” পাখি উড়ে গেলেও পলক
ফেলে যায় আর মানুষ
চলে গেলে ফেলে রেখে যায়
স্মৃতি । ” —- হুমায়ূন আহমেদ।
” তুমি দশটি সত্য এর মাঝে একটি মিথ্যা মিশিয়ে দাও…সেই মিথ্যাটিও সত্য হয়ে যাবে…কিন্তু তুমি দশটি মিথ্যার মাঝে একটি সত্য মিশাও… সত্য সত্যই থেকে যাবে….সেটি আর মিথ্যা হবে না…সত্য আসলেই সুন্দর…” —হুমায়ূন আহমেদ।
আজ ১৩ই নভেম্বর কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৩ তম শুভ-জন্মদিনে সকল বাঙালীর পক্ষ্য থেকে আমাদের অনেক অনেক ভালোবাসা।
বিংশ শতাব্দীর বাঙ্গালি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম এবং আশির দশকের ও পরবর্তীকালের লেখক হুমায়ুন আহমেদ। আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের পথিকৃৎ হুমায়ু্ন আহমেদ ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। সংলাপ প্রধান নতুন শৈলীর জনক হুমায়ুন আহমেদের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত। নন্দিত নরকে, মধ্যাহ্ন, জোছনা জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া ইত্যাদি তাঁর অন্যতম উপন্যাস। তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ পেয়েছে অসামান্য দর্শক প্রিয়তা। তবে তাঁর টেলিভিশন নাটকগুলি ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়। তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্র আগুনের পরশমনি, দুই দুয়ারী, শ্রাবণ মেঘের দিন, উড়ে যায় বকপক্ষী, ঘেঁটুপুত্র কমলা উল্লেখযোগ্য।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়ন বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী তোমাদের জন্য ভালোবাসা। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। লেখালেখিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় একসময় অধ্যাপনা ছেড়ে দেন তিনি৷ শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন এই অধ্যাপক।
রসায়ন শাস্ত্র তাঁকে টানতে পারে নি, বাংলা সাহিত্য তাঁকে টেনে নিয়ে গিয়েছে তাঁর জীবনের সাফল্যের শীর্ষে, নানা কারণে হুমায়ূন আহমেদ উঠতি লেখকদের কাছে দুর্দান্ত অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। কেবল লেখালেখি করেই যে ঐশ্বর্যময় জীবনযাপন করা যায়—এই উদাহরণ তাঁর আগে অন্য কারও মধ্যে পাওয়া যায়নি।
তাঁর গদ্যভাষাও নিজের যাপিত জীবনের মতো সাদামাটা, বাড়তি অলংকারবর্জিত, সরলরৈখিক। নিজের কোনো লেখাকেই তিনি অবহেলা করতেন না। আগাগোড়া পাঠকের-এর পছন্দ-অপছন্দ তোয়াক্কা না করে এই লেখক কিন্তু আজীবন তাঁর নিজের ভাষায় বলে গেছেন নিজস্ব কথাগুলোই।
উপন্যাসের নাম এসেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনো গানের কলি থেকে। এর আগে জীবনানন্দ দাশের কবিতা ও রবীন্দ্রনাথের গানের চরণ থেকে দু-তিনটি শব্দ নিয়ে নাটক-উপন্যাসের নাম করার চল বের করেছিলেন হুমায়ূন।
১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই নভেম্বর বাংলাদেশের নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর পিতা ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন তাঁর পিতা একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন।১৯ জুলাই ২০১২ তারিখে স্থানীয় সময় ১১:২০ মিনিটে নিউ ইয়র্কের বেলেভ্যু হসপিটালে পরলোকগমন করেন বাংলা সাহিত্যের এই প্রবাদপুরুষ।
আবারও হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে আমাদের প্রাণের অনেক গভীর থেকে অনেক অনেক ভালোবাসা।
তারিখ: নভেম্বর ১৩, ২০১৮
রেটিং করুনঃ ,