চির দিনের সেই তুমি,
এটা বলতে পার এটা আমার শখ, চিঠি লেখার শখ। কত জনের কত রকমের শখ থাকে, বাগান করা, বই পড়া, ঘুরে বেড়ানো, এটা সেটা কেনা। তুমি একটি দূর দেশে থাকো বহুদিন, তোমার সে দেশের আমার কিছুই জানা নেই, তুমি কোথায় হাঁটো, কোন বাগানে বসো, কোন মার্কেটে সোপিং কর, কোন প্রিয় গান শোন। তোমার বাসাটা কেমন তাও জানা নেই, কে কে তোমার বাসায় থাকে তার একটা অনুমান থাকলেও সেখানে আমার কোন আগ্রহ নেই।
আমার ভাবার কথা নয় তবুও ভাবি তোমাকে সৃষ্টিকর্তা কী ভাবে গড়ে তুললেন ! তোমার হাঁটার ধরণ, তোমার গায়ে রঙ, উচ্চতা দেহের গঠন সবই আমার কাছে এক বিষ্ময়, তোমরা চঞ্চলতা, গম্ভীরতা মনে হয় সৃষ্টিকর্তা তোমাকে আলাদা করে গড়েছেন জগতে সকল মেয়ে থেকে। কেন যেন এখন বেশ মনে হয় আমার স্মৃতি শক্তি বেশ প্রকট, অনেক গুলি দিনের ঘটনা বেশ উজ্বল, অনেক সজীব, ঝকঝকে এখনও কিন্তু যখন ছাত্রের খাতায় নাম ছিল অনেক কিছুই মনে থাকত না, পরীক্ষার খাতায় সঠিক লেখা হতো না, রেজাল্টও ভালো হয় নি কখনও। পড়া মনে না থাকার কারণে কি তুমি ছিলে !! থাক, এসব আর ভাবব না।
যে পথ দিয়ে তুমি হাঁটতে সে পথে এখনও অনেক মানুষ হাঁটে, অনেক মানুষের চলাচল কিন্তু কেন যেন আমার মনে হয় এ পথটা শুধু তোমার, রাজাদের যেমন কত গুলি নিদৃষ্ট পথ থাকে ঠিক তেমন, এ পথে শুধু তোমারই হাঁটা সাজে, বাকিদের হাঁটা বে-মানান, আজও সে পথটি দিয়ে আমি হাঁটি তবে নিজেকে বড় বে-মানান মনে হয়, বড় অসহায় মনে হয়, এ পথ দিয়ে হাঁটার সময় আমি বেশ বুঝতে পারি, সংজ্ঞায় আনতে পারি অসহায়ত্ব বোধ কী !! পৃথিবীর অনেক মানুষ কেন অসহায় !
যে ফুল গাছ থেকে ফুল তুলে তোমার ঘন লম্বা কালো চুলে আটকিয়ে দিতে, সে গাছে এখনও ফুল ফুটে তবে ফোটা ফুলগুলি আমার আর ফুল বলে মনে হয় না। সৌন্দর্য ছাড়া, সুবাস ছাড়া যেন নানান রঙের কাগজের ফুল।
থাক সে সব কথা, তুমি যে শহরে থাক অনুমান করতে পারি রাতে সেখানকার আকাশে গ্রহ তারা নক্ষত্র সবই দেখতে পাও, তবে তোমার দেখার সময় হয় কিনা তা আমার জানা নেই। রাতে, বেশ রাতে আমি বিশাল আকাশের গ্রহ, তারা, নক্ষত্র সবই দেখতে পাও পাই, আর তাকিও থাকি বেশ, তাকিয়ে থাকতে কখনও কখনও আকাশের কোন একটি তারাকে মনে হয় তুমি যেন বহু দূর থেকে আমাকে দেখতে পাচ্ছ। তুমি হয় তো ভাবছ আমি এ সব ভাবি আর সময় নষ্ট করি তাই আমার আয় অর্জনও কম। তবে অর্থ অর্জনকে কখনও ছোট করে দেখি নি অর্থ ও সম্পত্তি ছাড়া এই ঢাকা শহরে এক অচল জীবন। তবুও বলা যায় প্রায় প্রতিটি দিনে তোমার জন্য কিছুটা সময় আপনা আপনি বের হয়ে আসে, কখনও কখনও শ্বাস প্রশ্বাস ভারি হয়ে আছে এ সবের কোন অর্থ নেই জানি তবুও আজও বড় অর্থপূর্ণ মনে হয়, মনে হয় এ ভাবেই জীবনের, বেঁচে থাকার একটি অর্থ খুজে বের করতে হয়।
যে জীবন আমরা কাটিয়ে দেই, কাউকে কোন না কোন ভাবে প্রভাবিত না করে, নিজের যন্ত্রনার আগুন অনুভব না করে, দুঃখ-সুখ বোধের কাছে মিলিয়ে না দিয়ে, সৃষ্টিকর্তার কথা মনে রেখে কিছু সময় ধ্যানে ব্যায় না করে তাকে কি করে জীবন বলা যায় !
যে মানুষটি ক্ষুধার যন্ত্রনা অনুভব করেছে তার জীবন বড় অর্থবহ আমার কাছে। নিত্য কর্মে ক্ষেত্রে যাওয়া, বাসায় ফেরা, বাজারের থলি ভরানো, খাওয়া, ঘুমানো, সন্তান বা পরিবারের খবর নেওয়া, সংসারের দায়িত্ব পালন করার মধ্যে জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় বলে আমার মনে হয় না। আমাকে যদি কেউ মনে না রাখে, চির বিদায়ের পরে অন্তত কিছু দিন যদি আমাকে কেউ মনে না রাখে সেটাকেও আমার কাছে জীবন মনে হয় না, যতই আমারা ক্ষুদ্র হই না কেন যদি টমাস আলভার মত রবি ঠাকুরের মত অনন্ত এক কোটি ভাগের এক ভাগ অবদান রেখে যেতে পারি এ পৃথিবীর পরে তখন তাকে আমি জীবন বলি।
তুমি সংসারের দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে অনেক যত্নশীল সেটা তোমার কাছে অনেক অর্থবহ। কে বা ত্যাগ, যন্ত্রনা, দঃখ বোধকে জীবন সাথী করতে চায় !! কে বা জীবনের ঝুঁকি নিতে চায় !!
কে বা না চায় একটি নিশ্চিত জীবন, নিশ্চিতে ঘুমানোর পরিবেশ !!
একটা সাদামাটা জীবনকে আমার কাছে মুল্যহীন, অর্থহীন মনে হলেও আমি তোমাকে অনেক ভাবে স্মরণ করি এতেই তোমার জীবন সার্থক হচ্ছে তোমার জীবন অর্থ বহ হচ্ছে। অামাকেও অনেক অনেক মানুষ আমার সন্মানিত পাঠক থমাস আলভার মত রবি ঠাকুরের মত অনন্ত একটি কোটি ভাগের এক ভাগ মানুষ আমাকেও মনে রাখুক এ আমার প্রত্যাশা।
আমার বাকি জীবনের প্রায় প্রতিটি দিন থেকে তোমার জন্য কিছুটা সময় যেন আপনা আপনি বের হয়ে আসে – পাহাড় থেকে যেমন ঝর্ণা নামে, হঠাৎ শব্দে পায়রারা যেমন উড়ে আকাশে, শরতের এক খন্ড মেঘ ভাসে সারা আকাশে তেমন করে,
দোয়া রেখো-
ভালো থেকো সকল সময়ে।
ইতিতে—-
চির দিনের সেই আমি।
——————————————————
(চিঠিটি ব্যক্তিগত বা কাউকে লেখা চিঠি নয় )
” চির দিনের সেই আমি ” – বাক্যটি রবি ঠাকুরের।
তারিখ: জুন ১৪, ২০১৪
রেটিং করুনঃ ,