পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনের জন্য গঠিত কমিটি বাতিলকে ‘স্বার্থান্বেষী মৌলবাদী হুমকির কাছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আপস’ হিসাবে দেখছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সরকারের সিদ্ধান্তকে ‘উদ্বেগজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ’ মন্তব্য করে সোমবার সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনের জন্য গঠিত সমন্বয় কমিটি বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈষম্যহীন ‘নতুন বাংলাদেশ’র স্বপ্ন ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার পরিপন্থি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আপসকামী আচরণের পরিচায়ক।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক প্রণীত ও মুদ্রিত সব পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন ও সমন্বয় করতে ১৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খ ম কবিরুল ইসলামকে প্রধান করে ওই কমিটি গঠন করা হয়। এতে শিক্ষা গবেষক রাখাল রাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আখতার খান, এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসান, সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী এবং সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক এএফএম সারোয়ার জাহানকে সদস্য করা হয়। ওই কমিটিতে সদস্য সচিব হিসাবে দায়িত্ব পান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ইয়ানুর রহমান। কমিটিতে রাখাল রাহা, সামিনা লুৎফা নিত্রা, কামরুল হাসান মামুনকে রাখায় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের নিয়ে আপত্তি তোলেন। আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে দুই দিনের মাথায় গত শনিবার কমিটি বাতিল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা আতঙ্কের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও বহুত্বের বিরুদ্ধে কুৎসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা ছড়িয়ে শঙ্কা ও হুমকির বাতাবরণ সৃষ্টির প্রচেষ্টা ক্রমেই উৎকট রূপ ধারণ করছে। এ ধরনের স্বার্থান্বেষী মহলের অপপ্রচার, হুমকির প্রতি নতি স্বীকার করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আপস করছে। যার উদ্বেগজনক উদাহরণ হলো পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন সমন্বয় কমিটি বাতিলের ঘটনা। বিষয়টি একদিকে যেমন সরকারের মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে আপসের উদাহরণ, অন্যদিকে তেমনি ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাক্সক্ষার প্রতি রীতিমতো প্রহসন।”
ইফতেখারুজ্জামান আশা প্রকাশ করে বলেন, “কর্তৃত্ববাদী সরকারের বহুমাত্রিক ও নজিরবিহীন মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং হাজারো শহিদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ছাত্র-জনতা এমন ‘নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যা ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকসহ সব বৈচিত্র্য ও মতাদর্শের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সমঅধিকার নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি ‘নতুন বাংলাদেশে’ বৈষম্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও সুশাসিত হবে, যেখানে ধর্মীয় বা অন্য কোনো মতাদর্শ কারও ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না।”
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূলধারা কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিকাশ ঘটতে দেবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতার মূল ভিত্তি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূলধারার বহুমত, অন্তর্ভুক্তি, সমঅধিকার ও অসাম্প্রদায়িকতার আদর্শ। যার প্রতি অটুট থেকে সরকার তার ওপর অর্পিত রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্ব পালনে অগ্রসর হবে এবং সব ধরনের অশুভ শক্তি, বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী মহলের সঙ্গে আপসের পথ দৃঢ়ভাবে পরিহার করবে বলে আশা করে টিআইবি।”
সূত্র: যুগান্তর।
তারিখ: অক্টোবর ০১, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,