অনুবাদে: ইললু।
পর্ব: বিশ এবং শেষ।
২০ (শেষ অংশ)
“তুমি মেয়েদের শরীরের ভাষা শিখিয়ে দেবে আমাকে,শেখাবে আমাকে যৌন সঙ্গীতের সুর,
ধৈর্যের সাথে আমিও তোমাকে বোঝার চেষ্টা করছি,সব কিছু মেনে নিচ্ছি আমি,কিন্ত তোমার কি কখনও মনে হয়নি আমাদের দৈহিক পার্থক্য আছে,একটা?সৃষ্টিকর্তার কাছ অভিযোগ করো সেটার।
মনে পড়ে,প্রথম দেখায় তোমাকে বলেছিলাম আমাকে কামনার ভাষা শেখানোর জন্যে,যৌনতার উচ্ছাস ভরা রাজ্যে নেয়ার জন্যে।জানা আছে তো তোমার,একটা বয়সের পরে সমস্ত যৌনসুর যোগাযোগ,আনন্দ হারিয়ে গেছে আমার,ক্লান্তি আর হতাশায়,বুঝতে পেরেছি কত কষ্টকর আমার পক্ষে ভালবাসার মানুষদের যৌন আনন্দের ভাগীদার হওয়া”।
‘ভালবাসার মানুষদের’,কথাটা আমার একেবারে পছন্দ হয়নি,না বোঝার ভান করলাম তবু, একটা সিগারেট জ্বালিয়ে নিলাম,কোন প্রশ্ন করার সাহস বা ইচ্ছে ছিল না আমার।
“তোমার শরীরটা খুঁজে খুজে দেখতে চাই রহস্যগুলো,খুঁজে নিতে চাই তোমাকে,সেই মনটাকে যে আলোর ছটায় সাজিয়ে দিয়েছিল আমার মনটাকে,যা তখন ভেঙ্গে পড়া হতাশার অন্ধকারে”।
চমৎকার একটা আমেজ ছিল সিগারেটটায়,সাথে একটু মদের চুমুক হলে খারাপ হতো না।তবে
মনটা চাইছিল না রালফের কথার উচ্ছাসটা থামিয়ে দিতে।
“পুরুষেরা শুধু যৌনসঙ্গমের চিন্তায় নিজেকে ভাসিয়ে দেয়,কেন?তুমি যেমন করলে সেটাই তো ঠিক,প্রশ্ন করে জেনে নেয়া”।
“কে বলে,আমরা পুরুষেরা শুধু যৌনসঙ্গমের কথা ভাবি?সারাটা জীবন আমরা বোঝানোর চেষ্টা করি নিজেকে-যৌনতাও ভালবাসার আরেক রুপ।ভালবাসা আমাদের হারিয়ে
যায় কোন পতিতার কাছে না হয় কোন কুমারীর শরীরে,বলে যাই আমরা ক্ষনিকের গল্পটা যে কোন শ্রোতার কাছে।বয়সে আমরা খুঁজে বেড়াই কুমারীর মুখ-প্রমান করতে চাই আমাদের জানা জীবনের সব রহস্য।
কিন্ত জান,কিছুই জানা নেই আমাদের,এই পুরুষ,আমরা।আমরা যা বিশ্বাস করি সেটা ঠিক না।আমরা অযথাই ভেবে নেই যৌনসুখ লুকোনো স্খালনে,কিন্ত তাতো নয়।আমরা কোনকিছুই শিখিনা,শিখতে চাইনা আমরা,আমাদের নেই মেয়েদের শরীর জানার ঔৎসুক্যটা।আমাদেরও জানা হয় না,মেয়েরাও বলে না,দেখ এটা আমার শরীর,দেখ কতটুকু জানা তোমার।আমরা সবাই আটকে আছি আমাদের আদিম বিশ্বাসে।বল জানা আছে কি তোমার,পুরুষের কাছে যৌনতা ছাড়া আর কি মুল্যবান”?
আমি ভেবেছিলাম টাকাপয়সা,না হয় ক্ষমতা,কিন্ত কিছু না বলে শুনে গেলাম।
“হতে পারে খেলাধুলা।সেখানে একটা পুরুষ বুঝে নিতে পারে আরেকটা শরীরের ভাষা।
অনেকটা বলা যায়,খেলাধুলা দুটো শরীরের ভাষার আদান প্রদান”।
“তুমি কি পাগল”?
“হয়তো।কিন্ত চিন্তা করে দেখ,ওটা কি তোমার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয় না?তুমি কি কোন
সময় ভুলে যাও তাদের অনুভুতির কথা,যাদের সাথে যৌনবিহার করেছ”।
“অবশ্যই।তারা ভীতু আস্থা হারানো কতগুলো পুরুষ”।
“ভীতু,না শুধু ভীতু না,তারা সবাই মানসিক ভাবে দূর্বল,জানা নেই তাদের কিছুই।কিছুই জানা ছিল না তাদের,শুধু ছুটে যাওয়া চারপাশের বন্ধুবান্ধব,মেয়েদের কাছে শোনা কথাগুলো।শরীর,শরীর,শুধু শরীরে লুকানো জীবনের গল্প তাদের জীবনে,বলে দাও,ছড়িয়ে দাও কথাটা।সহজাত প্রবৃত্তি আমাদের মনটাকে ছেয়ে রাখে এক অজানা অন্ধকারে,কিছু একটা বদলানো দরকার-কি ভাবে,কেন,ইচ্ছে নেই জানার”,অনেক হয়েছে,এর আগে আমি তাকে শিখিয়েছি শরীরের রহস্যের ইতিকথা,এখন সে আমাকে দিচ্ছে যৌনতায় হাতেখড়ি।
আমরা একে অন্যের উপরে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছি,এটা আমাদের এই সম্পর্কে চরম বেমানান।ভাললাগা,ভালবাসার ঘরটা আনন্দে ভঁরা-এখন সেখানে দেখা দেয়া পুরোনো সাপটা যে ইভকে বললোঃযদি আত্মসর্মপন কর,তবে হেরে গেলে তুমি।ওটাই আমার গল্প, স্বর্গ থেকে আমি বহিষ্কৃত,আমার স্কুল জীবনে।তখন থেকেই আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি সাপটাকে বলার জন্যে যে সে ভুল,তার সব কিছু বোঝাটাই ভুল,বেঁচে থাকার আনন্দটাই আত্মসর্মপণে।কিন্ত বুঝলাম সাপটাই ঠিক,ভুলটা আমার।
আমি রালফের কাপড়গুলো এক এক করে খুলে ফেললাম,তার লিঙ্গটা নিস্তেজ,শুয়ে থাকা,
আনন্দ হারানো এক দেশে।একটুও বিবৃত হয়নি রালফ,আমি আলতো করে তাকে চুমু খেয়ে যাচ্ছিলাম,তার লিঙ্গে।কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো লিঙ্গটা,ছোঁয়ায়,আমার জিভের স্বাদে,নতুন জীবন পাওয়া রালফের শরীর।স্তন ছোঁয়া আরম্ভ করলো সে,আলতো আঙ্গুলে স্তনের বোঁটায় বৃত্ত,শিহরনটাও নিয়ে আসা আমার শরীরে।আমার মনটা,শরীর যোগের অপেক্ষায়।
এবার সে আমার পোষাকটা খুলে নেয়নি,টেবিলের পাশে আমাকে নিয়ে যোনীভেদ করলো,
কোন অপেক্ষা নেই,আর যে হারানোর ভঁয় নেই আমাকে।তার মনের মধ্যে হয়তো বিশ্বাসটা,
এটা স্বপ্ন,শুধুই স্বপ্ন।
তার শরীরের উপস্থিতি ছিল আমার প্রতি অঙ্গে,স্তনে,তনুতে-সেই ছোঁয়া,সেই ভাষা শুধু জানা মেয়েদের।বুঝতে পারলাম আমি,আমরা একে অন্যের জন্যে-এখন যেন সে একটা মেয়েমানুষ আর আমি বদলে গেছি পুরুষের মনটায়-আমরা বদলানো দুটো হারানো মনটাকে খোঁজায়,
আমাদের শারীরিক যোগাযোগ সারা পৃথিবীর সাথে।
রালফের শরীর থেমে গিয়ে তার হাতদুটো নাড়াচাড়া করছিল আমার যোনীতে,একবার,
দুবার,তিনবার খুঁজে পেলাম যৌনসুখের অদ্ভুত এক অনুভুতি।ধাক্কা দিয়ে তাকে সরিয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছিল-যদিও আনন্দ ছিল ছোঁয়া,তবে ব্যাথাটাও ছিল প্রচন্ড,তবু নিজেকে থামিয়ে দিতে চাইনি,এ ভাবেই হয়তো খুঁজে পাব আর কবার যৌনসুখ…।
…একটা আলোর ছটা এলোমেলো করে দিল সবকিছু,আমি আর আমিতে নেই তখন,এক
দেবলোকে,জানাশোনা সাধারণের বাইরে।জানা ছিল না সেটা স্বর্গ বা নরক।নরক না,সেটা স্বর্গ।সেখানে আমিই পৃথিবী,আমিই পাহাড় পর্বত,আমিই নদীটা ছুঁয়ে যাওয়া সমুদ্রের দেশে।তার শরীর ছুটে যাওয়া আমার শরীরে যদিও ছিল যন্ত্রনা তবে সেটা লুকোনো আনন্দের স্রোতে,বলতে ইচ্ছা করছিল, “আর পারি না”,তবে আমরা তখন আর দুজন নই,দুটো অঙ্গের একটা মন।
রান্না ঘরের টেবিলে মাথা গুঁজে আমরা শরীর যুদ্ধে মত্ত,রালফের হাত দুটো আমার স্তনে,নিতম্বে,ওটাই যেন পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দের অবস্থান।
“আর অপেক্ষা করো,না”।
আমারও যেন জানা ছিল কি বলছে, সে।বলার কিছু নেই,দেখার কিছু নেই,শুধু ভেসে যাওয়া অনুভুতির স্রোতে।ওখানে কোন এগার মিনিট নেই,আমরা আমাদের মর শরীরটায়,ভেসে বেড়াচ্ছি স্বর্গের বাগানে,চেনা দুজন হাত ধরা হাতে।সেখানে আমিই পুরুষ,আমিই নারী-রালফ শুধু একজন পুরুষ না,নারীও সেখানে।সারা পৃথিবী থেমে থাকা,যুদ্ধ নেই,নিস্তব্ধতা ছড়ানো চারপাশ,কোন জীবন নেই কোথাও-সবকিছু বদলে যাওয়া,থেমে যাওয়া সময়,নাম না জানা পবিত্র এক দেশ।
তারপর,সবকিছু তার পুরোনো জায়গায়,পাশের চীৎকার,মেঝের টেবিলটা,যদিও আমাদের
কাছে আমরাই শুধু পৃথিবীটা।
আমরা একে অন্যের শরীর থেকে সরে গিয়ে এক পাশে বসলাম,দুজনের মুখে হাসি যেন প্রথম
বারের মত শরীর রহস্য খুজে আসা আমাদের।
“আর্শীবাদ কর,আমাকে”।
দেবতার মত আমি আর্শীবাদ করলাম,না জানা ছিল এক পাগলামি যদিবা।রালফও আর্শীবাদ করলো, “আমি আর্শীবাদ করছি এই মেয়েটাকে
যার জানা ভালবাসা কি”, মিষ্টি কটা কথা।ঐ এগার মিনিটের লুকোনো রহস্যটার ন্তুন এক চেহারা।আমরা কেউই ক্লান্ত ছিলাম না।বৈঠকঘরে বসে ফায়ারপ্লেসে আগুন জ্বালিয়ে,মদটা ঢেলে আনলো রালফ,রেকর্ডে গান বাজছিল তখন।
একটা বই খুলে পড়া আরম্ভ করলোঃ
একটা সময় আছে বেঁচে থাকার,
সময়টাও আছে চলে যাওয়ার,
সময় আসে ফসল লাগানোর,
বলে দেয় আবার নিয়ে যাবে কখন।
সময় আছে খুনী হওয়ার,
আছে সময়টা হাত বাড়ানোর।
সময় আছে ভেঙ্গে দেয়ার,
আবার ভুলে যেও না গড়ে নেয়ার।
আছে সময় হাসির,
যেও না ভুলে কথাটা কান্নার।
দুঃখ করো না শুধু,
আসবে সময় নেচে যাওয়ার।
ছুঁড়ে ফেল পাথরগুলো,
আসবে সময় কুড়িয়ে নেয়ার।
জড়িয়ে ধরো যেন যায় যে ছাড়া,
পাবে অনেক-আসবে সময় হারানোর,
রেখ না ধরে,আসবে সময় ভাসিয়ে দেয়ার।
ছেঁড়া কাপড় করো সেলাই-আসবে সময় সেটার,
কথা বলো শুধু বলার সময়,
আছে ভালবাসা ঘৃনা পাশে,
আছে যুদ্ধ শান্তির বুকে।
শুনে মনে হলো,এটা বিদায় নেয়ার সময়।আমি তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকলাম
আগুনের পাশে গালিচায়।মনটা ভেসে যাওয়া আনন্দের স্রোতে।
“কেন তুমি আমার মত এক বেশ্যার প্রেমে পড়লে”?
“আমি ঠিক জানি না,তবে মনে হয় ভেবেছি শরীরটা আমার একার হবে না কোন সময়,
আমি চাই মনটা শুধু হোক আমার”।
“তোমার মনে কি ঈর্ষা জাগেনি,কোন”?
“তুমি কি বসন্তকে বলতে পার,তুমি শুধু আমার,যেও না আর।তুমি শুধু বলতে পার,এসেছ
যখন,থেকে যাও যতটুকু সময় আছে দেয়ার”।
কথাগুলো হয়তো হারিয়ে গেল বাতাসের শব্দে,কিন্ত আমার তো ওটা শোনার দরকার ছিল,তার বলারও দরকার ছিল,ওটুকুই।ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,স্বপ্ন দেখছিলাম অদ্ভুত এক জগতের সুগন্ধি ছড়ানো চারপাশটায়।
মারিয়ার ঘুম ভাঙ্গলো জানালার ব্লাইন্ডের ফাঁক দিয়ে আসা রোদের আলোর ছটায়।
“তোমার সাথে আমার দেহযোগ হয়েছে দুবার,তবু মনে হয় তুমি আমার জন্ম জন্মান্তরের
সাথী,আমার জীবনের আলোর উৎস,আমার শরীরের গান,আমার দুঃখ,আমার সুখ,তুমিই যে
আমার সব”।মারিয়া বলে গেল রান্নাঘরে কফি বানিয়ে আনার জন্যে।তার চোখে পড়লো,পড়ে
থাকা সুটকেস দুটো,মনে পড়লো তার প্রতিজ্ঞার কথা,ফিরে যাওয়ার কথা।
সে হয়তো থেকে যেতে পারে,তার হারানোর কিছু নেই।
বই এর কবিতার কথাটা মনে পড়লোঃ
সবকিছুই আছে একটা সময়ে সাজানো,
আছে সময় কান্নার,লুকোনো হয়তো হাসির খাতায়।
বলা আরেক জায়গায়ঃ
আছে সময় জড়িয়ে ধরার,যদি জান সময়টা ছেড়ে যাওয়ার।
মারিয়া কফি খেয়ে,ফোন করে একটা ট্যাক্সি ডেকে,মানসিক শক্তি জোগাড় করে যাওয়ার প্রস্ততি নিল,তার বিশ্বাস মনের আলোটা হাত ধরে দেখিয়ে দেবে ছেড়ে যাওয়ার সময়টা। আলোটা যা তাকে দেখিয়ে দিচ্ছে একটা নতুন রাজ্য,তাকে বর্মের মত রক্ষা করছে বাইরের দুর্দশা থেকে।সুটকেস দুটো হাতে নিয়ে যাওয়া আরম্ভ করলো,যদিও মনটা চাইছিল তার,হয়তো সে তাকে অনুরোধ জানাবে না যাওয়ার জন্যে।
সে ঘুম থেকে উঠে নি।ট্যাক্সির জন্যে অপেক্ষা করার সময় একজন জিপ্সী মেয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলো, “ফুল কিনবে”?
এক গোছা ফুল কিনলো মারিয়া,গরম কাল চলে গেছে-এ তো শরতের ছোঁয়ার চিহ্ন।এখনও
বেশ কিছুটা সময় আছে রাস্তার পাশের চায়ের দোকানগুলোর টেবিল সাজানোর পর্ব।এখনও
সূর্যের সাথে মিতালী করতে লোকজন পার্কে আসেনি,ঘুমিয়ে আছে শহরটা।কিন্ত মারিয়ার কি যায় আসে,সে তো ছেড়ে যাচ্ছে এ শহরটা।
এয়ারপোর্ট গিয়ে আরেক কাপ কফি কিনে নিয়ে মারিয়া অপেক্ষা করতে থাকলো,প্যারিসের
ফ্লাইটের জন্য।মনে মনে আশা ছিল তার হয়তো আসবে সে,কেন না জানা আছে তার ফ্লাইটের সময়্টা।সিনেমা গল্পে তো ওভাবেই ঘটে-নায়িকা যখন প্লেনে উঠে,নায়ক ছুটে গিয়ে
নায়িকাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে,চারপাশের ফ্লাইটের লোকজনের বাহবার মধ্যে ফিরিয়ে নিয়ে
গেল।পর্দায় লেখা ভেসে উঠলো, “সমাপ্তি”-দর্শকদের জানা এর পরে ওদের জীবনটা কেটে যাওয়া সুখে শান্তিতে।
“ছবিতে কোনদিন বলে দেয় না,তারপর কি ঘটে”,সে নিজের মনটাকে শান্তি দিল।বিয়ে,
রান্নাবান্না,ছেলেমেয়ে,মাঝে মধ্যে যৌনসঙ্গম,আবিষ্কার করা প্রথম পরকীয়া প্রেম,প্রতিশ্রুতি
করা আর হবে না কোনদিন।তবুও ঘটে আবার দ্বিতীয়বার,তৃতীয়বার।তৃতীয় পরকীয়া প্রেমের পর,খুঁজে পাওয়া চিরকূট দেখে কোন কিছু না বলা,ভঁয় যদি সম্পর্কটা সেখানেই শেষ।
কোন ছবিতেই বলে দেয় না সেটা।ছবিটা শেষ হয়ে যায় জীবন যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার আগেই।
অত কিছুই না বলা ভাল।
একটা,দুটা,তিনটা ম্যাগাজিন পড়ে শেষ করলো।তার ফ্লাইটের যাওয়ার সময় ঘোষনা শুনে,প্লেনে উঠে।তখনও মারিয়ার মনের মধ্যে আটকে আছে ছবিটা,সিট বেল্ট বাঁধা অবস্থায় কাঁধে আলতো একটা ছোঁয়া,মাথাটা ঘুরিয়ে দেখে দাঁড়ানো মুচকি হাসি নিয়ে মনের মানুষটা।কিছুই ঘটলো না।
জেনেভা থেকে প্যারিসের রাস্তাটা ঘুমিয়ে কাটালো।ঠিক করতে পারেনি কি বলবে বাবা মাকে,কিছু একটা বলতে হবে,অবশ্য তারা তো এমনিতেই খুশী হবে মেয়ে ফিরে আসছে দেখে,তারপর আবার পাচ্ছে একটা খামার।
ঘুম ভাঙ্গলো প্লেনের চাকা মাটিতে ঘষা লাঙ্গার শব্দে-এয়ার হোষ্টেস এসে জানালো,নামার পর টার্মিনাল বদলাতে হবে তাকে।ব্রাজিলের ফ্লাইট যাবে টার্মিনাল এফ থেকে আর সে আছে টার্মিনাল সি তে।তবে চিন্তা করার কোন কারণ নেই প্রচুর সময় আছে তার হাতে,আর নামার পর যথাযথ সাহায্য তো পাবেই।
প্যারিসে নেমে ভাবলো সেখানে একটা দিন কাটিয়ে দিলে মন্দ হয় না,শহরটাও দেখা হবে,
ছবি তোলা হবে,বড়াই করে দেখানো যাবে সবাইকে।এয়ারপোর্ট টিকিট কাউন্টারে জিজ্ঞাসা
করলো,পরের দিনের ব্রাজিল ফ্লাইটটা বদলানো সম্ভব কি না?কাউন্টারের মহিলা তার টিকিটটা দেখে বললো-দুর্ভাগ্যবশত সেটা সম্ভব হবে না।মারিয়া নিজেকে সান্তনা দিয়ে বললো,
ওভাবে একা ঘুরে বেড়ানো শুধু বিষন্নতাই ভরে দেবে মনটা।মারিয়ার মনটাও চাইছিল না,
ভুলে যেতে ভালবাসার কথা,ভালবাসার মুখটা।
এয়ারপোর্টে অনেক লোকজন অপেক্ষা করে ছিল,কেউ তাদের আত্মীয়স্বজন,কেউ তার মা বাবা,কেউ ছেলে মেয়েদের জন্যে,কেউ নেই মারিয়ার জন্যে সে তো চলে যাচ্ছে আরেক দেশে।
“ভেব না,আমাদের প্যারিস থাকবে,আমাদের জন্যে”,তার পাটা কেপে উঠলো কথাগুলো শুনে।
“আমাদের প্যারিস থাকবে আমাদের জন্যে,আমার খুব পচ্ছন্দের একটা ছবির ডায়ালগ।
আইফেল টাওয়ার দেখার ইচ্ছা আছে”?
অবশ্যই,রালফ দাড়িয়ে,হাতে একগাদা ফুলের গোছা,চোখ ছড়ানো অজানা এক আনন্দের আলো,একই আলো যা সে দেখেছে তার ছবি আঁকার সময়।
“কি ভাবে সম্ভব হলো তোমার পক্ষে আমার কাছে পৌঁছানোর”?কোন ইচ্ছা ছিল না তার জানার যদিও,তবুও জিজ্ঞাসা করলো।
“জেনেভা এয়ারপোর্টে দেখলাম,তুমি বসে বসে ম্যাগাজিন পড়ছো,এসে হয়তো তোমার সাথে কথা বলতে পারতাম,কিন্ত আমি যে মনের দিক দিয়ে বেশ রোমান্টিক।আমি একটা সাটল
ধরে প্যারিস চলে এসেছি,প্রায় ঘন্টা তিনেক এয়ারপোর্টে ঘোরাঘুরি করলাম,একটা ফুলের গোছা নিয়ে প্লেনের আসার সময় দেখছিলাম বারে বারে।আমি ক্যাসাব্লাঙ্কা ছবিটার ‘রিক’ এর
মত ভালবাসা নিবেদন করে তোমার চেহারায় তার ছাপটা দেখতে চাচ্ছিলাম।আমি নিশ্চিত হতে চাচ্ছিলাম,এটাই তোমার চাওয়া।এটা একটা ছবির মত রোমান্টিক না,ভাবতে ভাল লাগছে না”?
কোন কিছুই ভাবার ইচ্ছা হচ্ছিল না তার,এই মানুষটার সাথে প্রথমবারের মত যৌন সংযোগ হলো কদিন আগে,তাকে কটা দিন দেখেছে মাত্র,লোকটা বিয়েও করেছে বার দুয়েক,ভাবার এমন কিছু নেই।তা ছাড়া সারাটা জীবন পড়ে আছে তার সামনে,হাতের টাকাপয়সা দিয়ে খামার কিনে নিয়ে এগিয়ে যাবে সামনে দিকে।কিন্ত মানুষ কোন সময়েই তা করে না,মারিয়াও করলো না সেটা,এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে চুমু খেল,অনেকটা সিনেমার ‘সমাপ্তির’মত।
কেউ যদি তার গল্পটা কোনদিন বলে…অনেক অনেক দিন আগে…।
তারপর…।
00(লেখকের মন্তব্য)
আর অন্যান্য সকলের মতই দ্বিধা নেই বলতে-সময় লেগেছে আমার খুঁজে নিতে যৌন
রহস্যের পবিত্র চেহারাটা।আমার যৌবন যার সাথে সাজানো স্বাধীনতার দূরন্ত আকাশ,
জানা অজানার নতুন জগতগুলো,রক্ষনশীলতা,সংযম ছাড়িয়ে খুঁজে নেয়ার মুল্যটা খুব
একটা কম ছিল না।
রক্ষনশীলতার চরমের কথা বলতে গিয়ে ৭০ দশকের দিকে আরভিং ওয়ালেস আমেরিকার
সেন্সরসাপের হম্বিতম্বি করা-সেভেন মিনিট বইটার প্রকাশনী নিয়ে।
ওয়ালেসের লেখা উপন্যাসটায় সেন্সরশীপ নিয়ে খুব একটা বলা নেই,যৌনসঙ্গমের কথায়
ছড়ানো তাও নয়,বইটা নিষিব্ধ হওয়ার কারণটা আমার বোধগম্য হয়নি।
তবে ঐ বইটায় ওয়ালেসের উদ্ধৃতি এই না লেখার বইটার কথা নিয়ে,যৌনসঙ্গম মানুষের
জীবনের কত প্রয়োজনীয় একটা অংশ।
সূত্র: চতুর্মাত্রিক
তারিখ: মার্চ ২৮, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,