মারিয়া-ক্যাটেরিনার বড় পরিচয়—তাঁরা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মেয়ে।
ইউক্রেনের বুচা শহরে রুশ বাহিনীর ‘নৃশংসতার’ নানা চিত্র সামনে আসার প্রেক্ষাপটে মস্কোর বিরুদ্ধে নতুন করে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আলোচনায় গতকাল বুধবার মারিয়া ও ক্যাটেরিনার নাম ঘুরেফিরে আসে। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রঘোষিত সর্বশেষ দফার নিষেধাজ্ঞার নিশানা হয়েছেন তাঁরা।
পুতিনের পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মতো মারিয়া-ক্যাটেরিনা সম্পর্কেও খুব বেশি কিছু জানা যায় না। কেননা, পুতিন তাঁর পরিবারের সদস্যদের ‘আড়ালে’ রাখতে পছন্দ করেন।
দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার ক্ষমতায় আছেন পুতিন। কিন্তু এই সময়ে পুতিনের সঙ্গে প্রকাশ্যে তাঁর পরিবারের সদস্যদের খুব কমই দেখা গেছে। তাঁর পরিবারের সদস্যদের ছবিও তেমন একটা পাওয়া যায় না। সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে পরিবারের বিষয়টি এড়িয়ে যান পুতিন।
২০১৫ সালে এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিনের কাছে তাঁর মেয়েদের নাম-পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। জবাবে পুতিন বলেছিলেন, তাঁর দুই মেয়ে রাশিয়ায় বসবাস করেন। তাঁদের পড়াশোনাও রাশিয়ায়। তাঁরা তিনটি বিদেশি ভাষায় কথা বলতে পারেন। তাঁদের নিয়ে তিনি গর্বিত।
পুতিন আরও বলেন, ‘আমি কখনোই আমার পরিবার নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করি না।’
রুশ প্রেসিডেন্ট তাঁর মেয়েদের নাম প্রকাশ করতে না চাইলেও তা গোপন থাকছে না। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার জেরে তাঁর প্রাপ্তবয়স্ক দুই মেয়ের নাম এখন সবার জানা।
পুতিনের দুই মেয়ে কী করেন, যুক্তরাষ্ট্র কেনইবা তাঁদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল—এসব ব্যাপারে এখন মানুষের মধ্যে কৌতূহল আরও বেড়ে গেছে।
পুতিনের দুই মেয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের যৌক্তিকতা নিয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা। তাঁর ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, পুতিনের অনেক গোপন সম্পদ আছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে সম্পদ রেখেছেন। পুতিনের সম্পত্তি গোপন রাখতে তাঁকে পরিবারের সদস্যরা সহায়তা করছেন। এ কারণেই ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মস্কোর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় এখন পুতিনের পরিবারের সদস্যদের নিশানা করা হচ্ছে।
প্রাপ্ত নথিপত্রসহ বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে আসা খবরাখবর ঘেঁটে পুতিনের দুই মেয়ে সম্পর্কে কিছু তথ্য সামনে এনেছে বিবিসি অনলাইন।
১৯৮৩ সালে লুইদমিলাকে বিয়ে করেন পুতিন। এ সময় পুতিন ছিলেন সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির কর্মকর্তা। আর লুইদমিলা ছিলেন উড়োজাহাজের অ্যাটেনডেন্ট।
পুতিন-লুইদমিলার সংসারজীবন তিন দশকের। ২০১৩ সালে তাঁরা বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন। এ ঘরেই মারিয়া ও ক্যাটেরিনার জন্ম।
বড় মেয়ে মারিয়ার জন্ম ১৯৮৫ সালে, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের লেলিনগ্রাদে। তিনি রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ ইউনিভার্সিটিতে জীববিজ্ঞানে পড়াশোনা করেছেন। পরে মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়েছেন মেডিসিনে।
মারিয়া এখন শিক্ষকতা-গবেষণা পেশায় আছেন। ‘এন্ডোক্রাইন সিস্টেম’ বিষয়ে তিনি বিশেষজ্ঞ। তিনি শিশুদের শারীরিক বিকাশের ওপর একটি বইও লিখেছেন।
মারিয়ার আরেকটি পরিচয় তিনি ব্যবসায়ী। বিবিসি রাশিয়ার তথ্যমতে, রাশিয়ায় একটি বড় মেডিকেল সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনাকারী একটি প্রতিষ্ঠানের সহমালিক তিনি।
ব্যক্তিজীবনে মারিয়া বিবাহিত। তিনি ডাচ্ ব্যবসায়ী জরিট জোস্ত ফাসেনকে বিয়ে করেছেন। মারিয়ার স্বামী একসময় রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি প্রতিষ্ঠান গাজপ্রমে কর্মরত ছিলেন। মারিয়া ও জরিট এখন আলাদা বসবাস করছেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
দনবাস নিয়ে কী পরিকল্পনা করছে রুশ বাহিনী
দনবাস অঞ্চলে রাশিয়ার গোলা ও বিমান হামলা অব্যাহত আছে
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর থেকে যাঁরা মারিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁদের ভাষ্য, এ ইস্যুতে তিনি (মারিয়া) তাঁর বাবাকে সমর্থন করেন। এ সংঘাত নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন নিয়ে তাঁর আপত্তি ও সন্দেহ আছে।
মারিয়ার তুলনায় ক্যাটেরিনা সম্পর্কে বেশি তথ্য জানা যায়। তিনি রাশিয়ার একজন রক অ্যান্ড রোল নাচের শিল্পী।
২০১৩ সালে একটি আন্তর্জাতিক আয়োজনে ক্যাটেরিনা নৃত্যশিল্পী হিসেবে সুনাম কুড়ান। তবে তখন বলা হয়নি যে তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের মেয়ে।
ক্যাটেরিনার জন্ম ১৯৮৬ সালে, তৎকালীন পূর্ব জার্মানিতে। ক্যাটেরিনা ২০১৩ সালে কিরিল শামালোভকে বিয়ে করেন। কিরিল পুতিনের দীর্ঘদিনের এক বন্ধুর ছেলে।
সেন্ট পিটার্সবার্গের পাশের একটি বিলাসবহুল স্কি রিসোর্টে ক্যাটেরিনা-কিরিলের জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। ২০১৮ সালে কিরিলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। একই বছর তাঁরা আলাদা হয়ে যান।
ক্যাটেরিনা শিক্ষকতার পাশাপাশি ব্যবসা করেন। ২০১৮ সালে তিনি একবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে নিউরোপ্রযুক্তি নিয়ে কথা বলতে হাজির হয়েছিলেন। ২০২১ সালে ক্যাটেরিনাকে ব্যবসায়ীদের একটি ফোরামে অংশ নিতে দেখা গেছে। তবে কোনো ক্ষেত্রেই তাঁকে প্রেসিডেন্ট পুতিনের মেয়ে হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়নি।
মারিয়া ও ক্যাটেরিনা কেউই প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বেশি সময় কাটাননি বলে বলা হয়।
পুতিনের নাতি-নাতনিও আছে। তবে তাঁর কতজন নাতি-নাতনি আছে, তারা তাঁর কোন মেয়ের সন্তান, সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
নাতি-নাতনিদের সম্পর্কে ২০১৭ সালে পুতিন এবার বলেছিলেন, তাঁদের একজন নার্সারি স্কুলে যাচ্ছে।
নাতি-নাতনিদের আড়ালে রাখার বিষয়ে তখন পুতিন বলেছিলেন, ‘আমি চাই না যে তারা রাজকীয়ভাবে বেড়ে উঠুক। আমি চাই, তারা সাধারণ মানুষের মতোই বেড়ে উঠুক।’
বিবিসি অবলম্বনে
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: এপ্রিল ০৭, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,