বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের ইতিহাস বিএনপির। কিন্তু আওয়ামী লীগের অবদান পাকিস্তানের কাছে আত্মসমর্পণ, ভারতে পালিয়ে যাওয়া।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির ইতিহাস হচ্ছে এ দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস, ৪৩ বছরের ইতিহাস হচ্ছে গণতন্ত্রের ইতিহাস, জাতিকে একটি অস্তিত্ব প্রদানের ইতিহাস। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সারাক্ষণ বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও বিএনপিকে খাটো করার চেষ্টা করে আওয়ামী লীগ।
মির্জা ফখরুল আওয়ামী লীগের অবদান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘পাকিস্তানের কাছে আত্মসমর্পণ, ভারতে গিয়ে পালিয়ে নেতা সাজা, নিজেদের মনে করে তারাই এ দেশের স্বাধীনতা দিয়েছে—এটি হচ্ছে তাদের অবদান। তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায় আওয়ামী লীগ। প্রকৃত ইতিহাস ভুলিয়ে মিথ্যাচার করছে। সত্যকে মিথ্যা প্রমাণ করে কোনো লাভ হবে না বলে জানান তিনি।
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করা। যুদ্ধে জয়লাভ করতে হবে। শেখ হাসিনার সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’
তরুণদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, পতাকা তুলে নিয়ে দেশকে মুক্ত করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপিকে ভয় পায় বলে আওয়ামী লীগ আবোল-তাবোল বলে যাচ্ছে। বিএনপিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপির প্রতি ক্ষোভের কারণ, ২৫ মার্চের পর আওয়ামী লীগ তার দায়িত্ব পালন করতে পারেনি, স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারেনি।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগ হবে প্রথম কথা। পদত্যাগ না করলে পতন হবে চূড়ান্ত কর্মসূচি। এ জন্য প্রস্তুত হতে হবে। স্বৈরাচার সরকার আপসে যায় না। আন্দোলন করতে হবে। সবাইকে নামতে হবে।
স্বাধীনতাকে স্বীকার করতে হলে জিয়াউর রহমানকে অস্বীকার করে হয় না বলে জানান বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, যারা বলে জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করেননি, গুলি করেননি, তারা যুদ্ধাপরাধী। তারা স্বাধীনতা স্বীকার করে না।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনার কোনো ইস্যুতে পা দেওয়া যাবে না। শেখ হাসিনার পদত্যাগই এখন ইস্যু। আগের মতো স্লোগান দিয়ে, এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মতো, মাঠে নামার কথা বলেন তিনি। গয়েশ্বর চন্দ্র আরও বলেন, অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কর্মীদের এক করতে হবে। দলের কর্মীরা মরতে প্রস্তুত থাকলে সেই ভয় কিসের।
জিয়াউর রহমান পাকিস্তানিদের গুলি ছুড়েছেন এমন নজির নেই—প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ছিলেন ব্রিগেড কমান্ডার। ব্রিগেড কমান্ডাররা গুলিবর্ষণ করেন না। গুলিবর্ষণ করেন সিপাহি হাবিলদার, ক্যাপ্টেনসহ অন্যরা। যে যত সিনিয়র হয়, সে যুদ্ধক্ষেত্রে তত পেছনে থাকে। সিনিয়ররা যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন। এটাই সামরিক বাহিনীর নিয়ম।’
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা উপলক্ষে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ভিড় করতে শুরু করেন। কয়েক শ নেতা-কর্মী প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে জমায়েত হন।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন প্রমুখ।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ০২, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,