জীবনের ঝুঁকি নিতে চায় !! ” বেশ গর্ব করে বুঝাতে চেয়েছিলাম ত্যাগ, যন্ত্রনা, দুঃখ বোধকে জীবনের সাথী করে নিয়েছি আমি, যেন ওগুলি থেকে আমাকে বিছিন্ন করা যাবে না আমার জীবন যেন সকল যন্ত্রনা, দুঃখ বোধের সাথে মিশে আমি একটি শোকের কালো পাথর।
সকলে জানে, আমিও জানি মানুষের অনেক চাওয়া থাকে, অনন্তঃ কালের চাওয়া, সেখানে আমার পনেরো বছর আগের চাওয়াটা তেমন একটা বড় কিছু ছিল না, তবুও তোমার হাতের লেখায় ছোট্ট চিঠিটি আমার জীবন দর্শণ, আমার ভাবনা, পথে চলাকে তুচ্ছ করে দিল যেন একটি দমকা বাতাসে গাছের একটি পাতা কোথায় যেন হারিয়ে গেল। সম্রাট শাহ জাহানের তাজ-মহল গড়া, ইংল্যন্ডের রাজার রাজ সিংহাসন, রাজ্য ত্যাগ এক সময় এগুলিকে বড় খাম খেয়ালী মনে হতো, মনে হতো ওনারা মাটির খেলনার মত ভাংগা গড়ার কাজ করেছে, কিন্তু আজ বুঝতে শুরু করলাম কেন ভারত বর্ষের মোঘল সম্রাজ্যের সম্রাটদের মহা সম্রাট শাহ জাহান রাজ কোষ প্রায় শুণ্য করে দিয়ে তাজ-মহল গড়েছিলেন কিম্বা ইংল্যন্ডের রাজার রাজ সিংহাসন ত্যাগ।
চিঠিতে লিখেছ “জীবনে তোমাকে আমার বড় প্রয়োজন আজ, বেঁচে থাকা সম্ভব না তোমাকে ছাড়া।” লেখা ছিল এটুকুই, তবুও তোমার হাতের লেখায় এ কথাগুলি পড়ে দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকলো খুব দ্রুত, তুচ্ছ হলো আজ আমার যত নীতি কথা, নানান ব্যাখ্যায় জীবনের অর্থ খুঁজার চেষ্টা, অর্থপূর্ণ জীবনের সংজ্ঞা বের করার ভাবনা আর যে কথাকে গুলিকে রেখেছিলাম শ্বেত পাথরে বাঁধিয়ে তা ভেংগে গেল তাসের ঘরের মত। কোন এক সাধুর ধ্যান নাকি ভেংগে ছিল এক নারীর কারণে, খুব হাসলাম কথাটি মনে পড়তে সত্য নাকি মিথ্যা তা কিন্তু আমার জানা নেই। তবে আমি কখনো সাধু ছিলাম না, তবুও নানান ব্যাখ্যায় জীবনের অর্থ ছিন্ন ভন্ন হলো যখন তোমাকে বড় প্রয়োজন মনে হচ্ছে। তোমার হাতের লেখায় ছোট্ট করে কয়েকটা শব্দে, দুই তিনটা বাক্যে আমার সমস্ত চিন্তা, চেতনা পরাজয়ের আকাশে মিশে যাবে এমন করে কখনও ভাবি নি। ঠিক পনেরো বা বারো বা দশ বছর আগে তোমার হাতের লেখায় ছোট্ট করে কয়েকটা শব্দে, দুই তিনটা বাক্যে এমন লেখায় একটি চিঠি যদি হাতে আসতো তখন আমার জীবন অন্য রকম সাফল্যের সিঁড়ি বয়ে উঠে যেতাম, সাফল্যের শীর্ষে তোমাকে সাথে নিয়ে।
চিঠিতে লিখেছো ‘ তোমার সেল নাম্বারটি লিখে আমাকে পাঠিয়ে দিও ” তোমার কথা রক্ষা করতে হবে জানি আর এও জানি আমাকে বলার, তোমার মনে কথা জমে থাকা কথা, নূতন কথা, নিত্য দিনের নানান কথা কখনও ফুরাবে না যেমন ফুরাবে না এ পৃথিবীর সমুদ্রের পানি, বনের পাখির উড়ে চলার পথ, পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণা ধারার পানি। দোয়া রেখ।
ভালো থেকো সকল সময়ে।
ইতিতে—-
চির দিনের সেই আমি।
(চিঠিটি ব্যক্তিগত বা কাউকে লেখা চিঠি নয় )
” চির দিনের সেই আমি ” – বাক্যটি রবি ঠাকুরের।
রেটিং করুনঃ ,