১৯৩৮ থেকে আজ অবধি পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও পলাশী সম্বন্ধে নানা আলোচনা, সভা-সমিতি, সিরাজ স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়েছে এবং নানা প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে। তিনি আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক, তিনি আমাদের শৌর্য–বীর্যের প্রতীক, তিনি আমাদের কাছে প্রেরণা।
গতকাল বুধবার রাত নয়টায় পলাশী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটি অনলাইনে ‘ইতিহাসের আলোকে ফিরে দেখা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে ভারতের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক কাজী সুফিউর রহমান এসব কথা বলেন।
কাজী সুফিউর রহমান আরও বলেন, ‘পলাশী বাঙালিদের কাছে বিবেকের তাড়না, চৈতন্যের উদয়। আমাদের রক্তে পলাশী। আমরা সাহিত্য রচনা করতে গেলেও পলাশী থেকেই শুরু করি, ইতিহাস রচনা করতে গেলেও এই পলাশী থেকেই শুরু করি। সুতরাং পলাশী হচ্ছে আমাদের কাছে একটা কেন্দ্র, আমরা প্রতিদিন ওখানে গিয়েই স্পর্শ করি।’
আলোচনার শুরুতে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালক বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এমরান জাহান বলেন, ‘গত বছর পলাশী দিবসকে কেন্দ্রকে করে আমরা চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ইতিহাস-সংস্কৃতি সম্মেলন আয়োজন করি। তারই ধারাবাহিতায় এবারের আমাদের আয়োজন “ইতিহাসের আলোকে ফিরে দেখা” শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, পলাশী প্রহসনমূলক যুদ্ধ। সামরিক ইতিহাসে ঠাঁই পাওয়ার মতো যুদ্ধ নয় এটি। কিন্তু এর তাৎপর্য অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। বিশ্ব ইতিহাসেও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। পলাশীর যে যুদ্ধ, তা ছিল একটি ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ এবং তা ছিল রাজকীয় ষড়যন্ত্র, যার সঙ্গে জড়িত ছিল এ দেশের অভিজাত চক্র।
ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর উদ্ধৃতি দিয়ে মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, এটি একটি যুদ্ধ, নাকি প্রহসন, সে বিষয়ে বিতর্ক আছে। এই বিতর্ক চলমান এবং এর তাৎপর্য উজ্জীবিত। এই বিতর্কের এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। তিনি (নবাব সিরাজউদ্দৌলা) ইতিহাসের খলনায়ক তো ননই, বরং তিনি ইতিহাসের মহানায়ক।
আলোচনা শেষে মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত, যা-ই হোক, এখন আর তরুণ প্রজন্মের কাছে এগুলো আলোকপাত করি না। এগুলো আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বন্ধ্যত্বের একধরনের প্রমাণ। আমরা একাধিকবার ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়েছি। প্রশ্ন হলো এ স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে পেরেছি কি না? আমাদের জাতীয় সংকট নিরসনে এখনো বিদেশি দূতাবাসের দ্বারস্থ হই এবং সেই সুযোগ নিয়ে আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তারা নাক গলায়। যাঁরা সুশীল সমাজ আছেন, রাজনীতিবিদেরা আছেন, এগুলো যদি উপলব্ধি করেন, তাহলে উত্তর প্রজন্মের জন্য একটা স্বাধীন–সার্বভৌম দেশ রেখে যেতে পারব এবং এটাই হওয়া উচিত পলাশী থেকে গ্রহণযোগ্য শিক্ষা।’
ঘণ্টাব্যাপী এই অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এমরান জাহান। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াডের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে সরাসরি প্রচারিত হয়।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: জুন ২৪, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,