আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৭ তম জন্মজয়ন্তী, আমাদের প্রতি সেকেন্ডের কবিকে কোটি শ্রদ্ধা, তিনি শুধু বাংলার কবি নন, তিনি বিশ্ব কবি, বিশ্বের কবি তাঁর লেখার যে বিস্তৃত রচনা-সম্ভার, পরিধী তা ব্যক্তিগত ভাবে সঠিক ।র্থ সহকারে আমার পক্ষ্যে আমার কাটানো জীবন আর বাকি জীবন মিলে পড়ে শেষ করা যাবে না, তিনি যেন সময়ের পরিক্রমায়, স্রোতে দিনে দিনে আরও অনেক অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
প্রথম আলো ব্লগের সূত্র ধরে যে সকল সন্মানিত লেখক, কবি ও পাঠক আমাকে চিনেন বা জানেন তাঁরা হয় তো জেনে থাকবেন যে আমার যতটুকু লেখাপড়া তার একটি বড় অংশ জুড়ে আছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ও ইরাণের মহা কবি ওমর খৈয়াম যাঁদের কিছু কিছু বাণী আমার লেখার মধ্যে তুলে ধরি।
এটা আমার সকল সময়ের কথা যে, এই দুই মানবের লেখার ও ভাবনার পথ ধরে আমি কিছু সন্মানিত পাঠক তৈরী করতে পেরেছি।
নিচের বিখ্যাত রবীন্দ্র সংগীতটি আমার কাছে মনে হয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি জীবন দর্শনের একটি অংশ ( রবীন্দ্র সংগীতটি সাথে আমার জুড়ে দেওয়া কিছু কথা সহ এটি একটি রি-পোষ্ট )
আজ বিশ্ব কবির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় প্রকাশে লেখাটি শেয়ার করা হলো।
” যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে
আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে,
চুকিয়ে দেব বেচা কেনা,
মিটিয়ে দেব গো, মিটিয়ে দেব লেনা দেনা,
বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে–
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে। ”
রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরে যে একদিন তাঁর পায়ের চিহ্ন তার প্রতি দিনের চলার বাটে বা পথে পড়বে না তা তিনি জানতেন, তাঁর খেয়া তরী নিয়ে তিনি ঘাটে ঘাটে বাইবেন না, কোন লেনদেন করবেন না, হাটে যাবেন না। তাঁর জন্য তাঁর কোন আক্ষেপ নেই যদি শত বছর বা হাজার বছর পরে তাঁকে কেউ মনে না রাখে, আকাশের পানে, তারার পানে চেয়ে চেয়ে কেউ যদি রবীন্দ্রনাথকে না ডাকে।
কি অসাধারণ ভাবে আমরা সকলে তাঁকে মনে রেখেছি তাঁর কথা ভেবে ভেবে আকাশের পানে, তারার পানে চেয়ে চেয়ে থেকেছি, আজ কবিগুরুর জন্মদিনে আমরা কত ভাবেই না তাঁর জন্মদিন পালনের আয়োজন করে চলেছি।
” যখন জমবে ধুলা তানপুরাটার তারগুলায়,
কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়, আহা,
ফুলের বাগান ঘন ঘাসের পরবে সজ্জা বনবাসের,
শ্যাওলা এসে ঘিরবে দিঘির ধারগুলায়–
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।”
তিনি ঠিকই বুঝেছিলন আর সত্যই তো তাঁর তানপুরাটার তারগুলায় ধুলা জমেছে, যেমন কিছু দিন আমাদের প্রিয় ঘরে না গেলে আসবাব পত্রে ধুলা জমে। ঠিকই তিনি বুঝেছিলেন আর সত্যই তাঁর ঘরের দ্বারগুলায় কাঁটালতা উঠেছে, তাঁর ফুলের বাগানে ঘন ঘাসে ভরে উঠেছে যেমন আমরা যদি আমাদের প্রিয় বাগানে যাওয়া বন্দ রাখি। তিনি ঠিকই বুঝেছিলেন বলে তাঁর অবর্তমানে তাঁর প্রিয় দিঘির ধারগুলায়– শ্যাওলা জমেছে।
তাঁর কোন আক্ষেপ নেই যদি শত বছর বা হাজার বছর পরে তাঁকে কেউ মনে না রাখে, আকাশের পানে, তারার পানে চেয়ে চেয়ে তাঁর কথা কেউ মনে না করে- তাঁর অভিমানের সুরে বলা এই কথা আমরা সত্য হতে দেই নি। আমাদের প্রাণে প্রতি মূর্হুতে আমাদের রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গান।
” তখন এমনি করেই বাজবে বাঁশি এই নাটে,
কাটবে দিন কাটবে,
কাটবে গো দিন আজও যেমন দিন কাটে, আহা,
ঘাটে ঘাটে খেয়ার তরী এমনি সে দিন উঠবে ভরি–
চরবে গোরু খেলবে রাখাল ওই মাঠে।
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে। ”
রবীন্দ্রনাথ একদিন থাকবেন না, তাই বলে কি সব কিছু থেমে যাবে !! তিনি জানতেন এই বিশাল জগৎ থেকে একদিন তিনি বিদায় নিলে এই ধরার কিছুতেই কোন পরিবর্তন হবে না সবই চলবে আপন গতিতে। বাঁশি বাজবে একই নাটে, প্রতি দিনের মত দিন কাটবে ঘাটে ঘাটে খেয়ার তরী চলবে, গরু চরবে, রাখাল খেলবে চির চেনা মাঠে মাঠে। তবুও কবি গুরুর অভিমান করে বলা আমরা যদি তাঁকে মনে না রাখি। আমরা তাঁর অভিমান সত্য হতে দেই নি, প্রতি সেকেন্ডে, প্রতি মিনিটে, প্রতি দিনে, প্রতি ক্ষণে আমাদের সাথে রবীন্দ্রনাথ রয়েছেন এক হয়ে।
” তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি।
সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি– আহা,
নতুন নামে ডাকবে মোরে, বাঁধবে নতুন বাহু-ডোরে,
আসব যাব চিরদিনের সেই আমি।
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে॥”
কী বিশাল জ্ঞান ভান্ডার মাথায় ধারণ করলে একজন মানুষ দৃঢ় প্রত্যয়ী হতে পারেন তার প্রামান মেলে রবীন্দ্রনাথের এই গানের কথায়। তিনি চ্যালেন্জ ছুড়ে বলে দিয়েছেন – কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি। আসব যাব চিরদিনের সেই আমি।
তারিখ : মে ০৮, ২০১৮ ( রি পোষ্ট )
প্রথম লেখার তারিখ : মে ০৮, ২০১৩
রেটিং করুনঃ ,