Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

পলাশীর যুদ্ধ ‌এবং দমদম

Share on Facebook

পলাশীর যুদ্ধের বেশ কয়েক মাস আগেকার কথা। দিনটা ছিল ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই ফেব্রুয়ারির এক কুয়াশা মাখা সকালের। সে সময়ে ব্রিটিশ লর্ড ক্লাইভের সিরাজের শিবির শিয়ালদহে যাবার পথে হঠাৎ আধুনা দমদম নাগেরবাজারের ৯১ রাষ্ট্র গুরু অ্যাভিনিউয়ের কাছে এক উচু ঢিবির ওপর একতলা এই বাড়ি নজরে পড়ে। পরে পলাশীর যুদ্ধে ঐতিহাসিক জয়লাভের পর ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা হলে, ক্লাইভ এই বাড়ি দখল করেন। উনি এই বাড়ি সংস্কারও করেছিলেন। বাড়ির মুল কাঠামো অক্ষুণ্ণ রেখে এই বাড়ি সংস্কার করা হয়। পুরনোকে অক্ষুণ্ণ রেখে নতুন করে সংস্কার ব্রিটিশদের ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধতাকে প্রদর্শিত করে। তৎকালীন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের ঐতিহ্য মেনেই এই বাড়ির দ্বিতল নির্মাণ করা হয়। এই তথ্য লুইস ও ম্যালি নামক এক ব্রিটিশ আমলা স্বীকার করে গেছেন। তাঁর মতে এই বাংলো বাড়ি হল প্রাচীন বাংলার স্থাপত্যের এক নিদর্শন। আবার ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ রবার্ট ওরামের হিস্ট্রি অফ দ্যা ওয়ার ইন বেঙ্গল বইয়ে এই বাড়ি সম্পর্কিত বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু এই বাড়ির আসল মালিকানা কার ছিল বা কি কাজে এই বাড়ি ব্যাবহৃত হত, সে বিষয়ে কোনও পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যায় নি। তবে কারো কারো মতে এই বাড়ি না কি একসময় নবাব আলিবর্দি খাঁর ছিল। তবে এই বাড়ি মালিকানা নিয়ে বেশ একটা বিতর্কের আঁচ পাওয়া যায়। আবার এই বাড়ির কার্যকারিতা নিয়েও কিন্তু বিতর্ক কম নেই। অনেকে বলেন এই বাড়ি না কি ব্রিটিশদেরও আগে ডাচ বা ওলন্দাজদের তৈরি এবং এটা এক সময় তুলোর গোডাউন হিসাবে ব্যাবহৃত হত আবার কারো কারো মতে এটা আসলে না কি ওলন্দাজদের দুর্গ ছিল। অনেক ঐতিহাসিকদের মতে ক্লাইভের পরে ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ এই বাড়িতেই এসে বাস করে গেছেন বিশপ হেবার নামে এক ব্রিটিশ পাদ্রী। ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত ক্যালকাটা গেজেটের তথ্যানুযায়ী এই বাড়ির অন্দরে অজানা গুপ্ত কক্ষও থাকতে পারে। এক সময় এই বাড়ি দমদম ঢিবি, দমদমা কোঠি, ক্লাইভ হাউস, সাহেব বাগান ইত্যাদি নামে পরিচিত ছিল।

এই দমদমাহ আসলে একটা আরবি শব্দ যার অর্থ চাঁদমারির উঁচু মাটির স্তূপ। পরে শব্দের অপ্রভংশে নাম হয় দমদমা যার অর্থ গোলাবারুদের স্তূপ। আবার, ব্রিটিশরা এই উচু ঢিবির ওপর নিশানা অভ্যাস করত। ইতিহাসবিদদের মতে সেই থেকেই এই যায়গার নাম হয়েছে দমদম। আবার দমদমা থেকেই শব্দের অপ্রভংশের ফলেও দমদম শব্দের উৎপত্তি হতে পারে। প্রায় ১১ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এই উঁচু ঢিবি কলকাতার উত্তর দিকের সীমানা নির্দেশের জন্যও সে সময় ব্যাবহৃত বলে শোনা যায়। এই বাড়ির উত্তর দিকে থাকা সিংহ দরজার ওপর আজও অস্পষ্ট হরফে Countey House of Loard Clive from 1757 to 60 & 65 to 1767 লেখা দেখতে পাওয়া যায়। আবার, তৎকালীন প্রেসিডেন্সি বিহারের মুঙ্গের জেলায় ছোট এক পাহাড়ের ওপর ব্রিটিশ আমলের দমদমা হাউস নামে সেনাদের জন্য নির্মিত এক বাড়ির কথাও শোনা যায়। একসময় এই বাড়ি গোরা পল্টনের সদর দপ্তর ও যুদ্ধের কর্ম ক্ষেত্র হিসাবেও ব্যাবহার হত। এই বাড়িই এক সময়ে ছিল সমগ্র ভারতকে পরাধীন বা ব্রিটিশ শাসনাধীন করার ব্লু-প্রিন্ট তৈরির এই আদর্শ জায়গা। ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দের পর এই বাড়ি ভাড়া হিসাবে নিয়েছিলেন স্যার ওয়ারেন জেনকিন্স নামক এই ব্রিটিশ ব্যাবসায়ি। এই জেনকিন্স সাহেব মার্চেন্ট প্রিন্স মেমরিজ অফ ইন্ডিয়া নামক তাঁর স্মৃতিচারণাতে লিখেছেন যে এই বাড়িতে না কি স্থানীয় বাজার থেকে আসা দুর্গন্ধের জন্য বেশি দিন উনি টিকতে পারেন নি। আবার ওই একই বছরে অর্থাৎ ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত R.C.Sterndale নামক এক ব্রিটিশ লেখকের রচনাতেও এই বাড়ির উল্লেখ পাওয়া যায়।

এই বাড়ির উঁচু ঢিবির ওপর প্রায় দু’দশক আগেও ফুটবল, ক্রিকেট ইত্যাদি খেলা হত। এখনও এই বাড়ির গায়ে ক্লাইভের নাম যুক্ত ফলক পাওয়া যায়। এই বাড়িতে খুব স্বল্প সময়ের জন্য বিমান মেরামতির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠলেও দেশভাগের পরে এই বাড়ি কিছু উদ্বাস্তুদের দখলে চলে যায়। গড়ে ওঠে এক উদ্বাস্তু কলোনি। স্বাধীনতার পরে ২০০১ সালে এই বাড়ি ভারত সরকারের পুরাতত্ব বিভাগ অধিগ্রহণ করে এবং এর পাশাপাশি ন্যাশানাল হেরিটেজ তকমা দেয়। তবে ২০০১ সালে এই বাড়ি সংলগ্ন উঁচু ঢিবি থেকে খনন কার্যের ফলে বেশ কিছু মাটির ভাঙা পাত্র, খ্রিস্ট পূর্ব দ্বিতীয় থেকে অষ্টম-নবম শতাব্দীর বেশ কিছু মৃৎপাত্র, মুদ্রা সহ আরো কিছু প্রত্নতাত্তিক উপাদান উদ্ধার করা গেছে। যার থেকে দমদম তো বটেই এমনকি কলকাতা শহরেরও ইতিহাসের শেকড় যে আরো গভিরে সে ব্যাপারে নিসন্ধেহ হওয়া গেছে। তবে সম্ভাবনা অনুযায়ী এখানে কোনও গুপ্ত ঘর না পেলেও পুরাতত্ব বিভাগ এই তথ্য পুরোপুরি অস্বীকারও করে নি। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া এই ঢিবির নীচ থেকে নারী-পুরুষের কঙ্কালও উদ্ধার করেছে। ভারতের পুরাতত্ত্ব বিভাগ রক্ষণাবেক্ষণ করলেও বেশি দিন এই পদ্ধতি স্থায়ী হয় নি। ২০০৬ সালে কোনও এক অজানা কারনে এই রক্ষণাবেক্ষণ বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭০ সালের পর এই বাড়ি পরিত্যক্ত হয়ে যায় এবং এই বাড়ি সম্পর্কে রটে ভুতের গুজব।

এই বাড়িতে বসবাস করা বেশ কিছু উদ্বাস্তুকে আজও পুনর্বাসন দেওয়া যায় নি। আগেই এই বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বাড়িটির স্থাপত্য বৈচিত্র নস্ট হচ্ছে ধিরে ধিরে। আবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারনেও এই বাড়ির বেশ কিছু অংশ ভেঙ্গে গেছে। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার রিপর্টানুযায়ি এর ফলে বাড়িটির মুল ভীত ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে। কিন্তু আজও এই বাড়ি ব্রিটিশ আমলের বহু আজানা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে উত্তর ২৪ পরগনার দমদমের কাছে বিরাজমান।

তথ্যসূত্রঃ
আনন্দবাজার পত্রিকা, এবেলা, Palokmedia, Golpokutir

সূত্র: সংগৃহিত।
তারিখঃ মার্চ ০৯, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

,

ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪,শনিবার

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ