সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) গাড়িচালক হিসেবে কর্মজীবন শেষে অবসরে গেছেন সৈয়দ আবেদ আলী ওরফে জীবন (৬০)। তবে গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের ডাসার এলাকার মানুষের কাছে তিনি শিল্পপতির পরিচয় দিতেন। সেই পরিচয়ে তিনি ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন করার জন্য প্রচারণাও শুরু করেছেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অভিযোগে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) দুজন উপপরিচালক, দুজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীও রয়েছেন। তিনি ‘প্রশ্নফাঁস করে’ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত রোববার ও গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই ১৭ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সৈয়দ আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের বাসিন্দা। জীবিকার তাগিদে মাত্র ৮ বছর বয়সে পাড়ি জমিয়েছিলেন ঢাকায়। সেখানেই ছোটখাটো নানা কাজ করতেন। একপর্যায়ে গাড়ি চালানো শিখে চাকরি নেন পিএসসিতে। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। অর্জন করেছেন বিপুল সম্পদ। রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করে এই সম্পদ অর্জন করেছেন বলে দাবি করতেন তিনি। গ্রামে তাঁর দুই ভাই এলাকায় কৃষিকাজ, অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
ডাসার উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দ রাকিব হাসান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আবেদ আলী নিজ গ্রামে প্রায় ৬ কোটি টাকা খরচ করে বিলাসবহুল তিনতলা ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাড়ির পাশে করেছেন মসজিদ। এ ছাড়া সরকারি জায়গা দখল করে তাঁর গরুর খামার ও মার্কেট নির্মাণাধীন। উপজেলার পান্তাপাড়া ও পূর্ব বোতলা গ্রামে কিনেছেন দুই কোটি টাকার বেশি দামের জমি। তাঁর ঢাকার মিরপুর, শ্যামলীতেও বাড়ি রয়েছে বলে শুনেছেন।
স্থানীয় রাজনীতির মাঠে-ময়দানে দামি গাড়িতে চড়ে গণসংযোগ করেন সৈয়দ আবেদ আলী ও তাঁর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান (সিয়াম)। বাবা-ছেলে এলাকায় দুহাত ভরে দানখয়রাত করেন। যার ছবি-ভিডিও ফেসবুকেও দে
বালিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা আতিকুর ইসলাম বলেন, গত কোরবানির ঈদে দামি গাড়িতে চড়ে ১০০ জনকে এক কেজি করে মাংস বণ্টন করেন সোহানুর রহমান। সেই ভিডিও শেয়ার করেন নিজের ফেসবুকে। সোহানুর রহমান শুধু একটি গাড়ি নয়, একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। সবই দামি, ঝকঝকে। পড়েছেন ভারতের শিলংয়ে। তারপর দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও। তিনি ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি পদেও আছেন।
আবেদ আলীর হঠাৎ এমন উত্থান দেখে রীতিমতো হতবাক ডাসার উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আবেদ আলীর দলীয় পদ নেই। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। শুনেছেন, তিনি ডাসার উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন। তাঁর ব্যানার-ফেস্টুন রাস্তাঘাটে দেখেছেন।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আবেদ আলী মূলত ঢাকায় থাকত। শুনেছি, সরকারি গাড়ি চালাত। অনিয়মের কারণে তার চাকরি গেছে। পরে হঠাৎ শুনি ঢাকার বড় ব্যবসায়ী হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যেই এলাকায় এসে গরিব মানুষের মধ্যে টাকাপয়সা বিলাত, খাবার দিত। মানবিক কাজ করে সে সবার কাছে অন্যভাবে পরিচিত হতে চেয়েছিল।’
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ: জুলাই ০৯, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,